সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জাদুবিদ্যা—আপনি এ সম্বন্ধে কী জানেন?

জাদুবিদ্যা—আপনি এ সম্বন্ধে কী জানেন?

জাদুবিদ্যা—আপনি এ সম্বন্ধে কী জানেন?

 জাদুবিদ্যা! এই কথাটা শুনেই আপনার মনে কোন্‌ ছবি ভেসে ওঠে?

অনেক দেশে জাদুবিদ্যা কথাটা শুনেই লোকেদের মনে এইরকম একটা ছবি ভেসে ওঠে যে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো কাপড় পরা, দেখতে কুৎসিত এক বুড়ি যে ইচ্ছে হলেই জাদু করে লোকেদের ব্যাঙ বানিয়ে দিতে পারে। আর ঝাটা হাতে রাতের বেলায় জোরে জোরে হাসতে হাসতে আকাশে উড়ে বেড়ায়। আবার অনেক লোকেদের কাছে জাদুবিদ্যা মানে কুসংস্কার ও উদ্ভট কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়, এটাকে তারা প্রায়ই হেসে উড়িয়ে দেয়।

কিন্তু, পৃথিবীতে এমন অনেক লোকেরাও আছে যাদের কাছে জাদুবিদ্যা হাসির ব্যাপার নয়। এই বিষয়ে যারা পড়াশোনা করেন তারা বলেন, পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি লোকেরা বিশ্বাস করে যে জাদুকরি বা ডাইনিরা সত্যিই আছে আর তারা চাইলেই জাদু করে লোকেদের ক্ষতি করতে পারে। আবার অনেকে বিশ্বাস করে যে ওঝা, ডাইনি ও যারা জাদুমন্ত্র করে তারা খুবই খারাপ এবং বিপদজনক, তাই তাদের হাত থেকে সবসময় নিজেকে বাঁচিয়ে চলা দরকার। আফ্রিকার ধর্ম সম্বন্ধে একটা বই বলে: “জাদু ও তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস আফ্রিকার জনজীবনের একেবারে গভীরে গেঁথে রয়েছে। আর তারা বিশ্বাস করে যে এটা খুবই বিপদজনক। . . . তারা ডাইনি ও ওঝাদের খুব খারাপ চোখে দেখে। আর আজও পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে ডাইনি বলে লোকেদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।”

কিন্তু, আজকে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে এর একেবারে উলটোটা দেখা যায়। সিনেমা, টেলিভিশন আর বইপত্রে জাদুকরিদের এমনভাবে দেখানো হয় যে লোকেরা আর তাদের বা তন্ত্রমন্ত্র করাকে ভয় পায় না, এটা তাদের কাছে খুবই সাধারণ ব্যাপার। সিনেমা সমালোচক ডেভিড ডেভিস বলেন: “এখানে জাদুকরিদের যুবতী, সুন্দরী এমনকি রূপবতী বলে দেখানো হয়। জগতের রঙ বদলকে পর্দায় তুলে ধরতে হলিউডের জুরি নেই। জাদুকরিদের এখন লোকেরা খুব পছন্দ করে, এমনকি মহিলা ও ছোট বাচ্চারাও কারণ তারা এখন খুবই সুন্দরী ও রূপবতী।” হলিউড জানে যে কী করে চলতি হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করে নেওয়া যায়।

কেউ কেউ বলেন যে আমেরিকায় এখন জাদুবিদ্যা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। আর পৃথিবীর অন্য ধনী দেশগুলোতেও অনেক লোকেরা তাদের ধর্ম ছেড়ে দিয়ে জাদুবিদ্যার দিকে ঝুঁকছে। আর আজকে যেহেতু মহিলারা আরও বেশি স্বাধীন হয়েছে, তাই তারাও আরও বেশি করে জাদুবিদ্যা শিখছে। আসলে, আজকে অনেক রকমের জাদুবিদ্যা দেখা যায়। তবে পশ্চিমের দেশগুলোতে আজ যে জাদুবিদ্যা অভ্যাস করা হয়, তা সেই একই জাদুবিদ্যা যা খ্রীষ্টধর্ম আসার অনেক আগে পূর্ব ইউরোপে অভ্যাস করা হতো।

আগেকার দিনে আর এখনও যারা জাদুবিদ্যা অভ্যাস করে এমন অনেককে ডাইনি বলে মেরে ফেলা হয়েছে। আর এইজন্যই আজকে যারা জাদু ও তন্ত্রমন্ত্র করে তারা লোকেদের চোখে ভাল হওয়ার চেষ্টা করে। পাশ্চাত্য দেশগুলোতে করা এক সমীক্ষায় কিছু জাদুকরিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তারা লোকেদেরকে কী বলতে চান। গবেষক মার্গো এডলার তাদের উত্তরকে অল্প কথায় এভাবে বলেন: “আমরা খারাপ নই। আমরা শয়তানের উপাসনা করি না। আমরা কারোর ক্ষতি করতে বা কাউকে ভোলাতে চাই না। আমরা লোকেদের জন্য একেবারেই বিপদজনক নই। আমরা আপনাদের মতোই সাধারণ মানুষ। আপনাদের মতো আমাদেরও পরিবার আছে, আমরাও চাকরি করে খাই, আমাদেরও আশা আছে, আমরাও স্বপ্ন দেখি। আমরা আলাদা কোন দল নই। আমরা কাউকে জাদু করি না। . . . আমাদেরকে ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। . . . আমরা আপনাদেরই মতো।”

আজ তাদের এই কথাকে বেশির ভাগ লোকেরাই মেনে নেন। কিন্তু, এর মানে কি এই যে যারা জাদু ও তন্ত্রমন্ত্র করে তাদের থেকে আমাদের সাবধান থাকার দরকার নেই? আসুন এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পরের প্রবন্ধে দেখি।