সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার চুলকে একটু কাছ থেকে দেখা যাক

আপনার চুলকে একটু কাছ থেকে দেখা যাক

আপনার চুলকে একটু কাছ থেকে দেখা যাক

একটা বই বলে, ‘সব যুগে ও সব সংস্কৃতিতে চুল দেখে একজন লোকের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কিছুটা জানা যায়।’ তাই এটা আশ্চর্যের কিছুই নয় যে, বেশির ভাগ লোকই নিজেদের চুলের স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে এবং চুলকে সুন্দর দেখাতে চায়।

সচেতন থাক! চারজন অভিজ্ঞ হেয়ারস্টাইলিস্টদের কাছে চুলের গঠন এবং এর যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন করেছিল, যেগুলো প্রায় সবাই করে থাকেন। দেখা গেছে যে, আপনার চুলকে দেখতে যেমন লাগে সেগুলো তার চেয়েও অনেক বেশি জটিল।

চুল গজা এবং চুল পড়া

প্র: চুল কী দিয়ে গঠিত?

উ: চুলে কেরাটিন আছে, যেটা এক তন্তুময় প্রোটিন। প্রত্যেকটা চুল মাথার ত্বকের খাঁজ থেকে গজায়, যেটাকে বলে ফলিকল বা কেশথলি। প্রত্যেকটা কেশথলির তলায় রয়েছে প্যাপিলা, যেটার মধ্যে অসংখ্য রক্তবাহি নালী আছে। এই প্যাপিলা চুলের কোষগুলো সৃষ্টি করে, যেগুলো সংখ্যায় বৃদ্ধি হওয়ার সময় কেশথলি ভেদ করে বাড়তে থাকে এবং পরে কোষগুলো জুড়ে শক্ত হয়ে চুল হয়ে যায়।

প্র: বেশির ভাগ লোক এটা বিশ্বাস করে যে চুল কাটলে তাড়াতাড়ি বাড়ে। এটা কি ঠিক?

উ: না। কিছু লোকেরা মনে করেন যে শরীর চুলের পুষ্টি যোগায়, ঠিক যেভাবে গাছের শাখাগুলো গাছের গুঁড়ি থেকে পুষ্টি পায়। কিন্তু একবার যখন চুল বেড়ে মাথার ত্বক থেকে বের হয়ে আসে, তখন সেটা শরীরের এক মৃত অঙ্গ হয়ে যায়। সেইজন্য চুল ছাঁটলে সেটা চুলের বৃদ্ধির ওপর কোন প্রভাব ফেলে না।

প্র: চুল কেন পেকে যায়?

উ: চুলের ভিতরের স্তরে একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে, যেটার ওপর ভিত্তি করে চুলের রঙ ঠিক হয়। যখনই রঞ্জক কোষগুলো মরে যায়, চুল পাকতে শুরু করে; এটা বার্ধক্যের একটা দিক। বংশগত বা অসুস্থতার কারণে বয়স হওয়ার আগেই চুল পেকে যেতে পারে। রাতারাতি চুল পেকে যাবে এই ধারণা ভুল। মাথার ত্বকের নিচে রঞ্জক কোষগুলো জমা থাকে। তাই পাকা চুল বাড়তে অনেক সময় লাগে (প্রায় ১·২৫ সেন্টিমিটার বাড়তে এক মাস) আর তারপর মাথার ত্বকের ওপর দেখা যায়।

প্র: কোন্‌ কারণগুলোর জন্য চুল পড়ে?

উ: চুল পড়া, চুলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রত্যেকের, গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৮০টা চুল পড়ে। কিন্তু, ছেলেদের বংশগত কারণে টাক পড়ে আর মনে হয় একটা হরমোন কমবেশি ক্ষরণের ফলে স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যায়। অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়াকে আ্যলোপেসিয়া বলে। *

প্র: কেউ কেউ বলেন যে একজনের চুল দেখে তার স্বাস্থ্য বোঝা যায়। আপনি কি এটা লক্ষ্য করেছেন?

উ: হ্যাঁ। মাথার ত্বকের নিচে রক্ত চুলকে পুষ্টি জোগায়। তাই চুলের ভাল স্বাস্থ্য দেখাবে যে রক্তবাহি নালীগুলো ভাল পুষ্টি জোগাচ্ছে। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যে পুষ্টিকর খাবার কম খান অথবা খুব বেশি মদ খান তিনি হয়তো দেখতে পাবেন যে তার চুল নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ছে কারণ তার রক্তবাহি নালীগুলো চুলকে সঠিক পুষ্টি জোগাতে পারে না। এমনকি চুল পড়া অথবা দুর্বল চুল, রোগের বা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।

আপনার মাথার ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখা

প্র: মাথার ত্বক ও চুলকে কীভাবে শ্যাম্পু করতে হবে তা বলুন।

উ: অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় যে বেশির ভাগ লোক যাদের মাথার ত্বক শুষ্ক তারা প্রায়ই শ্যাম্পু করে থাকেন। অবশ্য এটা ঠিক যে, আপনার চুলের মধ্যে তৈলাক্তভাব থাকার কারণে চুলে ময়লা ও ত্বকের মৃত কোষগুলো আটকে যায় এবং তা কেশথলি পর্যন্ত বিস্তৃত তেলের নালীগুলোকে বন্ধ করে দিতে পারে। তাই নিয়মিতভাবে শ্যাম্পু করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু চুলের এই তৈলাক্তভাব আপনার ত্বককে ক্ষতিকর জীবাণু থেকেও বাঁচায় এবং ত্বকে যতটা আর্দ্রতা থাকা দরকার সেটা ধরে রাখে। কিন্তু ঘন ঘন শ্যাম্পু করে আপনি আপনার মাথার ত্বকের সুরক্ষার জন্য যে তৈলাক্তভাব রয়েছে সেটা দূর করে দেন আর এর ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বেশির ভাগ চুল বিশেষজ্ঞরাই এই পরামর্শ দেন যে একজনের মাথার ত্বক বা চুল নোংরা হলে পর শ্যাম্পু করা উচিত। যাদের চুল স্বাভাবিক বা শুষ্ক তাদের চেয়ে যাদের চুল খুব বেশি তৈলাক্ত তাদের ঘন ঘন শ্যাম্পু করা উচিত।

শ্যাম্পু করার সময় আপনার মাথার ত্বক ভালভাবে ম্যাসাজ করুন। এটা করলে আপনার মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো ঝরে যায় এবং ত্বকে ভালভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে, যা আপনার চুলে পুষ্টি জোগায়। শ্যাম্পু করার পর মাথা ভালকরে ধুতে ভুলবেন না যেন! হাতে সাবান দেওয়ার পর আপনি যদি ভাল করে জল দিয়ে না ধোন, তাহলে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে ও ফেটে যাবে। ঠিক সেইরকমই মাথায় শ্যাম্পু দেওয়ার পর যদি ভাল করে জল দিয়ে না ধোয়া হয়, তাহলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং সাদা সাদা দেখাতে পারে।

প্র: কীভাবে মাথার শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া যেতে পারে?

উ: বেশি বেশি জল এবং পুষ্টিকর খাবার খান। এগুলো আপনার ত্বকের জন্য জলের প্রয়োজনকে মেটায় এবং রক্তবাহি নালিগুলোকে পুষ্টি জোগায়। হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং নিয়মিতভাবে আপনার মাথার ত্বককে ম্যাসাজ করুন। কেউ কেউ মাথার ত্বকে আর্দ্রভাব বজায় রাখার জন্য এমন কন্ডিশনার ও লোশন ব্যবহার করেন যা ধুলেও যায় না।

কেশবিন্যাস

প্র: হেয়ারস্টাইলিস্টের কাছে যাওয়ার সময় একজনের কী মনে রাখা উচিত?

উ: আপনি যদি আপনার হেয়ার স্টাইল পালটাতে চান, তাহলে যে হেয়ার স্টাইলটা আপনি চান সেটার ছবি সঙ্গে করে নিয়ে যান এবং পারলে যে হেয়ার স্টাইল আপনি চান না তার ছবিও সঙ্গে রাখুন। স্পষ্টভাবে আপনার ইচ্ছা এবং প্রতিদিন আপনি চুলের জন্য কতটা সময় দিতে প্রস্তুত আছেন তা জানান কারণ কিছু কিছু হেয়ার স্টাইলের অন্যান্যগুলোর চেয়ে বেশি যত্ন নেওয়ার দরকার হয়। মনে রাখবেন যে, সাধারণত দুই বা তিনবার যাওয়ার পরেই একজন হেয়ারস্টাইলিস্ট আপনার চুলের ধরন বুঝতে পারেন এবং আপনার চুল সম্বন্ধে আপনাকে সঠিক তথ্য জানাতে পারেন। তাই হাল ছেড়ে দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে হেয়ারস্টাইলিস্ট পালটাবেন না!

আপনার চুল দেখে যা বোঝা যায়

চুলের যত্ন এবং হেয়ার স্টাইল লোকেদের সামনে নিজেকে প্রকাশ করার ভিন্ন ভিন্ন উপায়। নতুন নতুন ফ্যাশন, ধর্মীয় বিশ্বাস আর এমনকি সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারণাগুলোর সঙ্গে সংগতি রাখতে গিয়ে চুল কাটা, বড় করা, সোজা করা, কোঁকড়া করা, রং করা ও বিভিন্ন ধরনের স্টাইল করা হয়।। আপনার চুলকে একটু কাছ থেকে দেখুন। এটা আপনার সম্বন্ধে কী জানায়? স্বাস্থ্যকর চুলকে যদি মানানসইভাবে বিন্যাস করা হয়, তাহলে যিনি তা করেন সেটা তার চেহারাকে সুন্দর করে তুলে এবং অন্যেরাও সেটার প্রশংসা করেন।(g০১ ৪/৮)

[পাদটীকা]

^ আরও তথ্য জানার জন্য ১৯৯১ সালের ২২শে এপ্রিলের সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকার “আ্যলোপেসিয়া—চুল পড়ার কারণে নিজেকে লুকিয়ে রাখা” প্রবন্ধটা দেখুন।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

পুষ্টিকর খাবার ও বেশি করে জল খেলে মাথার শুষ্ক ত্বক থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাকা চুল বার্ধক্যের একটা স্বাভাবিক দিক

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঘন ঘন শ্যাম্পু করলে আপনার মাথার ত্বকের সুরক্ষার জন্য যে তৈলাক্তভাব রয়েছে সেটা দূর হয়ে যায়