অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৪
যিহোবা আপনার প্রতি অটল প্রেম দেখান
“[যিহোবার] দয়া [“অটল প্রেম,” NW] অনন্তকালস্থায়ী।”—গীত. ১৩৬:১.
গান ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
সারাংশ *
১. যিহোবা আমাদের কোন উৎসাহ প্রদান করেন?
অটল প্রেম যিহোবার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। (হোশেয় ৬:৬) তাই, তিনি আমাদের উৎসাহ প্রদান করেন, যেন আমরা এই অটল প্রেম দেখিয়ে চলি। কিন্তু, এই গুণ দেখানোর আগে আমাদের জানতে হবে, অটল প্রেম কী।
২. অটল প্রেম কী?
২ “অটল প্রেম” এই শব্দগুলো নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেলে প্রায় ২৩০ বার পাওয়া যায়। “অটল প্রেম,” এই শব্দগুলোর জন্য ব্যবহৃত মূল শব্দটাকে কিছু বাইবেলে “দয়া” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। তাই, এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে দেওয়া শাস্ত্রপদগুলোতে যখন “দয়া” শব্দটা এসেছে, তখন সেটা অটল প্রেমকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু, অটল প্রেম কী? কারো মধ্যে যদি অটল প্রেম থাকে, তা হলে সে অন্যের প্রতি ক্রমাগত ভালোবাসা দেখাবে এবং বিশ্বস্তভাবে তার পাশে থাকবে। অটল প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবা সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানব, কীভাবে যিহোবা মানুষের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে থাকেন। আর পরের প্রবন্ধে আমরা জানব, কীভাবে যিহোবার দাসেরা একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখাতে পারে।
যিহোবা ‘দয়াতে মহান্’
৩. যিহোবা নিজের সম্বন্ধে মোশিকে কী জানিয়েছিলেন?
৩ ইজরায়েলীয়েরা যখন মিশর থেকে বের হয়েছিল, তখন এর কিছুসময় পর, যিহোবা মোশিকে নিজের নাম ও গুণাবলি সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। মোশি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, অপরাধের, অধর্ম্মের ও যাত্রা. ৩৪:৬, ৭) এই পদগুলোতে যিহোবা তাঁর অটল প্রেম সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানিয়েছিলেন। সেটা কী?
পাপের ক্ষমাকারী।” (৪-৫. (ক) যিহোবা তাঁর অটল প্রেম সম্বন্ধে কী বলেছেন? (খ) আমরা কোন দুটো প্রশ্নের উপর মনোযোগ দেব?
৪ যিহোবা শুধু এই কথা বলেননি যে, তিনি অটল প্রেম দেখান। এর পরিবর্তে, তিনি এও বলেছিলেন যে, তিনি “দয়াতে মহান্।” এই কথা বাইবেলে অনেক বার লেখা রয়েছে। (গণনা. ১৪:১৮; নহি. ৯:১৭; গীত. ৮৬:১৫; ১০৩:৮; যোয়েল ২:১৩; যোনা ৪:২) “দয়াতে মহান্,” এই কথা প্রতি বার শুধুমাত্র যিহোবার জন্য লেখা হয়েছে, মানুষের জন্য নয়। এটা থেকে বোঝা যায়, যিহোবা এই গুণকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন। * তাই, রাজা দায়ূদ বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার দয়া আকাশমণ্ডলে ব্যাপ্ত … হে ঈশ্বর, তোমার দয়া কেমন বহুমূল্য! মনুষ্য-সন্তানবর্গ তোমার পক্ষচ্ছায়ার নীচে শরণ লয়।” (গীত. ৩৬:৫, ৭) দায়ূদের মতো আমরাও কি ঈশ্বরের অটল প্রেমের জন্য গভীরভাবে উপলব্ধি দেখাই?
৫ অটল প্রেম কী, তা ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা এই দুটো প্রশ্নের উপর মনোযোগ দেব: যিহোবা কাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান? আর যিহোবা যখন আমাদের প্রতি তাঁর অটল প্রেম দেখান, তখন সেটা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?
যিহোবা কাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান?
৬. যিহোবা কাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান?
৬ বাইবেলে উল্লেখ করা রয়েছে যে, মানুষের আলাদা আলাদা বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকতে পারে। যেমন, “কৃষিকর্ম্ম,” “দ্রাক্ষারস ও তৈল,” “শাসন,” “জ্ঞান” ও “প্রজ্ঞা।” (২ বংশা. ২৬:১০; হিতো. ১২:১; ২১:১৭; ২৯:৩) তবে, অটল প্রেম কোনো বস্তু কিংবা বিষয়ের প্রতি নয় বরং শুধু মানুষের প্রতি দেখানো হয়ে থাকে। যিহোবা কাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান? তিনি সমস্ত মানুষের প্রতি অটল প্রেম দেখান না। তিনি শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের প্রতি এই প্রেম দেখান, যাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি তাদের প্রতি অনুগত থাকেন এবং তাদের প্রতি প্রেম দেখানো কখনো বন্ধ করেন না। তিনি তাদের কাছে এক উত্তম ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কোনো কিছুই তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূরণ করার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে না।
৭. কীভাবে যিহোবা সমস্ত মানুষের প্রতি প্রেম দেখিয়েছেন?
৭ যিহোবা সমস্ত মানুষের প্রতি প্রেম দেখান। এই বিষয়টা যিশু নীকদীমকে বলেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে” অর্থাৎ সমস্ত মানুষকে “এমন প্রেম করলেন যে, নিজের একজাত যোহন ৩:১, ১৬; মথি ৫:৪৪, ৪৫.
পুত্রকে দান করলেন, যাতে যে-কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, বরং অনন্তজীবন পায়।”—৮-৯. (ক) কেন যিহোবা তাঁর দাসদের প্রতি অটল প্রেম দেখান? (খ) এখন আমরা কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ দেব?
৮ আমরা যেমনটা জেনেছি, যিহোবা শুধুমাত্র তাঁর দাসদের প্রতি অটল প্রেম দেখান। এই বিষয়টা রাজা দায়ূদ ও ভাববাদী দানিয়েলও উল্লেখ করেছিলেন। দায়ূদ বলেছিলেন: “যাহারা তোমাকে জানে, তুমি তাহাদের প্রতি তোমার দয়া চিরস্থায়ী কর।” “সদাপ্রভুর দয়া, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত থাকে।” দানিয়েল বলেছিলেন: “হে প্রভু, তুমিই সেই … ঈশ্বর, যিনি তাহাদের সহিত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে।” (গীত. ৩৬:১০; ১০৩:১৭; দানি. ৯:৪) এই শাস্ত্রপদগুলো থেকে বোঝা যায় যে, যিহোবা তাঁর দাসদের প্রতি অটল প্রেম দেখান কারণ তারা সঠিক উপায়ে তাঁর উপাসনা করে। তারা তাঁকে জানে, তাঁকে ভয় করে, তাঁকে ভালোবাসে এবং তাঁর আজ্ঞা পালন করে।
৯ সত্যে আসার আগেও যিহোবা আমাদের প্রতি প্রেম দেখাতেন, কিন্তু সত্যে আসার পর তিনি আমাদের প্রতি অটল প্রেম দেখাতে শুরু করেন। (গীত. ১০৪:১৪) যিহোবা আমাদের আশ্বস্ত করেন, “আমার দয়া তোমা হইতে সরিয়া যাইবে না।” (যিশা. ৫৪:১০) দায়ূদও এই বিষয়টা অনুভব করেছিলেন, তাই তিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু সাধুকে [“অনুগত ব্যক্তিকে,” NW] আপনার নিমিত্ত পৃথক করিয়া রাখিয়াছেন।” (গীত. ৪:৩) এই বিষয়টা জেনে আমাদের কী করা উচিত? বাইবেলে লেখা রয়েছে: “জ্ঞানবান কে? সে এই সমস্ত বিবেচনা করিবে, তাহারা সদাপ্রভুর বিবিধ দয়া আলোচনা করিবে।” (গীত. ১০৭:৪৩) তাই আসুন, আমরা যিহোবার অটল প্রেম সম্বন্ধে তিনটে বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই এবং জানার চেষ্টা করি, তিনি যখন আমাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান, তখন সেটা কীভাবে আমাদের সাহায্য করে।
যেভাবে যিহোবার অটল প্রেম আমাদের সাহায্য করে
১০. যিহোবার অটল প্রেম যে অনন্তকালস্থায়ী, এটা জেনে আমরা কেমন অনুভব করি? (গীতসংহিতা ৩১:৭)
১০ ঈশ্বরের অটল প্রেম অনন্তকালস্থায়ী। গীতসংহিতা ১৩৬:১ পদে লেখা আছে: “তোমরা সদাপ্রভুর স্তব কর; কেননা তিনি মঙ্গলময়;—তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।” “তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী,” এই কথা ১৩৬ গীতে ২৬ বার লেখা আছে। এই গীত পড়ে আমরা অবাক হয়ে যাই যে, যিহোবা কত উপায়ে তাঁর দাসদের প্রতি অটল প্রেম দেখান। “তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী,” এই কথা থেকে আমাদের আস্থা বৃদ্ধি পায় যে, তাঁর দাসদের প্রতি যিহোবার প্রেম কখনো কমে যাবে না। কঠিন সময়েও তিনি তাদের সাহায্য করবেন। এটা জেনে আমরা কেমন অনুভব করি? এটা জেনে আমরা আনন্দিত হই আর কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং ক্রমাগত যিহোবার সেবা করার জন্য শক্তি পাই।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩১:৭.
১১. গীতসংহিতা ৮৬:৫ পদ অনুযায়ী কেন যিহোবা আমাদের ক্ষমা করেন?
১১ ঈশ্বরের অটল প্রেম তাঁকে আমাদের ক্ষমা করতে পরিচালিত করে। একজন অন্যায়কারী ব্যক্তি যখন নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হন এবং নিজেকে পরিবর্তন করেন, তখন যিহোবা অটল প্রেমের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন। দায়ূদ যিহোবা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই।” (গীত. ১০৩:৮-১১) দায়ূদ জানতেন যে, পাপ করার পর যখন বিবেক দংশন করে, তখন কেমন অনুভব হয়। কিন্তু, তিনি এও জানতেন, যিহোবা “ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত” থাকেন। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৬:৫.) দায়ূদ তার প্রার্থনায় বলেছিলেন, যিহোবা এইজন্য ক্ষমা করেন কারণ তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি অটল প্রেম দেখান, যারা তাঁকে ডাকে।
১২-১৩. যদি অতীতের ভুলগুলোর কারণে আমাদের বিবেক এখনও দংশন করে, তা হলে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১২ নিজেদের ভুলের জন্য আপশোস করা ভালো বিষয়। এটা আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে, অনুতপ্ত হতে এবং নিজেদের পরিবর্তন করতে পরিচালিত করে। এর ফলে, যিহোবা আমাদের ক্ষমা করে দেন। কিন্তু, ক্ষমা লাভ করার পরও ঈশ্বরের কিছু দাসের অতীতের ভুলগুলোর কারণে বিবেক দংশন করে চলে। তারা মনে করে, যিহোবা কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না। আপনারও যদি এইরকমটা মনে হয়, তা হলে মনে রাখবেন যে, যিহোবা সত্যিই আপনার প্রতি অটল প্রেম দেখান আর এই প্রেমই তাঁকে আপনাকে ক্ষমা করতে পরিচালিত করে।
১৩ এটা জেনে আমরা কেমন অনুভব করি? এটা জেনে আমরা আনন্দিত হই যে, অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আমরা এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে যিহোবার উপাসনা করতে পারি। কেন? কারণ “যিশুর রক্ত সমস্ত পাপ থেকে আমাদের ১ যোহন ১:৭) অসিদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা হয়তো বার বার ভুল করে ফেলি আর এর ফলে, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা যদি অনুতপ্ত হই, তা হলে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। দায়ূদ উল্লেখ করেছিলেন, অটল প্রেমের জন্য যিহোবা আমাদের কত দূর পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ। পশ্চিম দিক্ হইতে পূর্ব্ব দিক্ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন।” (গীত. ১০৩:১১, ১২) সত্যিই, যিহোবা আমাদের “প্রচুররূপে ক্ষমা” করেন।—যিশা. ৫৫:৭.
শুচি করে।” (১৪. কীভাবে দায়ূদ বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, যিহোবার অটল প্রেম আমাদের সুরক্ষা জোগায়?
১৪ ঈশ্বরের অটল প্রেমের কারণে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। দায়ূদ প্রার্থনায় যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমি আমার অন্তরাল, তুমি সঙ্কট হইতে আমাকে উদ্ধার করিবে; রক্ষাগীত দ্বারা আমাকে বেষ্টন করিবে … যে ব্যক্তি সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে দয়াতে বেষ্টিত হইবে।” (গীত. ৩২:৭, ১০) প্রাচীন কালে, নগরের চারিদিকে উঁচু উঁচু প্রাচীর থাকত, যেটা লোকদের শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষা জোগাত। যিহোবার অটল প্রেমও প্রাচীরের মতো আমাদের সুরক্ষা জোগায়, যাতে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে না যায়। এ ছাড়া, অটল প্রেমের কারণে তিনি আমাদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করেন। তাই, আমাদের এই আস্থা রয়েছে যে, আমরা সুরক্ষিত থাকব।—যির. ৩১:৩.
১৫. কেন দায়ূদ বলেছিলেন, যিহোবার অটল প্রেম একটা দুর্গের মতো?
১৫ কীভাবে যিহোবার অটল প্রেম তাঁর দাসদের সুরক্ষা জোগায়, এই বিষয়টা বোঝানোর জন্য দায়ূদ আরেকটা উদাহরণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বর আমার উচ্চদুর্গ, তিনি আমার দয়াবান্ ঈশ্বর।” তিনি যিহোবা সম্বন্ধে এও বলেছিলেন: “তিনি আমার দয়াস্বরূপ ও আমার দুর্গ, আমার উচ্চদুর্গ ও আমার নিস্তারকর্ত্তা; তিনি আমার ঢাল, আমি তাঁহারই শরণাগত।” (গীত. ৫৯:১৭; ১৪৪:২) কেন দায়ূদ বলেছিলেন, যিহোবার অটল প্রেম একটা দুর্গের মতো? ঠিক যেমন প্রাচীন কালে একটা দুর্গে আশ্রয় নেওয়ার ফলে লোকেরা সুরক্ষিত থাকত, তেমনই বর্তমানে যিহোবার দাসেরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকুক না কেন, যিহোবা তাদের সাহায্য করবেন, যাতে তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অটুট থাকে। ৯১ গীতেও এই বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে লেখা আছে: “আমি সদাপ্রভুর বিষয়ে বলিব, ‘তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ।’” (গীত. ৯১:১-৩, ৯, ১৪) মোশিও বলেছিলেন, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের আশ্রয়। (গীত. ৯০:১) মারা যাওয়ার আগে, মোশি আরেকটা বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যেটা আমাদের সান্ত্বনা প্রদান করে। তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বর প্রাচীনকাল থেকে তোমার আশ্রয় হয়ে রয়েছেন, তাঁর দুই বাহু তোমাকে চিরকাল ধরে রাখবে।” (দ্বিতীয়. ৩৩:২৭) “তাঁর দুই বাহু তোমাকে চিরকাল ধরে রাখবে,” এই কথার অর্থ কী?
১৬. যখন আমরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি, তখন কীভাবে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন? (গীতসংহিতা ১৩৬:২৩)
১৬ যিহোবা যে আমাদের দুর্গ, এটা জেনে আমরা সুরক্ষিত বোধ করি। কিন্তু, কখনো কখনো আমরা খুবই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি। এইরকম সময়ে যিহোবা আমাদের কীভাবে সাহায্য করেন? (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৩৬:২৩.) তিনি আমাদের নিরুৎসাহিতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। তিনি তাঁর দুই বাহুতে আমাদের ধরে রাখেন আর কোমলভাবে আমাদের তোলেন, যাতে আমরা আবারও নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারি। (গীত. ২৮:৯; ৯৪:১৮) আমরা সাহায্যের জন্য সবসময় যিহোবার উপর নির্ভর করতে পারি। এটা জেনে আমরা কেমন অনুভব করি? এটা জেনে আমরা আনন্দিত হই যে, (১) আমরা যেখানেই থাকি না কেন, যিহোবা আমাদের সুরক্ষা জোগাবেন এবং (২) তিনি আমাদের প্রতি প্রেম দেখান।
ঈশ্বর অটল প্রেম দেখিয়ে চলবেন
১৭. আমরা কোন বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি? (গীতসংহিতা ৩৩:১৮-২২)
১৭ আমরা যেমনটা শিখলাম, আমরা যখন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন, যাতে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে না যায়। (২ করি. ৪:৭-৯) ভাববাদী যিরমিয় বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর বিবিধ দয়ার গুণে আমরা নষ্ট হই নাই; কেননা তাঁহার বিবিধ করুণা শেষ হয় নাই।” (বিলাপ ৩:২২) আমরা আস্থা রাখতে পারি, যিহোবা আমাদের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে চলবেন কারণ বাইবেলে লেখা আছে: “সদাপ্রভুর দৃষ্টি তাহাদের উপরে, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, যাহারা তাঁহার দয়ার প্রতীক্ষা করে।”—পড়ুন, গীতসংহিতা ৩৩:১৮-২২.
১৮-১৯. (ক) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি? (খ) পরের প্রবন্ধে আমরা কী জানব?
১৮ এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখেছি? সত্যে আসার আগে যিহোবা আমাদের প্রতি সেই প্রেম দেখাতেন, যে-প্রেম তিনি প্রত্যেক মানুষের প্রতি দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু, সত্যে আসার পর তিনি আমাদের প্রতি অটল প্রেম দেখাতে শুরু করেন। এই প্রেমের কারণে তিনি আমাদের সুরক্ষা জোগান এবং আমাদের নিকটে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন। যিহোবা চান, আমরা যেন সবসময় তাঁর বন্ধু হয়ে থাকি। (গীত. ৪৬:১, ২, ৭) আমরা যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই না কেন, যিহোবা আমাদের শক্তি দেবেন, যাতে আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি।
১৯ তবে, যিহোবা এও চান যেন আমরা একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখাই। কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি? পরের প্রবন্ধে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানব।
গান ২৬ ঈশ্বরের সঙ্গে গমনাগমন করো!
^ অনু. 5 এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে আমরা অটল প্রেম নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রবন্ধে আমরা বিশেষ করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানব: অটল প্রেম কী? যিহোবা কাদের প্রতি অটল প্রেম দেখান? আর যিহোবা যখন তাদের প্রতি এই প্রেম দেখান, তখন এটা থেকে কীভাবে তারা সাহায্য লাভ করে?
^ অনু. 4 ঈশ্বরের অটল প্রেমের বিষয়ে বাইবেলের অন্যান্য পদেও উল্লেখ করা হয়েছে।—নহিমিয় ১৩:২২; গীতসংহিতা ৬৯:১৩; ১০৬:৭; এবং বিলাপ ৩:৩২ পদ দেখুন।
^ অনু. 54 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যিহোবা সমস্ত মানুষের প্রতি প্রেম দেখান, যাদের মধ্যে তাঁর দাসেরাও রয়েছে। ছোটো ছবিগুলোতে দেখানো হয়েছে, যিহোবা কোন কোন উপায়ে আমাদের প্রতি প্রেম দেখান। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ উপায় হল, মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা।
^ অনু. 62 ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যারা মুক্তির মূল্যের উপর বিশ্বাস করে এবং যিহোবার উপাসনা করে, তাদের যিহোবা বিশেষভাবে যত্ন নেন। তিনি তাদের প্রতি কেবল প্রেম দেখান না, কিন্তু সেইসঙ্গে অটল প্রেমও দেখান। ছোটো ছবিগুলোতে দেখানো হয়েছে যে, কোন কোন উপায়ে তিনি তা দেখিয়ে থাকেন।