সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৯

আপনি কি মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত?

আপনি কি মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত?

“সর্বদা প্রস্তুত থেকো।”—মথি ২৪:৪৪.

গান ১৫০ পরিত্রাণ পেতে ঈশ্বরের খোঁজ করেই চলো

সারাংশ a

১. কোনো বিপর্যয়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া কেন বিজ্ঞতার কাজ?

 প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে জীবন রক্ষা পেতে পারে। যেমন, কোনো বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যারা আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়, তাদের রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে আর তারা অন্যদেরও সাহায্য করতে পারে। দরিদ্রের সাহায্য করে এমন এক ইউরোপীয় সংগঠন বলে: “আপনার জীবন রক্ষা পাবে কি পাবে না, সেটা অনেকটা এই বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে, আপনি আগে থেকে কত ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন।”

২. কেন আমাদের মহাক্লেশের জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকা উচিত? (মথি ২৪:৪৪)

“মহাক্লেশ” হঠাৎ শুরু হয়ে যাবে। (মথি ২৪:২১) কিন্তু এটা যখন আসবে, তখন সবাই অবাক হবে না, যেমনটা অন্যান্য বিপর্যয়ের সময়ে অবাক হয়ে যায়। কেন? কারণ এই বিষয়ে যিশু অনেক আগে থেকেই বলে দিয়েছিলেন। প্রায় ২,০০০ বছর আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, তারা যেন এই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকে। (পড়ুন, মথি ২৪:৪৪.) আমরা যদি আগে থেকে প্রস্তুত থাকি, তা হলে সেই কঠিন সময়ের সঙ্গে মোকাবিলা করা আমাদের জন্য একটু সহজ হয়ে যাবে আর আমরা অন্যদেরও সাহায্য করতে পারব।—লূক ২১:৩৬.

৩. ধৈর্য ধরলে এবং আমাদের হৃদয়ে সমবেদনা ও ভালোবাসা থাকলে কীভাবে আমরা মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারব?

আসুন এমন তিনটে গুণের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো গড়ে তুললে আমরা মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারব। পরবর্তী সময়ে, আমাদের যদি বিচারের কড়া বার্তা ঘোষণা করতে বলা হয় এবং লোকেরা আমাদের বিরোধিতা করে, তা হলে আমরা কী করব? (প্রকা. ১৬:২১) আমাদের মধ্যে যদি ধৈর্য থাকে, তা হলে আমরা যিহোবার আজ্ঞা পালন করব আর আস্থা রাখব যে, তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। আরেকটা বিষয়, আমাদের ভাই-বোনদের যদি কম টাকাপয়সায় জীবনযাপন করতে হয় কিংবা তাদের কাছে কিছুই না থাকে, তা হলে আমরা কী করব? (হবক্‌. ৩:১৭, ১৮) আমাদের হৃদয়ে যদি তাদের প্রতি সমবেদনা থাকে, তা হলে তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করব। আর যখন জাতির জোট আমাদের উপর আক্রমণ করবে আর সেই সময়ে আমাদের যদি কিছুসময়ের জন্য অনেক ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতে হয়, তা হলে আমরা কী করব? (যিহি. ৩৮:১০-১২) আমাদের হৃদয়ে যদি ভাই-বোনদের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকে, তা হলে আমরা একসঙ্গে সেই কঠিন সময়টা পার করতে পারব।

৪. কীভাবে বাইবেল আমাদের উৎসাহিত করে, আমরা যেন ধৈর্য ধরি এবং আমাদের হৃদয়ে অন্যদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলি?

ঈশ্বরের বাক্য আমাদের উৎসাহিত করে, আমরা যেন ধৈর্য ধরি এবং আমাদের হৃদয়ে অন্যদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলি। যেমন, লূক ২১:১৯ পদে লেখা আছে: “তোমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার দ্বারা তোমাদের জীবন রক্ষা করবে।” কলসীয় ৩:১২ পদে লেখা আছে: ‘সমবেদনাকে কাপড়ের মতো পরিধান করো।’ আর ১ থিষলনীকীয় ৪:৯, ১০ পদে লেখা আছে: “একে অন্যকে প্রেম করার বিষয়ে তোমরা তো ঈশ্বরের কাছ থেকেই শিক্ষা পেয়েছ। . . . কিন্তু, হে ভাইয়েরা, আমরা তোমাদের উৎসাহিত করছি, যেন তোমরা আরও বেশি করে প্রেম দেখাও।” এই পদে লেখা কথাগুলো সেই খ্রিস্টানদের উদ্দেশে বলা হয়েছিল, যারা ইতিমধ্যেই ধৈর্য ধরছিল এবং যাদের হৃদয়ে অন্যদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা ছিল। কিন্তু, তাদের এই গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বৃদ্ধি করে চলতে হত। আমাদেরও এমনটা করতে হবে। আসুন লক্ষ করি, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা এই তিনটে গুণ কীভাবে দেখিয়েছিল। এরপর আমরা জানতে পারব, কীভাবে আমরা তাদের মতো হতে পারি। এভাবে আমরা মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত হতে পারব।

ধৈর্য ধরার সংকল্পকে দৃঢ় করুন

৫. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে ধৈর্য ধরেছিল?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের ধৈর্য ধরার প্রয়োজন ছিল। (ইব্রীয় ১০:৩৬) তাদের সেই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যেগুলো সাধারণ লোকদেরও মুখোমুখি হতে হত। কিন্তু, তাদের উপর আরও কিছু সমস্যা এসেছিল। অনেক খ্রিস্টান রোমীয় আধিকারিকদের এবং যিহুদি ধর্ম গুরুদের কাছ থেকে অত্যাচার সহ্য করছিল আর তাদের পরিবারের সদস্যেরাও তাদের কাছে শত্রু হয়ে উঠেছিল। (মথি ১০:২১) এ ছাড়া, মণ্ডলীতে অনেকসময় তাদের এমন লোকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যারা খ্রিস্টীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে শিক্ষা দিচ্ছিল, যেটার কারণে মণ্ডলীর একতা নষ্ট হয়ে যেতে পারত। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) তারপরও, সেই খ্রিস্টানেরা ধৈর্য ধরেছিল। (প্রকা. ২:৩) কীভাবে তারা ধৈর্য ধরতে পেরেছিল? তারা শাস্ত্রে দেওয়া সেই লোকদের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিয়েছিল, যারা ধৈর্য ধরেছিল, যেমন ইয়োব। (যাকোব ৫:১০, ১১) তারা যিহোবার কাছে সাহসের জন্য প্রার্থনা করেছিল। (প্রেরিত ৪:২৯-৩১) আর তারা এই বিষয়ের উপরও মনোযোগ দিয়েছিল যে, তারা যদি ধৈর্য ধরে, তা হলে যিহোবা তাদের অবশ্যই পুরস্কার দেবেন।—প্রেরিত ৫:৪১.

৬. বোন মেরিটা বিরোধিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যা-কিছু করেছিলেন, সেখান থেকে আপনি কী শিখেছেন?

আজ আমরা যদি বাইবেলে এবং আমাদের প্রকাশনায় দেওয়া উদাহরণগুলো ক্রমাগত পড়ি আর সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমরাও ধৈর্য ধরতে পারব। আলবানিয়ায় থাকা বোন মেরিটা এমনটা করার ফলে ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন। বোনের পরিবারের সদস্যেরা তার বিরোধিতা করত এবং তাকে প্রচণ্ড মারধর করত। বোন বলেন: “আমি বাইবেল থেকে ইয়োবের বিবরণ পড়ি আর সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। তার বিবরণ আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। তাকে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছিল! আর তিনি এটাও জানতেন না, তার সমস্যাগুলোর পিছনে কে রয়েছে। তারপরও তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমার বিশ্বস্ততা পরিত্যাগ করব না!’ (ইয়োব ২৭:৫, NW) ইয়োব যা-কিছু সহ্য করেছিলেন, সেগুলোর তুলনায় আমার সমস্যা কিছুই নয়। আমি অন্ততপক্ষে এটা তো জানি, আমার সমস্যাগুলোর পিছনে কে রয়েছে।”

৭. যদিও আজ আপনি কোনো বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন না, তারপরও আপনি কী করতে পারেন?

ধৈর্য ধরার জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা অবিরত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং আমাদের সমস্ত উদ্‌বিগ্নতার বিষয়ে তাঁর কাছে খুলে বলি। (ফিলি. ৪:৬; ১ থিষল. ৫:১৭) হতে পারে, আপনি আপাতত কোনো বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন না। কিন্তু, আপনি যখন উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েন কিংবা বুঝতে পারেন না, কী করতে হবে, তখনও কি আপনি যিহোবাকে বলেন, তিনি যেন আপনাকে পথ দেখান? আজ আপনি যদি প্রতিদিন ছোটো ছোটো বিষয়ের জন্য যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চান, তা হলে পরবর্তী সময়ে আপনি যখন কোনো বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হবেন, তখন আপনি যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে ইতস্তত বোধ করবেন না। আপনি এই বিষয়েও নিশ্চিত হবেন যে, তিনি জানেন, ঠিক কখন এবং কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে হবে।—গীত. ২৭:১, ৩.

ধৈর্য

আমরা যখন কোনো সমস্যার মধ্যে ধৈর্য ধরি, তখন আমরা পরবর্তী সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হতে পারি (৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৮. বোন মিরার উদাহরণ থেকে কীভাবে বোঝা যায় যে, আজ সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধরলে আমরা পরবর্তী সময়েও ধৈর্য ধরতে পারব? (যাকোব ১:২-৪) (ছবিও দেখুন।)

আজ আমরা যদি সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধরি, তা হলে ভবিষ্যতে মহাক্লেশের সময়েও আমরা ধৈর্য ধরতে পারব। (রোমীয় ৫:৩) কেন আমরা তা বলতে পারি? অনেক ভাই-বোন দেখেছে, কোনো সমস্যার সময়ে তারা যখন ধৈর্য ধরেছিল এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, তখন এটা পরবর্তী সময়ে আসা সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে তাদের সাহায্য করেছিল। এভাবে ধৈর্য ধরার ফলে তাদের এই বিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছিল যে, যিহোবা তাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। আর এই বিশ্বাস পরবর্তী সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং ধৈর্য ধরতে তাদের সাহায্য করেছিল। (পড়ুন, যাকোব ১:২-৪.) আলবানিয়ায় থাকা মিরা নামে একজন অগ্রগামী বোনের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনিও দেখেছিলেন, অতীতে সমস্যাগুলোর সময়ে তিনি যেভাবে ধৈর্য ধরতে পেরেছিলেন, এই কারণে তিনি আজও ধৈর্য ধরতে পারছেন। কখনো কখনো বোন মিরার মনে হয়, তার জীবনে প্রচুর সমস্যা আছে। কিন্তু, তারপরও তিনি চিন্তা করেন, বিগত ২০ বছর ধরে যিহোবা কত বার তার যত্ন নিয়েছেন। আর বোন নিজেকে বলেন, ‘যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকো। এত বছর যিহোবা তোমাকে সমর্থন করেছেন। চিন্তা করো, এখন পর্যন্ত তুমি কত সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছ। তুমি যে এত পরিশ্রম করেছ, সেই সমস্ত কিছু কি মাটিতে মিশিয়ে দেবে? এখন হাল ছেড়ে দিয়ো না।’ আপনিও চিন্তা করতে পারেন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে এখনও পর্যন্ত সমস্যার সময়ে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছেন। বিশ্বাস করুন, কোনো সমস্যার সময়ে আপনি যখন ধৈর্য ধরেন, তখন যিহোবা তা লক্ষ করেন আর তিনি এরজন্য আপনাকে পুরস্কার দেবেন। (মথি ৫:১০-১২) এভাবে আপনি যখন আজ ধৈর্য ধরতে শিখবেন, তখন আপনি মহাক্লেশের সময়ে সমস্যাগুলোর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবেন।

সমবেদনা দেখান এবং ভাই-বোনদের সাহায্য করে চলুন

৯. সিরিয়ার আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কীভাবে দেখিয়েছিল, তাদের হৃদয়ে সমবেদনা রয়েছে?

লক্ষ করুন, যখন যিহূদিয়ায় একবার এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তখন কী ঘটেছিল। সিরিয়ার আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা যখন এই বিষয়ে শুনেছিল, তখন নিশ্চয়ই যিহূদিয়ার ভাই-বোনদের জন্য তাদের খুব খারাপ লেগেছিল এবং তারা সেই ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা বোধ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, তাদের সাহায্য করার জন্য তারা পদক্ষেপও নিয়েছিল। বাইবেলে লেখা রয়েছে: “[আন্তিয়খিয়ার] শিষ্যেরা স্থির করলেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ সংগতি অনুযায়ী যিহূদিয়ায় বসবাসরত ভাইদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠাবেন।” (প্রেরিত ১১:২৭-৩০) যদিও তারা যিহূদিয়ার ভাইদের থেকে অনেক দূরে ছিল, তারপরও তাদের সাহায্য করার জন্য তারা পিছিয়ে পড়েনি।—১ যোহন ৩:১৭, ১৮.

সমবেদনা

আমাদের হৃদয়ে যদি ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা থাকে, তা হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে আমরা তাদের সাহায্য করব (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. যখন কোনো বিপর্যয় আসে, তখন আমরা কোন কোন উপায়ে দেখাতে পারি যে, আমাদের হৃদয়ে ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা রয়েছে? (ছবিও দেখুন।)

১০ আজ যখন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে, তখন কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমাদের হৃদয়ে ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা আছে? তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারি। কোনো কাজে সাহায্য করার জন্য আমরা প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে পারি, বিশ্বব্যাপী কাজের জন্য দান দিতে পারি কিংবা সেখানকার ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। b (হিতো. ১৭:১৭) উদাহরণ স্বরূপ, ২০২০ সালে যখন কোভিড-১৯ অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ভাই-বোনদের যত্ন নেওয়ার জন্য পৃথিবীব্যাপী ৯৫০-টারও বেশি দুর্যোগ ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যে-ভাই-বোনেরা ত্রাণ কাজে সাহায্য করে, তারা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাদের হৃদয়ে ভাই-বোনদের প্রতি প্রচুর সমবেদনা রয়েছে, তাই তারা তাদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয় এবং যিহোবার সেবা করে চলার জন্য তাদের সাহায্য করে। আর অনেক এলাকায় ভাই-বোনদের ঘর কিংবা উপাসনার জায়গা মেরামতও করে অথবা সেগুলো আবারও নির্মাণ করে।—তুলনা করুন, ২ করিন্থীয় ৮:১-৪.

১১. সমবেদনার কারণে আমরা যখন ভাই-বোনদের সাহায্য করি, তখন সেটা কীভাবে যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে?

১১ কোনো বিপর্যয় আসার পর আমরা যখন সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য কিছু করি, তখন লোকেরা সেটা লক্ষ করে। উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৯ সালে ডোরিয়ান নামে যখন একটা ঝড় এসেছিল, তখন বাহামাতে আমাদের একটা কিংডম হল একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের ভাই-বোনেরা যখন আবারও সেই কিংডম হলটা নির্মাণ করছিল, তখন তারা একজন ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেছিল, কিছু কাজ করার জন্য তিনি কত টাকা নেবেন। সেই ঠিকাদার বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের এই কাজ বিনা মূল্যে করে দেব। আর সেইসঙ্গে আমি জিনিসপত্র দেব, যন্ত্রপাতি দেব এবং মজুরদের জন্য আপনাদের কাছ থেকে এক টাকাও নেব না। আমি শুধু আপনাদের সংগঠনের জন্য এই কাজ করতে চাই। আপনারা আপনাদের বন্ধুদের যেভাবে সাহায্য করছেন, সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে।’ আজ জগতের বেশিরভাগ লোক যিহোবাকে জানে না। কিন্তু, তাদের মধ্যে অনেকে যিহোবার সাক্ষিদের আচরণ লক্ষ করে। চিন্তা করুন, এটা কত বড়ো বিষয়, আমরা সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যে-কাজ করি, সেটা দেখে লোকদের মনে সত্য ঈশ্বরকে জানার ইচ্ছা জাগতে পারে, যাঁর “করুণা অসীম।”—ইফি. ২:৪.

১২. আজ আমাদের হৃদয়ে যদি ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা থাকে, তা হলে মহাক্লেশের জন্য কীভাবে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারব? (প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৬, ১৭)

১২ মহাক্লেশ চলাকালীনও আমাদের কাজের মাধ্যমে এটা দেখাতে হবে যে, আমাদের হৃদয়ে ভাই-বোনদের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। কেন? বাইবেল থেকে জানা যায়, যারা জগতের সরকারগুলোকে সমর্থন করে না, তাদের আজও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এবং মহাক্লেশ চলাকালীনও মুখোমুখি হতে হবে। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৩:১৬, ১৭.) সেই সময়ে হয়তো কিছু ভাই-বোনের কাছে খাবার কিংবা থাকার জন্য ঘর থাকবে না। এইরকম সময়ে আমরা যদি সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভাই-বোনদের সাহায্য করি, তা হলে আমাদের রাজা যিশু খ্রিস্ট যখন বিচার করবেন, তখন তিনি আমাদের বলবেন, ‘এসো, রাজ্যের আশীর্বাদ লাভ করো।’—মথি ২৫:৩৪-৪০.

ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে চলুন

১৩. রোমীয় ১৫:৭ পদ অনুযায়ী প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে তাদের মধ্যে প্রেমের বন্ধনকে দৃঢ় করেছিল?

১৩ প্রথম শতাব্দীতে প্রত্যেকে এটা স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিল যে, খ্রিস্টানদের মধ্যে কতটা ভালোবাসা রয়েছে। কিন্তু কী মনে হয়, ভাই-বোনদের জন্য একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখানো কি খুব সহজ ছিল? রোমের মণ্ডলীর ভাই-বোনদের কথা একটু চিন্তা করুন। সেখানে কিছু ভাই-বোন যিহুদি ছিল এবং তাদের ছোটোবেলা থেকে মোশির ব্যবস্থা পালন করতে শেখানো হয়েছিল। কিন্তু, কিছু ভাই-বোন যিহুদি ছিল না আর তারা একেবারে আলাদা পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছিল। কিছু খ্রিস্টান দাস ছিল, আবার কিছু স্বাধীন। আর এমন কিছু জন ছিল, যাদের নিজেদেরও দাস ছিল। সেই ভাই-বোনেরা একে অন্যের থেকে অনেক আলাদা ছিল, তারপরও তারা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিল। কীভাবে তারা তা দেখিয়েছিল? প্রেরিত পৌল তাদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন ‘একে অন্যকে গ্রহণ করে।’ (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৭.) এর মানে কী? এই পদে যে-শব্দকে “গ্রহণ করো” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার মানে হল কারো সঙ্গে প্রেম সহকারে আচরণ করা কিংবা আতিথেয়তা দেখানো, যেমন কাউকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো অথবা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। উদাহরণ স্বরূপ, পৌল ফিলীমনকে বলেছিলেন যেন তিনি তার দাস ওনীষিমকে ‘গ্রহণ করে,’ যিনি তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (ফিলী. ১৭) প্রিষ্কিল্লা ও আক্বিলা আপল্লোকে গ্রহণ করেছিলেন। আপল্লো খ্রিস্টীয় শিক্ষার বিষয়ে তাদের চেয়ে কম জানতেন। তারপরও, প্রিষ্কিল্লা ও আক্বিলা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিলেন এবং ‘তাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।’ (প্রেরিত ১৮:২৬) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা আলাদা আলাদা পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছিল এবং সমাজে তাদের আলাদা আলাদা পদ ছিল। কিন্তু, এই কারণে তারা একে অন্যের থেকে দূরে থাকেনি বরং একে অন্যকে গ্রহণ করেছিল।

ভালোবাসা

আমাদের সমস্ত ভাই-বোনের ভালোবাসা দরকার (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৪. বোন অ্যানা এবং তার স্বামী কীভাবে ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন?

১৪ আমরাও ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাতে পারি। তখন তারাও আমাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে। (২ করি. ৬:১১-১৩) বোন অ্যানা এবং তার স্বামীর উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তাদের পশ্চিম আফ্রিকায় মিশনারি হিসেবে সেবা করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পৌঁছানোর কিছুসময় পরই কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে তারা সেখানকার মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তারপরও, তারা ভাই-বোনদের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা কীভাবে দেখিয়েছিলেন? তারা ভিডিও কল করার মাধ্যমে ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন, তারা তাদের আরও ভালো করে জানতে চান। তাদের এই ভালোবাসা ভাই-বোনদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। এরপর, ভাই-বোনেরাও তাদের ফোন করতে এবং ম্যাসেজ পাঠাতে শুরু করে। এই দম্পতি ভাই-বোনদের জানার জন্য কেন এত পরিশ্রম করেছিলেন? বোন অ্যানা বলেন: “আমাকে এবং আমার পরিবারকে ভাই-বোনেরা ভালো সময়ে এবং খারাপ সময়ে যেভাবে ভালোবাসা দেখিয়েছিল, সেটা আমি আজ পর্যন্ত ভুলিনি। তাই, আমারও ইচ্ছা করে যেন আমিও ভাই-বোনদের প্রতি সেইরকম ভালোবাসা দেখাই।”

১৫. সমস্ত ভাই-বোনকে ভালোবাসার বিষয়ে আপনি বোন ভ্যানেসার কাছ থেকে কী শিখেছেন? (ছবিও দেখুন।)

১৫ অনেক মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনেরা রয়েছে, যারা আলাদা আলাদা পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে এবং যাদের স্বভাবও একে অন্যের চেয়ে আলাদা। আমরা যদি তাদের ভালো বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দিই, তা হলে তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে পারে। বোন ভ্যানেসার উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন, যিনি নিউজিল্যান্ডে সেবা করেন। তার নিজের মণ্ডলীর কিছু ভাই-বোনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কঠিন বলে মনে হত। কারণ সেই ভাই-বোনদের স্বভাব এমন ছিল, যেটা দেখে বোন একটুতেই বিরক্ত হয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি চিন্তা করেন, সেই ভাই-বোনদের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকার পরিবর্তে তিনি তাদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। এমনটা করার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে কোন কোন ভালো বিষয় রয়েছে, যেগুলো যিহোবা পছন্দ করেন। বোন বলেন: “এখন আমার স্বামী একজন সীমা অধ্যক্ষ আর এমন অনেক ভাই-বোনের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, যাদের স্বভাব আমাদের চেয়ে একেবারে আলাদা। আমি সহজেই তাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারি। আমার আলাদা আলাদা ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা করতে খুব ভালো লাগে। যিহোবাও আলাদা আলাদা ধরনের লোককে খুব ভালোবাসেন। সেইজন্যই তো তিনি সমস্ত ধরনের লোককে তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেছেন।” আমরা যখন যিহোবার মতো ভাই-বোনদের মধ্যে ভালো বিষয়গুলো দেখব, তখন আমরা দেখাব যে, আমরা তাদের ভালোবাসি।—২ করি. ৮:২৪.

যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে তাঁর উপাসনা করে চলি, তা হলে মহাক্লেশ চলাকালীন তিনি আমাদের রক্ষা করবেন (১৬ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৬. মহাক্লেশ চলাকালীন ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখানো কেন খুবই জরুরি হবে? (ছবিও দেখুন।)

১৬ মহাক্লেশ চলাকালীনও আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে। যখন মহাক্লেশ শুরু হবে, তখন কীভাবে যিহোবা আমাদের রক্ষা করবেন? লক্ষ করুন, প্রাচীন কালে যখন ব্যাবিলনের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, তখন যিহোবা তাঁর লোকদের কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “হে আমার জাতি, চল, তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ কর, তোমার দ্বার সকল রুদ্ধ কর; অল্পক্ষণ মাত্র লুক্কায়িত থাক, যে পর্য্যন্ত ক্রোধ অতীত না হয়।” (যিশা. ২৬:২০) মহাক্লেশ চলাকালীনও যিহোবার লোকদের এমনই কিছু করতে হতে পারে। ‘অন্তরাগারের’ মানে আমাদের মণ্ডলীগুলো হতে পারে। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, আমরা যদি ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে তাঁর উপাসনা করে চলি, তা হলে মহাক্লেশ চলাকালীন তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আজ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের শুধু সহ্যই না করি বরং তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাই, যদিও তা দেখানো কঠিন হতে পারে। এর ফলে, পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবন রক্ষা পেতে পারে!

এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন

১৭. আমরা যদি এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করি, তা হলে মহাক্লেশ চলাকালীন আমরা কী করতে পারব?

১৭ যখন “সদাপ্রভুর মহাদিন” আসবে, তখন সমস্ত মানুষের জন্য সেটা এক কঠিন সময় হবে। (সফ. ১:১৪, ১৫) যিহোবার লোকদেরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু, আমরা যদি এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করি, তা হলে আমরা সেইসময়ে শান্ত থাকতে পারব এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারব। আমাদের সামনে যা-ই সমস্যা আসুক না কেন, আমরা ধৈর্য ধরতে পারব। আমাদের ভাই-বোনেরা যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাবে, তখন আমাদের হৃদয়ে তাদের জন্য সমবেদনা থাকবে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব হবে, আমরা তা করব। আজ আমরা যদি ভাই-বোনদের ভালোবাসি, তা হলে সেইসময়েও আমরা তাদের একা ছেড়ে দেব না। এরপর, যিহোবা আমাদের নতুন জগতে অনন্তজীবন দেবেন, যেখানে সমস্ত সমস্যা এবং বিপর্যয় অতীতের বিষয় হয়ে যাবে।—যিশা. ৬৫:১৭.

গান ১৪৪ থাকলে স্থির পাবে পুরস্কার

a খুব শীঘ্রই মহাক্লেশ শুরু হবে। সেই সময়টা খুবই কঠিন হবে। সেইসময় এমন এমন ঘটনা ঘটবে, যেগুলো আগে কখনো ঘটেনি। আজ আমরা যদি ধৈর্য ধরি এবং ভাই-বোনদের ভালোবাসি আর আমাদের হৃদয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা থাকে, তা হলে সেই সময়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারব। লক্ষ করুন, প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে এই গুণগুলো দেখিয়েছিল, আমরা কীভাবে তাদের মতো হতে পারি আর এই গুণগুলো দেখানোর ফলে কীভাবে আমরা মহাক্লেশের জন্য প্রস্তুত হতে পারব।

b যে-ভাই-বোনেরা ত্রাণ কাজে সাহায্য করতে চায়, তাদের ‘স্থানীয় নকশা/নির্মাণ স্বেচ্ছাসেবকের জন্য আবেদনপত্র’ (DC-50) কিংবা ‘স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমের জন্য আবেদনপত্র’ (A-19) পূরণ করা উচিত আর যতক্ষণ না তাদের ডাকা হচ্ছে, ততক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত।