সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চেরাপুঞ্জী—পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা

চেরাপুঞ্জী—পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা

চেরাপুঞ্জী—পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা

ভারতের সচেতন থাক! লেখক কর্তৃক

পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা? কিন্তু সেটা কী করে হতে পারে? ভারতে প্রায় সব জায়গাতেই জলের ঘাটতি দেখা যায় এবং বেশির ভাগ সময় এমনকি আপনার ছাতারও প্রয়োজন হয় না! তাহলে আমরা কোন্‌ অদ্ভুত জায়গার বর্ণনা দিচ্ছি? চেরাপুঞ্জী—ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মেঘালয়ের একটা শহর, যা বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত। মেঘালয় এতই সুন্দর যে এটাকে “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড” বলা হয়। এই নামের অর্থ হচ্ছে “মেঘের আবাস।” কিন্তু কেন চেরাপুঞ্জীকে অনেক সময় ধরে পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা বলে ধরা হয়? আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই অদ্ভুত জায়গাটা একটু ঘুরে দেখি। *

মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং থেকে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি। একটা টুরিস্ট বাসে চড়ে আমরা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাই। যতই আমরা উঁচুনিচু পাহাড় এবং খোলা তৃণভূমি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকি, ততই আমাদের সামনে জমে থাকা মেঘ দেখতে পাই আর এটা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মেঘালয় নামটা সত্যিই উপযুক্ত।

আমাদের রাস্তা গাছপালাতে ভরা গভীর গিরিখাতের ধার ঘেঁষে এঁকেবেঁকে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল। অনেক উঁচুতে জলপ্রপাতগুলো থেকে জল সজোরে নিচের দিকে নেমে এসে নদীকে জলে পূর্ণ করে উপত্যকার মধ্য দিয়ে উত্তালভাবে এগিয়ে চলেছে। আমাদের বাস যেই মোওডাকে থামে, আমরা নিচু আকাশের মেঘকে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ভেসে বেড়াতে দেখি। হঠাৎ এই মেঘ গোটা প্রাকৃতিক দৃশ্যকে ঢেকে দিয়ে চোখের আড়াল করে দিল এবং কিছুক্ষণ পরেই তা আবার চোখের সামনে নিয়ে আসার জন্য সরে পড়ল। কিছুক্ষণের জন্য আমাদেরও এই মেঘপুঞ্জ ঢেকে ফেলে এবং আমরা তুলতুলে অদৃশ্য সাদা কম্বলের মধ্যে হারিয়ে যাই। কিন্তু, খুব শীঘ্রিই এই মেঘগুলো ঘুরপাক খেতে খেতে উড়ে যায় এবং সূর্য চমৎকার দৃশ্যকে যেন আরও ফুটিয়ে তোলে।

চেরাপুঞ্জী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩০০ মিটার ওপরে অবস্থিত। আমরা যখন শহরে পৌঁছাই, তখন বৃষ্টির জন্য একখণ্ড মেঘও দেখা যাচ্ছিল না এবং কেউ হাতে ছাতা নিয়ে ঘুরছিল না। একমাত্র আমরা পর্যটকরাই বৃষ্টির জন্য তৈরি হয়ে ছিলাম! তাহলে কখন বৃষ্টি হয়?

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত তখনই হয়, যখন সূর্যের তাপে সমুদ্রের উষ্ণতম অংশ থেকে প্রচুর পরিমাণ জল বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে যায়। ভারত মহাসাগর থেকে ওঠা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যখন হিমালয় পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালগুলোতে এসে ধাক্কা খেয়ে ওপরের দিকে উঠতে বাধ্য হয়, তখন এই বায়ু প্রবল বৃষ্টির আকারে জলীয় বাষ্পগুলোকে ঢেলে দেয়। সেই সময় মেঘালয় মালভূমিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। এছাড়াও, দেখা গেছে যে এই উঁচু জায়গা যেহেতু দিনের বেলায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সূর্যের পূর্ণ তেজ পায়, তাই বৃষ্টির মেঘ ওপরে ওঠে এবং সন্ধ্যের দিকে বাতাস ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এর ফলে বুঝতে পারা যায় যে, বেশির ভাগ সময় বৃষ্টি রাতে কেন হয়।

১৮৬১ সালের জুলাই মাসে, চেরাপুঞ্জীতে ৯৩০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল যা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়! আর ১৮৬০ সালের ১লা আগস্ট থেকে শুরু করে ১৮৬১ সালের ৩১শে জুলাই পর্যন্ত এই ১২ মাসে মোট ২,৬৪৬ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে চেরাপুঞ্জীতে গড়ে এক বছরে ১৮০ দিন বৃষ্টি হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। যেহেতু বেশির ভাগ সময়ই রাতে বৃষ্টি হয়, তাই পর্যটকরা বৃষ্টিতে না ভিজে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

এটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন যে এত বৃষ্টি হওয়ার পরও এই অঞ্চলে কখনও জলের ঘাটতি হতে পারে। কিন্তু, শীতের মাসগুলোতে প্রায়ই এটা হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুর দ্বারা সৃষ্ট বৃষ্টির জল কোথায় যায়? চেরাপুঞ্জীর বাইরে অনেক জায়গা জুড়ে যেহেতু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, তাই উঁচু মালভূমিতে পড়া বৃষ্টির বেশির ভাগ জল সমতল ভূমির দিকে বয়ে গিয়ে নদীতে মিশে যায়, যে নদীগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশের দিকে বয়ে গেছে। জলস্রোতের নদীতে বাঁধ তৈরি করার এবং জলাধার নির্মাণ করার কথা ভেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু মৌসিনরামের উপজাতীয় রাজা জি. এস. মঙ্গিয়ানের মতে, “জলের সমস্যা সমাধান করার জন্য জরুরি কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

চেরাপুঞ্জী থেকে ঘুরে আসা সত্যিই চমৎকার ছিল এবং অনেক কিছু শেখা গেছে। এই জায়গার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই চমৎকার! এখানে সুন্দর সুন্দর ফুল রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রজাতির অর্কিডস্‌ রয়েছে এবং এক অদ্বিতীয় প্রজাতির পতঙ্গভূক ঘটপত্রী উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, এখানে দেখার মতো বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু আর ঘুরে দেখার মতো চুনাপাথরের গুহাগুলো রয়েছে ও স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে বড় বড় পাথরের খণ্ডও রয়েছে, যেগুলো কাছ থেকে ভাল করে দেখা যায়। বিরাট জায়গা জুড়ে থাকা কমলালেবুর বাগানগুলো রসাল ফল উৎপাদন করে, সেইসঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে কমলালেবুর সুস্বাদু মধু তৈরির সুবিধা করে দেয়। “মেঘের আবাস,” মেঘালয়ে এবং পৃথিবীর এক বৃষ্টিবহুল জায়গা চেরাপুঞ্জীতে পর্যটকদের জন্য এই সবকিছু অপেক্ষা করে আছে।(g০১ ৫/৮)

[পাদটীকা]

^ কাওয়াইয়ের হাওয়াই দ্বীপের ওয়াইয়ালিয়েলি পাহাড়ে এবং চেরাপুঞ্জী থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রাম মৌসিনরামে কখনও কখনও গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ চেরাপুঞ্জীর থেকেও বেশি হয়েছে বলে রেকর্ড করা হয়েছে।

[২৮ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

ভারত

চেরাপুঞ্জী

[সৌজন্যে]

Mountain High Maps® Copyright © ১৯৯৭ Digital Wisdom, Inc.

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

পতঙ্গভুক্‌ ঘটপত্রী উদ্ভিদের এই প্রজাতি শুধু পৃথিবীর এই অঞ্চলেই দেখা যায়

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

জলপ্রপাত নদীকে জলে পূর্ণ করে উপত্যকার মধ্য দিয়ে উত্তালভাবে এগিয়ে চলেছে

[সৌজন্যে]

Photograph by Matthew Miller