অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৭
আপনার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়?
“তোমরা উদ্বিগ্ন হোয়ো না। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করো।”—যোহন ১৪:১.
গান ৫৪ আমাদের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন
সারাংশ *
১. আমাদের মনে কোন চিন্তা আসতে পারে?
খুব শীঘ্র, মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস হবে, মাগোগ দেশীয় গোগ আক্রমণ করবে আর আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে আপনি কি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন? আপনার মনে কি এইরকম চিন্তা আসে, ‘কি জানি, সেইসময় আমি বিশ্বস্ত থাকতে পারব কি না?’ যদি আসে, তা হলে যিশুর বলা কথাগুলো থেকে আপনি অনেক উৎসাহ লাভ করতে পারবেন। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা উদ্বিগ্ন হোয়ো না। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করো।” (যোহন ১৪:১) এই প্রবন্ধে যিশুর বলা এই কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। আমাদের বিশ্বাস যদি দৃঢ় থাকে, তা হলে আমরা ভবিষ্যতে যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই না কেন, সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব।
২. (ক) ভবিষ্যতে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বর্তমানে আমাদের কী করতে হবে? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
২ ভবিষ্যতে বড়ো বড়ো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মনোযোগ দিতে হবে, বর্তমানে আমরা পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করছি। যদি মনে হয়, আমাদের বিশ্বাস যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তা হলে সেটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এই প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব, কোন চারটে ক্ষেত্রে যিশু তাঁর শিষ্যদের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। তারপর বিবেচনা করব, তাদের মতো বর্তমানে আমরা কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই এবং নিজেদের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য আমরা কী করতে পারি।
বিশ্বাস রাখুন, যিহোবা আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন
৩. মথি ৬:৩০, ৩৩ পদে যিশু কোন ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে বলেছিলেন?
৩ প্রত্যেক পরিবারের মস্তক চায় যেন তার পরিবারের কাছে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান থাকে। কিন্তু, বর্তমানে এগুলো জোগানো সহজ নয়। কিছু ভাই-বোনের চাকরি চলে গিয়েছে আর শত চেষ্টার পরও তারা অন্য চাকরি খুঁজে পায়নি। কিছু ভাই-বোন এমন চাকরি গ্রহণ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটা করা খ্রিস্টানদের জন্য সঠিক নয়। মথি ৬:৩০, ৩৩.) আমাদের যখন এই আস্থা থাকবে যে, যিহোবা আমাদের কখনো ছেড়ে দেবেন না, তখন আমরা রাজ্যের কাজের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারব। আর যখন দেখব, যিহোবা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাচ্ছেন, তখন তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর হবে এবং তাঁর উপর আমাদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে।
এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকা উচিত যে, যিহোবা আমাদের পরিবারের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জুগিয়ে দেবেন। যিশু তাঁর পর্বতের উপরে দেওয়া উপদেশে তাঁর শিষ্যদের কাছে এই কথা বলেছিলেন। (পড়ুন,৪-৫. আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় একটা পরিবার কী করে?
৪ আসুন, ভেনেজুয়েলায় বসবাসকারী ভাই মিগেল ক্যাস্ট্রোর * পরিবারের উদাহরণ লক্ষ করি। একসময়, তাদের নিজস্ব একটা জমি ছিল আর তারা সেই জমিতে চাষবাস করে সংসার চালাত। কিন্তু একদিন, একদল দুষ্কৃতী এসে তাদের সেই জমি দখল করে নেয় আর তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। ভাই মিগেল বলেন: “পরে, একজন ব্যক্তি চাষ করার জন্য আমাদের একটা ছোটো জমি দিয়ে সাহায্য করেন। সেই জমিতে চাষবাস করে আমরা সংসার চালাই। আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সেই দিনের খাবার জুগিয়ে দেন।” যদিও মিগেলের পরিবারের জন্য এভাবে জীবনযাপন করা সহজ নয়, কিন্তু তারা পুরোপুরি নিশ্চিত, যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নেবেন। তাই, তারা প্রতিটা সভায় যায় এবং প্রচার কাজে ক্রমাগত অংশ নেয়। তারা ঈশ্বরের রাজ্যের কাজগুলোকে জীবনে প্রথম স্থান দিয়েছে, তাই যিহোবা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর যত্ন নিচ্ছেন।
৫ এই কঠিন সময়ে ভাই মিগেল ও তার স্ত্রী ইউরাই লক্ষ করেন, কীভাবে যিহোবা তাদের যত্ন নিয়েছেন। কখনো কখনো যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান আর ভাইকে একটা চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করেন। শাখা অফিসও অনেক বার তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগায়। যিহোবা তাদের কখনো একা ছেড়ে দেননি। এই কারণে, পরিবারের সবার বিশ্বাস শক্তিশালী হয়। তাদের বড়ো মেয়ে হোসলিন একটা বিশেষ ঘটনা স্মরণ করে বলেন: “যখন দেখি, কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেছেন, তখন আমি অনেক উৎসাহিত হই। এখন তিনি আমার খুব ভালো বন্ধু, যাঁর উপর আমি আস্থা রাখতে পারি। পরীক্ষাগুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা তাঁর উপর আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে পেরেছি। এখন আমরা ভবিষ্যতে বড়ো বড়ো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।”
৬. আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় কীভাবে আপনি আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী করতে পারেন?
৬ আপনিও কি আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে আপনাকে হয়তো অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও, আপনি আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী করতে পারেন। কীভাবে? যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। মথি ৬:২৫-৩৪ পদে যিশুর বলা কথাগুলো পড়ুন এবং তা নিয়ে ধ্যান করুন। এমন অভিজ্ঞতাগুলো পড়ুন, যেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, যারা যিহোবার সেবায় ব্যস্ত থাকে, তিনি তাদের যত্ন নেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগান। (১ করি. ১৫:৫৮) এগুলো করার ফলে আপনার এই আস্থা দৃঢ় হবে যে, যিহোবা যেমন সেই ভাই-বোনদের যত্ন নিয়েছেন, তিনি আপনারও যত্ন নেবেন। যিহোবা জানেন, আপনার কী প্রয়োজন আর তিনি সেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অবশ্যই জুগিয়ে দেবেন। আপনি যখন দেখবেন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন, তখন তাঁর উপর আপনার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হবে। এভাবে, আপনি ভবিষ্যতে বড়ো বড়ো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন।—হবক্. ৩:১৭, ১৮.
‘প্রচণ্ড ঝড়ের’ সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বাস শক্তিশালী করুন
৭. যখন প্রচণ্ড ঝড় উঠেছিল, তখন কীভাবে শিষ্যদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল? (মথি ৮:২৩-২৬)
৭ মথি ৮:২৩-২৬ পদ পড়ুন। একবার, যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে একটা নৌকায় যাত্রা করছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড় ওঠে আর নৌকা ডুবতে শুরু করে। সেইসময় যিশু ঘুমাচ্ছিলেন। ভয় পেয়ে গিয়ে শিষ্যেরা যিশুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন আর বলেন, তিনি যেন তাদের রক্ষা করেন। কিন্তু, যিশু তাদের জিজ্ঞেস করেন: “হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমরা এত ভয় পাচ্ছ কেন?” শিষ্যদের এটা বোঝা উচিত ছিল যে, যিহোবা তাঁর পুত্রকে রক্ষা করতে পারেন আর সেই ব্যক্তিদেরও, যারা তাঁর সঙ্গে রয়েছে। এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা কোনো আক্ষরিক ঝড় কিংবা ঝড়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই না কেন, যদি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তা হলে আমরা সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব।
৮-৯. (ক) বোন আনেলের বিশ্বাস কীভাবে পরীক্ষিত হয়েছিল? (খ) নিজের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য তিনি কী করেছিলেন?
৮ এখন আসুন, পুয়ের্তো রিকোয় বসবাসকারী আনেল নামে একজন অবিবাহিত বোনের উদাহরণ লক্ষ করি। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়ার পর তার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়েছিল। ২০১৭ সালে মারিয়া নামে এক ঘূর্ণিঝড় তার এলাকায় আঘাত হেনেছিল। ফলে, তার ঘর পুরোপুরিভাবে ভেঙে গিয়েছিল আর সেইসঙ্গে তার চাকরিও চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন: “সেইসময় আমি খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতাম। কিন্তু তারপরও, আমি প্রার্থনা করতাম এবং ঈশ্বরের সেবায় ব্যস্ত থাকতাম। এভাবে, আমি তাঁর উপর নির্ভর করতে শিখি।”
৯ এ ছাড়া, বাধ্য থাকার ফলে আনেল নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন: “সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমি আমার মনকে শান্ত রাখতে পেরেছিলাম। আমি দেখেছিলাম, যিহোবা ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমাকে উৎসাহিত করছেন আর আমার কাছে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পৌঁছে দিচ্ছেন। যিহোবার কাছে আমি যা-কিছু চেয়েছিলাম, সেগুলোর চেয়ে তিনি আরও বেশি আমাকে দিয়েছিলেন। এইসমস্ত কিছুর জন্য আমার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়।”
১০. আপনি যদি কোনো বড়ো পরীক্ষার মুখোমুখি হন, তা হলে আপনি কী করতে পারেন?
১০ আপনি কি জীবনে কোনো ‘প্রচণ্ড ঝড়ের’ মুখোমুখি হয়েছেন? হতে পারে, আপনি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা কোনো গুরুতর রোগের কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। এইরকম সময়ে, যিহোবার উপর নির্ভর করুন। তাঁর কাছে হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করুন। সেই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যখন তিনি আপনাকে সাহায্য করেছিলেন। এভাবে, আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। (গীত. ৭৭:১১, ১২) আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, যিহোবা আপনাকে কখনো ছেড়ে দেবেন না—না বর্তমানে, না ভবিষ্যতে।
১১. কেন আমাদের সংগঠন এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত?
যাত্রা. ১৪:১-৪; ২ বংশা. ২০:১৭) আমাদের এই ধরনের উদাহরণগুলো নিয়ে ধ্যান করা উচিত। যদি তা করি, তা হলে আমরা সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত নির্দেশনা মেনে চলতে পারব, হোক তা বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আর এভাবে, আমরা মহাক্লেশের সময় ভয় পাব না, যেটা খুব শীঘ্রই আসতে যাচ্ছে।—হিতো. ৩:২৫.
১১ আনেলের কাছ থেকে যেমনটা শিখলাম, বাধ্য হওয়ার মাধ্যমেও আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব। আমাদের সেই ব্যক্তিদের উপর আস্থা রাখা উচিত, যাদের উপর যিহোবা ও যিশুর আস্থা রয়েছে। কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, সংগঠন এবং প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনাগুলো সঠিক নয়। কিন্তু, আমরা যদি সেই নির্দেশনাগুলো মেনে চলি, তা হলে যিহোবা খুশি হবেন আর আমাদের জীবন রক্ষা পাবে, যেমন বাইবেল এবং অন্য ভাই-বোনদের উদাহরণ থেকে আমরা জানতে পারি। (অবিচার সহ্য করার জন্য বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন
১২. কেন অবিচার সহ্য করার জন্য বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন? (লূক ১৮:১-৮)
১২ যিশু জানতেন, তাঁর শিষ্যেরা অবিচারের মুখোমুখি হবে। এভাবে তাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হবে। তাদের সাহায্য করার জন্য যিশু একজন বিধবার গল্প শোনান। সেই বিধবা ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য একজন অধার্মিক বিচারকের কাছে বার বার যেত। সে নিশ্চিত ছিল, এমনটা করলে সেই বিচারক তার অনুরোধ নিশ্চয়ই শুনবে। পরিশেষে, বিচারক তার অনুরোধ শোনে। এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিহোবা সেই দুষ্ট বিচারকের মতো নন। তাই, যিশু বলেন: “তা হলে ঈশ্বর কি তাঁর সেই মনোনীত লোকদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন না, যারা দিন-রাত তাঁর কাছে রোদন করে?” (পড়ুন, লূক ১৮:১-৮.) এরপর, যিশু আরও বলেন: “মনুষ্যপুত্র যখন আসবেন, তখন তিনি কি পৃথিবীতে এই বিশ্বাস দেখতে পাবেন?” কোনো অবিচারের মুখোমুখি হলে আমাদেরও সেই বিধবার মতো ধৈর্য ধরতে হবে আর বার বার যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। এটা থেকে বোঝা যাবে, আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে যে, আজ নয়তো কাল তিনি নিশ্চয়ই আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। আমাদের এই বিষয়েও নিশ্চিত থাকতে হবে, প্রার্থনার অনেক শক্তি রয়েছে। কখনো কখনো যিহোবা এমনভাবে প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন, যেভাবে আমরা হয়তো কখনো চিন্তাও করিনি।
১৩. যখন একটা পরিবারের প্রতি কিছু খারাপ বিষয় ঘটেছিল, তখন প্রার্থনা থেকে কীভাবে তারা সাহায্য লাভ করেছিল?
১৩ কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে বসবাসকারী ভেরোনিকা নামে একজন বোনের পরিবারের উদাহরণ লক্ষ করুন। তার গ্রামে কিছু সৈনিক আক্রমণ করে। ফলে তাকে, তার ন-সাক্ষি স্বামীকে ও তাদের ১৫ বছর বয়সি মেয়েকে সেখান থেকে পালাতে হয়। কিন্তু, রাস্তায় কিছু সৈনিক তাদের ধরে ফেলে আর হুমকি দেয় যে, তারা তাদের হত্যা করবে। ভয়ে ভেরোনিকা কাঁদতে শুরু করেন। সেইসময় তাকে শান্ত করার জন্য তার মেয়ে জোরে জোরে প্রার্থনা করতে শুরু করে আর বার বার যিহোবার নাম উচ্চারণ করে। তার প্রার্থনা শেষ হলে সৈনিকদের প্রধান সেনাপতি তাকে জিজ্ঞেস করেন: “মামনি, কে তোমাকে এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছে?” সে বলে: ‘মা মথি ৬:৯-১৩) সেই সেনাপতি তাকে বলেন: “মামনি, বাবা-মায়ের সঙ্গে নিশ্চিন্তে চলে যাও। তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে রক্ষা করুক।”
আমাকে বাইবেল থেকে শিখিয়েছে।’ (১৪. কখন আমাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হতে পারে আর সেইসময় আমাদের কী করা উচিত?
১৪ এই ধরনের উদাহরণ থেকে আমরা শিখি, প্রার্থনার অনেক শক্তি রয়েছে। কিন্তু, যিহোবা যদি আমাদের প্রার্থনার উত্তর সঙ্গেসঙ্গে না দেন কিংবা কোনো আশ্চর্যজনক উপায়ে না দেন, তা হলে কী করা উচিত? আমাদের যিশুর দেওয়া দৃষ্টান্তের সেই বিধবার মতো হওয়া উচিত আর অবিরত প্রার্থনা করা উচিত। আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত, যিহোবা আমাদের কখনো ছেড়ে দেবেন না। তিনি সঠিক সময়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন। আমাদের ক্রমাগত যিহোবার কাছে পবিত্র শক্তি চাওয়া উচিত। (ফিলি. ৪:১৩) আমাদের মনে রাখতে হবে, খুব শীঘ্রই তিনি আমাদের এত আশীর্বাদ দেবেন যে, আমরা সমস্ত দুঃখকষ্ট ভুলে যাব। যিহোবার সাহায্যে পরীক্ষাগুলো সহ্য করার সময় আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হয় আর আমরা ভবিষ্যতে বড়ো বড়ো পরীক্ষা সহ্য করার জন্য প্রস্তুত থাকি।—১ পিতর ১:৬, ৭.
পর্বতের মতো সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন
১৫. মথি ১৭:১৯, ২০ পদে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, যিশুর শিষ্যেরা কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
১৫ মথি ১৭:১৯, ২০ পদ পড়ুন। যিশুর শিষ্যেরা মন্দ স্বর্গদূত ছাড়াতে পারতেন। কিন্তু, একবার তারা এমনটা করতে পারেননি। কেন? কারণ তাদের বিশ্বাস অল্প ছিল। যিশু তাদের বলেছিলেন, তাদের মধ্যে যদি দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তা হলে তারা পর্বতের মতো সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আমরাও বড়ো বড়ো সমস্যার মুখোমুখি হতে পারি। সেইসময় আমাদের কী করা উচিত?
১৬. কীভাবে বোন গেডি নিজের শোক কাটিয়ে উঠেছিলেন?
১৬ গুয়াতেমালায় বসবাসরত গেডি নামে একজন বোনের উদাহরণ লক্ষ করুন। তিনি ও তার স্বামী এডি, সভার পরে ঘরে ফিরছিলেন। কিন্তু, রাস্তায় কিছু দুষ্কৃতী তার স্বামীকে খুন করে। এই ঘটনা বোনকে একেবারে দিশেহারা করে দেয়। কিন্তু, বিশ্বাসের কারণে তিনি এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেন। গেডি বলেন: “আমি প্রার্থনায় আমার সমস্ত বোঝা যিহোবার উপর ফেলে দিতাম। এর ফলে, আমি মনের শান্তি পেতাম। আর যিহোবা আমার পরিবারের সদস্য এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের মাধ্যমে আমার যত্ন নিতেন। যিহোবার সেবায় ব্যস্ত থাকায় আমার দুঃখ কিছুটা হলেও কমে যেত আর পরের দিনের জন্য আমি বেশি চিন্তা করতাম না। এই ঘটনা থেকে আমি একটা বিষয় শিখেছি, ভবিষ্যতে যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই না কেন, আমি যিহোবা, যিশু এবং সংগঠনের সাহায্যে সেটা সহ্য করতে পারব।”
১৭. আমরা যখন পর্বতের মতো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমাদের কী করা উচিত?
১৭ আপনি কি মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারিয়েছেন? যদি হারিয়ে থাকেন, তা হলে বাইবেল থেকে এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পড়ুন, যাদের আবারও জীবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর নিজেকে আশ্বস্ত করুন, আপনার প্রিয়জনের জীবনও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আপনার কোনো পরিবারের সদস্য কি সমাজচ্যুত হয়েছেন আর আপনি কি এই কারণে দুঃখের মধ্যে রয়েছেন? তা হলে অধ্যয়ন করে নিজেকে আশ্বস্ত করুন, হিতো. ১৮:১) নিজের কষ্টের কথা চিন্তা করে চোখে জল চলে এলেও ঈশ্বরের সেবায় ব্যস্ত থাকুন। (গীত. ১২৬:৫, ৬) নিয়মিত সভায় যান এবং প্রচারে অংশ নিন আর প্রতিদিন বাইবেল পড়ুন। সেই আশীর্বাদগুলো নিয়ে চিন্তা করুন, যেগুলো খুব শীঘ্র যিহোবা আপনাকে দিতে চলেছেন। আপনি যখন দেখবেন, কীভাবে যিহোবা আপনাকে সাহায্য করছেন, তখন তাঁর উপর আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী হবে।
যিহোবার শাসন করার উপায় হল সবচেয়ে উত্তম। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের বিশ্বাস শক্তিশালী করুন। যিহোবাকে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। ভাই-বোনদের নিকটে থাকুন, নিজেকে তাদের থেকে পৃথক করে রাখবেন না। (“আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করুন”
১৮. আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনার বিশ্বাস যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তা হলে আপনার কী করা উচিত?
১৮ কোনো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার পর আমরা যদি বুঝতে পারি, আমাদের বিশ্বাস যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তা হলে আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। যিশুর প্রেরিতদের মতো আমরাও যিহোবাকে বলতে পারি: “আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করুন।” (লূক ১৭:৫) এ ছাড়া, আমরা সেই উদাহরণগুলোর বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, যেগুলো এই প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। মিগেল ও তার স্ত্রী ইউরাইয়ের মতো আমাদের মনে রাখা উচিত, কোন কোন সময়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেছেন। ভেরোনিকার মেয়ে ও বোন আনেলের মতো যিহোবার কাছে হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করা উচিত, বিশেষভাবে যখন আমরা কোনো বড়ো সমস্যার মধ্যে থাকি। গেডির মতো নিশ্চিত হওয়া উচিত, যিহোবা আমাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের মাধ্যমে যত্ন নেবেন। আমরা যখন যিহোবার সাহায্যে বর্তমানে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করব, তখন আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে যে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।
১৯. যিশুর কোন বিষয়ে আস্থা ছিল আর আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
১৯ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, কোন চারটে ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে। তিনি জানতেন, এমনটা করলে তারা যিহোবার সাহায্য ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। (যোহন ১৪:১; ১৬:৩৩) এ ছাড়া, যিশুর এই বিষয়ে আস্থা ছিল যে, দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে এক বিরাট জনতা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) আপনি কি সেই বিরাট জনতার মধ্যে থাকবেন? আপনি যদি বর্তমানে আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন, তা হলে যিহোবার সাহায্যে আপনি সেই বিরাট জনতার মধ্যে থাকবেন।—ইব্রীয় ১০:৩৯.
গান ৪৩ জেগে থাকো, নিশ্চল হও, বলবান হও
^ অনু. 5 আমরা সবাই চাই যেন এই দুষ্ট জগৎ শীঘ্র ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু, ভবিষ্যতে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিশ্বাস কি যথেষ্ট দৃঢ় রয়েছে? এই প্রবন্ধে আমরা কিছু ভাই-বোনের উদাহরণ লক্ষ করব আর তাদের কাছ থেকে শিখব, কীভাবে আমরা আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে পারি।
^ অনু. 4 কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।