সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের আর্কাইভ থেকে

“আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্যোগ ও প্রেম সহকারে”

“আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্যোগ ও প্রেম সহকারে”

উনিশ-শো বাইশ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেই দিন শুক্রবার সকালে, হলের মধ্যে যখন ৮,০০০ লোক একত্রে মিলিত হতে থাকে, তখন সেখানকার তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সভাপতি ঘোষণা করেন যে, সেই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের সময় কেউ যদি হলের বাইরে যেতে চান, তা হলে যেতে পারেন, কিন্তু তিনি আর ভিতরে ঢুকতে পারবেন না।

শুরুতে কয়েকটা গান গাওয়া হয় আর এরপর ভাই জোসেফ এফ. রাদারফোর্ড পোডিয়ামের সামনে এগিয়ে আসেন। অধিকাংশ শ্রোতাই চাপা উত্তেজনা নিয়ে বসে থাকে। আবার কেউ কেউ গরমের কারণে অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক হাঁটতে থাকে। বক্তা তাদের বসে মনোযোগ দিয়ে বক্তৃতা শোনার জন্য আন্তরিকভাবে উৎসাহিত করেন। বক্তৃতা শুরু হওয়ার সময় কেউ কি লক্ষ করে যে, উপরে একটা বড়ো কাপড় রোল করে ঝোলানো রয়েছে?

ভাই রাদারফোর্ড, “স্বর্গরাজ্য সন্নিকট” শিরোনামের বক্তৃতা তুলে ধরতে শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে, তিনি যখন প্রাচীন কালের ভাববাদীরা কীভাবে নির্ভীকতার সঙ্গে আসন্ন ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন, তখন তার জোরালো কণ্ঠস্বর হলের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তিনি এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন: “আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে, গৌরবান্বিত রাজা তাঁর শাসন শুরু করেছেন?” শ্রোতারা জোরগলায় উত্তর দেয়: “হ্যাঁ!”

“যদি করেন, তা হলে ক্ষেত্রে ফিরে চলুন, হে সর্বমহান ঈশ্বরের সন্তানগণ!” ভাই রাদারফোর্ড উচ্চস্বরে বলেন। “দেখুন, রাজা রাজত্ব করছেন! জনসাধারণ্যে তাঁর সম্বন্ধে ঘোষণা করার জন্য আপনারাই হচ্ছেন তাঁর প্রতিনিধি। তাই, রাজা এবং তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন।”

ঠিক সেই মুহূর্তে, উপরে ঝোলানো কাপড়ের রোলটা ধীরে ধীরে খুলে যায় আর সেখানে এই স্লোগান দেখা যায়: “রাজা ও রাজ্যের বিষয় ঘোষণা করুন।”

ভাই রে বপ সেই সময়ের কথা মনে করে বলেন: “সঙ্গেসঙ্গে শ্রোতাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।” বোন অ্যানা গার্ডনার বর্ণনা করেন যে, কীভাবে “পুরো হল হাততালির শব্দে কেঁপে উঠেছিল।” ভাই ফ্রেড টোয়ারশ্‌ বলেন, “সমস্ত শ্রোতা একসঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।” ইভানজেলস স্কুফাস বলেন, “মনে হয়েছিল যেন এক পরাক্রমী শক্তি আমাদের আসন থেকে টেনে তুলেছিল আর আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের সকলের চোখ ছলছল করছিল।”

সেই সম্মেলনের অনেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সুসমাচার ছড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু, ভাই রাদারফোর্ডের আহ্বান শোনার পর, তারা এক নতুন উদ্দেশ্য নিয়ে সেই কাজ করার অনুপ্রেরণা লাভ করেছিল। বোন এথাল বেনাকফ্‌ বলেন যে, বাইবেল ছাত্ররা “আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্যোগ ও প্রেম সহকারে” কাজ করার সংকল্প নিয়েছিল। বোন ওডেসা টুক, যার বয়স সেই সময় আঠারো বছর ছিল, তিনি “কে যাইবে?” এই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার দৃঢ়সংকল্প নিয়ে সম্মেলন থেকে ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি জানতাম না, কোথায় প্রচার করব অথবা কীভাবে তা করব কিংবা কী প্রচার করব। আমি শুধু এটা জানতাম যে, আমি যিশাইয়ের মতো হতে চাই, যিনি বলেছিলেন, ‘এই আমি, আমাকে পাঠাও।’” (যিশা. ৬:৮) ভাই রাল্ফ লেফ্‌লার বলেন, ‘সেই উল্লেখযোগ্য দিনেই প্রথম রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করার অভিযান শুরু হয়েছিল, যা পৃথিবীব্যাপী এখনও পর্যন্ত চলছে।’

নিঃসন্দেহে, ১৯২২ সালে ওহাইওর সিডার পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলন ঈশ্বরের লোকেদের কাছে এখনও স্মরণীয় হয়ে আছে! ভাই জর্জ গানগাস বলেন, “সেই সম্মেলন আমাকে একটা সম্মেলনও বাদ না দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল।” তার যতদূর মনে পড়ে, তিনি কখনো কোনো সম্মেলন বাদ দেননি। বোন জুলিয়া উইলকাক্স লেখেন: “যত বারই আমাদের প্রকাশনায় ১৯২২ সালের সিডার পয়েন্টের সেই সম্মেলনের কথা উল্লেখ করা হয়, তত বারই আমি যে কতটা রোমাঞ্চিত হই, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি সবসময়ই এই কথা বলতে চাই, ‘যিহোবা, সেই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছ বলে আমি তোমার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।’”

বর্তমানে, আমাদের মধ্যেও অনেকের হয়তো কোনো সম্মেলন সম্বন্ধে এইরকম চমৎকার স্মৃতি রয়েছে, যে-সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা বিশেষভাবে রোমাঞ্চিত হয়েছি এবং আমাদের মহান ঈশ্বর ও রাজার প্রতি আরও বেশি উদ্যোগ ও প্রেম দেখাতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমাদের যখন সেই স্মৃতিগুলোর কথা মনে পড়ে, তখন আমরাও এই কথা বলতে পরিচালিত হই, “যিহোবা, সেই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছ বলে আমি তোমার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।”