উচ্চশিক্ষা ও টাকাপয়সা কি এক উত্তম ভবিষ্যৎ লাভ করতে সাহায্য করে?
অনেকে এইরকমটা চিন্তা করে, উচ্চশিক্ষা ও টাকাপয়সা একজন ব্যক্তিকে এক উত্তম ভবিষ্যৎ লাভ করতে সাহায্য করে। তারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিলেই একজন ব্যক্তি এক উত্তম কর্মী, পরিবারের এক উত্তম সদস্য এবং এক উত্তম নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। তারা হয়তো এও মনে করে, উচ্চশিক্ষা লাভ করলেই ভালো বেতনের একটা চাকরি পাওয়া যাবে আর প্রচুর টাকাপয়সা উপার্জন করলেই একজন ব্যক্তি সুখী হতে পারবে।
অনেকে যে-বাছাই করে থাকে
চিনে বসবাসরত ঝাং চেন নামে একজন ব্যক্তির মন্তব্য লক্ষ্য করুন। তিনি বলেন, “আমি মনে করতাম, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিলেই দরিদ্রতা থেকে মুক্ত হওয়া যায় আর ভালো বেতনের চাকরি করলেই এক সুখী জীবন লাভ করা যায়।”
এক উত্তম জীবন লাভ করার জন্য অনেকে বড়ো বড়ো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চায় আর এরজন্য কেউ কেউ হয়তো অন্য দেশে গিয়ে পড়াশোনা করে। কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত এটা খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু, অতিমারির কারণে তা করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায় দশ বছর আগে একটা সংগঠন গবেষণা করে দেখেছে যে, “যারা অন্য দেশে গিয়ে শিক্ষা লাভ করে, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এশিয়া থেকে যায়।”
অনেক বাবা-মা বড়ো বড়ো ত্যাগস্বীকার করে থাকে, যাতে তাদের ছেলে-মেয়েরা অন্য দেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে। তাইওয়ানের চিশিয়াং নামে একজন ব্যক্তি বলেন: “যদিও আমার বাবা-মা ধনী ছিল না, কিন্তু তারপরও তারা আমাদের চার ভাই-বোনকেই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, যাতে আমরা সেখানকার একটা কলেজে পড়াশোনা করতে পারি।” এর ফলে, অন্যান্য অনেক পরিবারের মতো তাদের পরিবারও ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়ে।
উচ্চশিক্ষা কি আসলেই সাহায্য করে?
উচ্চশিক্ষা যদিও কোনো কোনো দিক দিয়ে জীবনকে উন্নত করতে পারে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা যে-ফল আশা করে, তা তারা পায় না। যেমন, উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য অনেকে বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে এবং প্রচুর ঋণ নিয়ে থাকে, কিন্তু তারপরও তারা যেরকম চাকরি আশা করে, সেইরকম চাকরি পায় না। সিঙ্গাপুরের বিজনেস্ টাইমস্ পত্রিকায় রেচেল মুইয়ের লেখা একটা রিপোর্ট জানায়: “গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরও অনেকে চাকরি পায় না আর এইরকম ব্যক্তিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।” তাইওয়ানে বসবাসরত জিয়েনজি নামে অনেক উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যক্তি বলেন, “অনেকে যে-বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে, সেই অনুযায়ী চাকরি পায় না আর তাই অন্য চাকরি করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না।”
আবার অনেকে যে-বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে, সেই অনুযায়ী চাকরি পায় ঠিকই কিন্তু তারা যেরকম জীবন আশা করে, সেইরকম জীবন পায় না। নাইরিন নামে থাইল্যান্ডের একজন ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে ফিরে আসার পর তিনি তার ডিগ্রি অনুযায়ী একটা চাকরি পান। “আমি যেমনটা আশা করেছিলাম, সেই অনুযায়ী উচ্চবেতনের একটা চাকরি পাই। কিন্তু, এরজন্য আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হত এবং অনেক সময় দিতে হত। পরে কোম্পানি বেশিরভাগ কর্মীকে ছাঁটাই করে, যাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আমি বুঝতে পারি, কোনো চাকরিই এক উত্তম ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় না।”
যে-লোকেরা ধনী, তাদের জীবনেও পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতা রয়েছে আর সেইসঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে তাদের চিন্তাও দূর হয় না। কাৎয়্রসুতোশি নামে জাপানের একজন ব্যক্তি বলেন, “যদিও আমার প্রচুর টাকাপয়সা ছিল কিন্তু তারপরও আমি সুখী ছিলাম না, কারণ অন্যেরা আমাকে দেখে হিংসা করত আর আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত।” ভিয়েতনামে বসবাসরত লাম নামে একজন মহিলা বলেন, “অনেকে প্রচুর টাকাপয়সা উপার্জন করার চেষ্টা করে কারণ তারা মনে করে, এতে তারা এক উত্তম জীবন লাভ করবে। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়ই তাদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায় এবং তারা এমনকি আরও হতাশ ও অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
ফ্র্যাঙ্কলিনের মতো অনেকে বুঝতে পেরেছে, উচ্চশিক্ষা ও ধনসম্পদের চেয়ে জীবনে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ এইরকম বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ না দিয়ে বরং একজন ভালো ব্যক্তি হয়ে ওঠার এবং অন্যদের প্রতি ভালো কাজ করার মাধ্যমে এক উত্তম ভবিষ্যৎ লাভ করার চেষ্টা করে। এগুলো কি এক উত্তম ভবিষ্যৎ লাভ করার জন্য সাহায্য করবে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে।