সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পর্নোগ্রাফি—এটা কি নিছক সময় কাটানোর একটা উপাদান?

পর্নোগ্রাফি—এটা কি নিছক সময় কাটানোর একটা উপাদান?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

পর্নোগ্রাফি—এটা কি নিছক সময় কাটানোর একটা উপাদান?

রা নি ভিক্টোরিয়ার আমলের প্রত্নতত্ত্ববিদরা যখন সুশৃঙ্খলভাবে পম্পেই শহরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খনন করতে শুরু করে, তখন সেখানে তারা যা পেয়েছিল, তা দেখে হতবাক হয়ে যায়। চারিদিকে সুন্দর সুন্দর চিত্র ও শিল্পকর্মের মধ্যে অনেক যৌন উদ্দীপনামূলক ছবি ও ভাস্কর্য ছিল। এগুলোর উত্তেজনাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখে ঘাবড়ে গিয়ে কর্তৃপক্ষ গোপন জাদুঘরগুলোতে সেগুলো সংরক্ষণ করে রেখেছিল। বিশদভাবে চিত্রিত এই শিল্পকর্মগুলোকে শ্রেণীভাগ করার জন্য তারা “পর্নোগ্রাফি” শব্দটা উদ্ভাবন করে—গ্রিক শব্দ পর্নি এবং গ্রাফোস থেকে, যার অর্থ হল “বেশ্যাদের সম্বন্ধে রচনা।” আজকে পর্নোগ্রাফি শব্দটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, “লেখায় বা চিত্রে, মুদ্রিত গ্রন্থাদি বা চলচ্চিত্র ইত্যাদিতে যৌন ক্রিয়ার বর্ণনা বা দৃশ্য প্রদর্শন করিয়া যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি বা এই জাতীয় কর্মে নিয়োজিত বা উদ্দেশ্য পূরণে নিযুক্ত।”

বর্তমানে পর্নোগ্রাফি অত্যন্ত ব্যাপক এবং মনে হয় আধুনিক সমাজের বেশির ভাগ জায়গায়ই তা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে কেবল নোংরা সিনেমা এবং পতিতালয়গুলোতেই এগুলো দেখা যেত কিন্তু এখন এটা অনেক সমাজে প্রধান ধারা হয়ে উঠেছে। পর্নোগ্রাফি থেকে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই বছরে ১০০০,০০,০০,০০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করে!

কিছু সমর্থক পর্নোগ্রাফিকে একঘেয়ে বিবাহিত জীবনে কিছু বৈচিত্র আনার এক উপায় হিসেবে তুলে ধরে। একজন লেখক বলেন: “এটা কল্পনাপ্রবণ জীবনধারাকে উদ্দীপিত করে তোলে। এটা যৌন পরিতৃপ্তি পাওয়ার নির্দেশনা জোগায়।” অন্যেরা দাবি করে যে, এটা যৌন বিষয়গুলোতে খোলামেলা ও উদার হতে উৎসাহ দেয়। “পর্নোগ্রাফি মহিলাদের উপকৃত করে,” লেখিকা ওয়েন্ডি ম্যাকএলরয় দাবি করেন।

কিন্তু এর সঙ্গে সকলেই একমত নয়। পর্নোগ্রাফিকে প্রায়ই ব্যাপক ক্ষতিকর পরিণতি ও মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকে যে, পর্নোগ্রাফি ও ধর্ষণ এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রকারের দৌরাত্ম্যের মধ্যে একটা যোগসূত্র রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে খুন করার সঙ্গে যুক্ত একজন কুখ্যাত আসামী টেড বানডি স্বীকার করেন যে, তার “হিংস্র পর্নোগ্রাফি দেখার প্রতি এক তীব্র লালসা ছিল।” তিনি বলেন: “একজন ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গেই এই অবস্থাটা বুঝতে পারে না বা এটাকে এক গুরুতর সমস্যা বলে চিহ্নিত করা যায় না। . . . কিন্তু এই আগ্রহ . . . দৌরাত্ম্যপূর্ণ যৌনপ্রকৃতির বিষয়গুলোর দিকে চালিত হয়। আমি এর থেকে বেশি জোর দিয়ে বোঝাতে পারব না যে কীভাবে ধীরে ধীরে এই প্রবণতা গড়ে ওঠে। এটা অল্প কদিনে হয় না।”

আজকে অন্তহীন বিতর্ক ও পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘এই বিষয়ে বাইবেল কি কোন নির্দেশনা দেয়?’

বাইবেল যৌন বিষয় সম্বন্ধে খোলাখুলি আলোচনা করে

বাইবেলে যৌন বিষয়গুলোকে একেবারে অকপটভাবে এবং কোনরকম সংকোচ না করেই তুলে ধরা হয়েছে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:৫; ১ করিন্থীয় ৭:৩, ৪) “তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর,” শলোমন পরামর্শ দিয়েছিলেন। “তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও।” (হিতোপদেশ ৫:১৮, ১৯) যৌন সম্পর্কের বিষয়ে স্পষ্ট উপদেশ এবং পরামর্শ ও সেইসঙ্গে তা উপভোগ করার সীমা কতখানি, তা জানানো হয়েছে। বিবাহ ব্যবস্থার বাইরে যৌন সম্পর্ক করা নিষেধ। সেইসঙ্গে সবধরনের বিকৃত যৌন অভ্যাসগুলোও বর্জনীয়।—লেবীয় পুস্তক ১৮:২২, ২৩; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; গালাতীয় ৫:১৯.

এমনকি এই সীমার মধ্যেও সংযম এবং সম্মান আশা করা হয়ে থাকে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]।” (ইব্রীয় ১৩:৪) এই পরামর্শ পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্য ও বক্তব্যের একেবারে বিপরীত।

পর্নোগ্রাফি যৌন বিষয়কে বিকৃত করে

যৌন সম্পর্ককে একজন নারী ও পুরুষের সম্মানজনক বিবাহের মধ্যে এক সুন্দর ও অন্তরঙ্গ প্রকাশ হিসেবে তুলে ধরার বদলে পর্নোগ্রাফি যৌনক্রিয়াকে হীন ও বিকৃত করে। বাছবিচারহীন ও বিকৃত যৌনক্রিয়াকে উত্তেজনাপূর্ণ ও কাম্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। অন্য ব্যক্তির প্রতি সামান্য বা একেবারে কোন সম্মান না দেখিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

নারী, পুরুষ ও শিশুদের কেবল যৌন কামনা মেটানোর সামগ্রী হিসেবে তুলে ধরা হয়। “সৌন্দর্যের পরিমাপ করা হয় একজনের দৈহিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে, কিছু অবাস্তব প্রত্যাশাকে জাগিয়ে তোলা হয়,” একটা রিপোর্ট বলে। “নারীদের এক বেনামি, অপেক্ষারত, পুরুষের ভোগের সামগ্রী, আর্থিক মুনাফা ও চিত্তবিনোদনের জন্য নগ্ন হওয়া ও শরীর দেখানোর এক মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরাটা কখনও সমতা, মর্যাদা ও মানবতাবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারে না,” আরেকটা রিপোর্ট উপসংহারে বলে।

অন্যদিকে, প্রেম “অশিষ্টাচরণ করে না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। “[এটা] স্বার্থ চেষ্টা করে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৫) বাইবেল পুরুষদের ‘আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে’ এবং ‘তাহাদের সমাদর করিতে’ পরামর্শ দেয়, নারীদের কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখতে নয়। (ইফিষীয় ৫:২৮; ১ পিতর ৩:৭) যদি কেউ, তা সে নারী বা পুরুষ যে-ই হোক না কেন, নিয়মিত অন্য লোকেদের যৌনক্রিয়ার স্পষ্ট চিত্রগুলো দেখে, সে কি সত্যি সত্যি শিষ্টাচরণ করছে? আর সেই ব্যক্তি কি প্রকৃতই সমাদর ও সম্মান দেখাচ্ছে? প্রেম গড়ে তোলার বদলে, পর্নোগ্রাফি আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর কামনাকে গড়ে তোলে।

আরেকটা বিষয়ও রয়েছে। যেকোন ধরনের বেঠিক উত্তেজনার মতো, যা কিছু প্রথম দিকে একজনের মধ্যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তা খুব শীঘ্রই গতানুগতিক ও সাধারণ হয়ে ওঠে। একজন লেখক বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, [পর্নোগ্রাফি ব্যবহারকারীদের] আরও বেশি স্পষ্ট ও উদ্ভট বিষয়বস্তুর প্রয়োজন হয়ে পড়ে . . . তারা হয়তো তাদের সাথিদের আরও উদ্ভট যৌন ক্রিয়ায় রত হতে জোর দেয় . . . , সত্যিকারের ভালবাসা দেখানোর ক্ষেত্রে তারা তাদের [নিজস্ব] ক্ষমতাকে হ্রাস করে ফেলে।’ এটাকে কি কেবল নিছক সময় কাটানোর একটা উপাদান বলে মনে হয়? কিন্তু পর্নোগ্রাফি এড়িয়ে চলার জন্য আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।

বাইবেল এবং কামলালসা

যদিও আজকে অনেকে মনে করে যে, যৌন কল্পনায় মগ্ন থাকার মধ্যে কোন অন্যায় বা বিপদ নেই কিন্তু বাইবেল এর সঙ্গে একমত নয়। এটা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে, আমরা আমাদের মনের মধ্যে যা গ্রহণ করি ও যেভাবে কাজ করি, এই দুইয়ের মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। খ্রীষ্টান শিষ্য যাকোব বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”—মথি ৫:২৮.

যাকোব ও যীশু দুজনেই যেমন ইঙ্গিত করেছেন যে, মানুষ তাদের অন্তরের আকাঙ্ক্ষার দ্বারা চালিত হয়। ওই আকাঙ্ক্ষাগুলোতে যখন ইন্ধন জোগানো হয় ও সেগুলো পোষণ করা হয়, তখন সেগুলো একসময় খুব জোরালো অনুভূতিতে পরিণত হয়। এইরকম জোরালো অনুভূতিকে প্রতিরোধ করা খুব কঠিন ও শেষ পর্যন্ত তা একজন ব্যক্তিকে কাজের দিকে চালিত করে। অর্থাৎ, আমরা আমাদের মনে যা কিছু ঢোকাই তা শেষ পর্যন্ত আমরা যা করি সেটার ওপর এক জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে।

যৌন কল্পনা সরাসরি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উপাসনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সেইজন্যই পৌল লিখেছিলেন: “অতএব তোমরা . . . আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।”—কলসীয় ৩:৫.

পৌল এখানে যৌন কামনাকে লোভের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা হল একজন ব্যক্তির যা নেই সেটা পাওয়ার জন্য অত্যধিক আকাঙ্ক্ষা। * লোভ একধরনের প্রতিমাপূজা। কেন? কারণ যে লোভ করে সে সমস্ত কিছুর আগে, এমনকি ঈশ্বরেরও আগে তার নিজের আকাঙ্ক্ষিত বস্তুকে রাখে। পর্নোগ্রাফি একজন ব্যক্তির যা নেই, তা পাওয়ার লালসাকে উদ্দীপিত করে তোলে। “অন্যের যৌন জীবনকে আপনি নিজের করে পেতে চান। . . . আপনার মনে তখন শুধু আপনার যা নেই ওই একটাই ক্ষুধা থাকে। . . . আমরা যেটার লালসা করি, তারই উপাসনা করি,” একজন ধর্মীয় লেখক বলেন।

পর্নোগ্রাফি কলুষিত করে

বাইবেল পরামর্শ দেয়, “যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ . . . সেই সকল আলোচনা কর।” (ফিলিপীয় ৪:৮) যে-ব্যক্তি তার চোখ ও মনকে পর্নোগ্রাফির দ্বারা পূর্ণ করে, সে পৌলের পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করে। এটা অশালীন কারণ এটা নির্লজ্জভাবে সবচেয়ে অন্তরঙ্গ ও একান্ত বিষয়গুলো লোকেদের চোখের সামনে তুলে ধরে। এটা ঘৃণার্হ কারণ এটা লোকেদের নিকৃষ্ট এবং অমানুষে পরিণত করে। এটা নিষ্ঠুর কারণ এটা কোমলতা বা বিবেচনা কিছুই দেখায় না। এটা কেবল স্বার্থপর কামলালসাকেই বাড়ায়।

অনৈতিক ও কামলালসাপূর্ণ কাজকে অবাধে তুলে ধরে পর্নোগ্রাফি একজন খ্রীষ্টানের ‘মন্দকে ঘৃণা করিবার’ প্রচেষ্টা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাকে দুর্বল বা বিকৃত করে দেয়। (আমোষ ৫:১৫) এটা পাপপূর্ণ অভ্যাসকে তুলে ধরে এবং ইফিষীয়দের প্রতি পৌলের এই উৎসাহের একেবারে বিপরীত, “বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত। আর কুৎসিত ব্যবহার . . . কিম্বা শ্লেষোক্তি, এই সকল অনুচিত ব্যবহার যেন না হয়।”—ইফিষীয় ৫:৩, ৪.

পর্নোগ্রাফিতে কোন উপকারই নেই। এটা স্বীয় স্বার্থ সাধন করে এবং কলুষিত করে। এটা সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে, যৌন সম্পর্কের অন্তরঙ্গতার স্বাভাবিক প্রকাশকে বিকৃত করে দিয়ে অন্যের যৌনাঙ্গ ও যৌনক্রিয়া গোপনে দেখে আনন্দ পাওয়ার বিষয়কে আলোকিত করে। এটা এইধরনের ব্যক্তির মন ও আধ্যাত্মিকতাকে একেবারে নষ্ট করে ফেলে। এটা স্বার্থপর, লোভী মনোভাবকে বাড়িয়ে তোলে এবং অপরকে কেবল তাদের কামলালসা মেটানোর সামগ্রী হিসেবে দেখতে শেখায়। এটা ভাল কাজ করার এবং শুদ্ধ বিবেক গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা ঈশ্বরের সঙ্গে একজনের আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে ধ্বংস করে দিতে পারে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) সত্যিই, পর্নোগ্রাফি হল এমন এক মহামারী, যা এড়িয়ে চলা উচিত।—হিতোপদেশ ৪:১৪, ১৫.(g০২ ৭/৮)

[পাদটীকা]

^ পৌল এখানে সেই স্বাভাবিক যৌন আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলছিলেন না—একজনের বিবাহ সাথির প্রতি যৌন বিষয়ে যে-স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতার আকাঙ্ক্ষা থাকে।

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

পর্নোগ্রাফি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একজনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃত করে দেয়