পরমদেশ—আপনার জন্য?
পরমদেশ—আপনার জন্য?
“আমি খ্রীষ্টের আশ্রিত এক ব্যক্তিকে জানি, . . . সে পরমদেশে নীত।”—২ করিন্থীয় ১২:২-৪.
১. বাইবেলের কোন প্রতিজ্ঞাগুলোকে অনেকে হৃদয়গ্রাহী বলে মনে করে?
পরমদেশ। পার্থিব পরমদেশের বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে আপনি প্রথম যখন শুনেছিলেন, তখন আপনার কেমন লেগেছিল, তা কি আপনি মনে করতে পারেন? আপনি হয়তো স্মরণ করতে পারেন যে আপনি শিখেছিলেন, ‘অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে এবং প্রান্তর’ প্রচুর সৌন্দর্যে “উৎসারিত হইবে।” কিংবা নেকড়ের সঙ্গে মেষশাবকের ও চিতাবাঘের সঙ্গে ছাগলছানার একসঙ্গে থাকার ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? আপনি কি এই বিষয়টা পড়ে রোমাঞ্চিত হননি যে, মৃত প্রিয়জনেরা সেই পরমদেশে বাস করার আশা নিয়ে জীবন ফিরে পাবে?—যিশাইয় ১১:৬; ৩৫:৫, ৬; যোহন ৫:২৮, ২৯.
২, ৩. (ক) কেন বলা যেতে পারে যে, আপনার বাইবেলভিত্তিক আশা ভিত্তিহীন নয়? (খ) আশা রাখার আরও কোন ভিত্তি আমাদের রয়েছে?
২ আপনার আশা ভিত্তিহীন নয়। সেই পরমদেশের বিষয়ে বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলোতে বিশ্বাস করার কারণ আপনার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিদ্ধ দুষ্কর্মকারীর প্রতি বলা যিশুর কথাগুলোতে আপনার আস্থা রয়েছে: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।” (লূক ২৩:৪৩) আপনি এই প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করেন: “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” এ ছাড়া, আপনি এই প্রতিজ্ঞার ওপরও নির্ভর করেন যে, ঈশ্বর আমাদের নেত্রজল মুছে দেবেন; মৃত্যু আর হবে না; শোক, আর্তনাদ এবং ব্যথাও শেষ হয়ে যাবে। এর অর্থ হল যে, এক পার্থিব পরমদেশ আবারও আসবে!—২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
৩ তবে, পরমদেশের এই আশার আরেকটা ভিত্তি হল এমন কিছু, সারা পৃথিবীর খ্রিস্টানরা এখনই যেটার অংশ। সেটা কী? ঈশ্বর এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ তৈরি করেছেন এবং তাঁর লোকেদের সেটার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। “আধ্যাত্মিক পরমদেশ” অভিব্যক্তিটা হয়তো তাত্ত্বিক, দুর্বোধ্য বলে মনে হতে পারে কিন্তু এইরকম পরমদেশের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং আসলেই এটা রয়েছে।
পরমদেশ বিষয়ক এক দর্শন
৪. দ্বিতীয় করিন্থীয় ১২:২-৪ পদ কোন দর্শনের বিষয়ে উল্লেখ করে এবং সম্ভবত কে এই দর্শন পেয়েছিলেন?
৪ এই বিষয়ে প্রেরিত পৌল কী লিখেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “আমি খ্রীষ্টের আশ্রিত এক ব্যক্তিকে জানি, . . . এমন ব্যক্তি তৃতীয় স্বর্গ পর্য্যন্ত নীত হইয়াছিল। আর এমন ব্যক্তির বিষয়ে আমি জানি—সশরীরে কি অশরীরে, তাহা আমি জানি না, ঈশ্বর জানেন—সে পরমদেশে নীত হইয়া অকথনীয় কথা শুনিয়াছিল, তাহা বলা মনুষ্যের বিধেয় নয়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (২ করিন্থীয় ১২:২-৪) এই বাক্যাংশ ঠিক সেই পদগুলোর পরেই রয়েছে, যেখানে পৌল তার প্রেরিতপদের পক্ষসমর্থন করেছিলেন। অধিকন্তু, বাইবেল অন্য আর এমন কোনো ব্যক্তি সম্বন্ধে বলে না, যার এইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর পৌলই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি আমাদের এই বিষয়ে বলেন। তাই, সম্ভবত প্রেরিত পৌলই এই দর্শন পেয়েছিলেন। এই অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতায়, কোন “পরমদেশে” তিনি প্রবেশ করেছিলেন?—২ করিন্থীয় ১১:৫, ২৩-৩১.
৫. পৌল কোন বিষয়টা দেখেননি আর তা হলে সেটা কোন ধরনের “পরমদেশ” ছিল?
৫ এই প্রসঙ্গ বলে না যে, “তৃতীয় স্বর্গ” দিয়ে আমাদের ভূগোলকের চারপাশের বায়ুমণ্ডল অথবা বহিঃস্থ মহাশূন্য বা অন্য কোনো নিখিলবিশ্বকে বোঝায়, যেমনটা নভোবস্তুবিদরা অনুমান করে থাকে। বাইবেল প্রায়ই গুরুত্ব, প্রবলতা এবং অতিরিক্ত শক্তিকে তুলে ধরার জন্য তিন সংখ্যাকে ব্যবহার করে থাকে। (উপদেশক ৪:১২; যিশাইয় ৬:৩; মথি ২৬:৩৪, ৭৫; প্রকাশিত বাক্য ৪:৮) তাই, পৌল দর্শনে যা দেখেছিলেন, তা অনেক উন্নত অথবা উচ্চীকৃত ছিল। এটা ছিল আধ্যাত্মিক।
৬. কোন ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো পৌল যা দেখেছিলেন, সেই বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি দেয়?
৬ বাইবেলের পূর্ববর্তী ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দেয়। ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেরা তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হওয়ায় তিনি যিহূদা এবং যিরূশালেমের বিরুদ্ধে বাবিলীয়দের আসতে দেওয়ার বিষয়টা স্থির করেছিলেন। বাইবেলের কালনিরূপণবিদ্যা অনুসারে, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে ধ্বংসের মাধ্যমে তা চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছায়। ভবিষ্যদ্বাণী বলেছিল যে, সেই দেশ ৭০ বছর ধরে ধ্বংসিত বা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকবে; এরপর ঈশ্বর অনুতপ্ত যিহুদিদের ফিরে আসতে এবং সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপিত করতে অনুমতি দেবেন। এটা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১৫, ৬২-৬৮; ২ রাজাবলি ২১:১০-১৫; ২৪:১২-১৬; ২৫:১-৪; যিরমিয় ২৯:১০-১৪) কিন্তু, সেই দেশের বিষয়ে কী বলা যায়? সেই ৭০ বছরে, সেটা বুনো গাছপালা, শুষ্ক এলাকা এবং শিয়ালদের আবাসস্থান হয়ে উঠেছিল। (যিরমিয় ৪:২৬; ১০:২২) তা সত্ত্বেও, এই প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল: “সদাপ্রভু সিয়োনকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, তিনি তাহার সমস্ত উৎসন্ন স্থানকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, এবং তাহার প্রান্তরকে এদনের ন্যায়, ও তাহার শুষ্ক ভূমিকে সদাপ্রভুর উদ্যানের [অথবা পরমদেশের, সেপ্টুয়াজিন্ট, পাদটীকা, NW] ন্যায় করিয়াছেন।”—যিশাইয় ৫১:৩.
৭. সত্তর বছর জনশূন্য অবস্থার পরে কী ঘটার কথা ছিল?
৭ এটা ৭০ বছর পরে ঘটেছিল। ঈশ্বরের আশীর্বাদে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। আপনার মনের চোখ দিয়ে এটা দেখুন: “প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে। সে পুষ্পবাহুল্যে উৎফুল্ল হইবে, আর আনন্দ ও গান সহকারে উল্লাস করিবে; . . . খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে; কেননা প্রান্তরে জল উৎসারিত হইবে, ও মরুভূমির নানা স্থানে প্রবাহ হইবে। আর মরীচিকা জলাশয় হইয়া যাইবে, ও শুষ্কভূমি জলের উনুইতে পরিপূর্ণ হইবে; শৃগালদিগের নিবাসে, সেগুলি যেখানে শুইত, তথায় নল খাগ্ড়ার বন হইবে।”—যিশাইয় ৩৫:১-৭.
লোকেরা পুনর্স্থাপিত এবং পরিবর্তিত হয়
৮. কীভাবে আমরা জানি যে, যিশাইয় ৩৫ অধ্যায় লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য ছিল?
৮ কী এক পরিবর্তন! জনশূন্য অবস্থা থেকে পরমদেশ। তবে, এটি এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী দেখিয়েছিল যে, লোকেদের মধ্যেও পরিবর্তন ঘটবে, যেটাকে জনশূন্য ভূমিকে ফলবতী হওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়। কেন আমরা তা বলতে পারি? আসলে যিশাইয় ‘সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেদের’ ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছিলেন, যারা তাদের দেশে “আনন্দগান” সহকারে ফিরে আসবে এবং “আমোদ ও আনন্দ” লাভ করবে। (যিশাইয় ৩৫:১০) সেটা আক্ষরিক ভূমির প্রতি নয় কিন্তু লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য ছিল। অধিকন্তু, যিশাইয় অন্যান্য জায়গায় সিয়োনে পুনর্স্থাপিত লোকেদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তাহারা ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষ ও সদাপ্রভুর রোপিত . . . উদ্যান বলিয়া আখ্যাত হইবে। বস্তুতঃ ভূমি যেমন আপন অঙ্কুর নির্গত করে, . . . তেমনি প্রভু সদাপ্রভু সমুদয় জাতির সাক্ষাতে ধার্ম্মিকতা ও প্রশংসা অঙ্কুরিত করিবেন।” ঈশ্বরের লোকেদের সম্বন্ধে যিশাইয় আরও বলেছিলেন: “সদাপ্রভু নিয়ত তোমাকে পথ প্রদর্শন করিবেন, . . . ও তোমার অস্থি সকল বলবান্ করিবেন, তাহাতে তুমি জলসিক্ত উদ্যানের ন্যায় হইবে।” (যিশাইয় ৫৮:১১; ৬১:৩, ১১; যিরমিয় ৩১:১০-১২) তাই, আক্ষরিক ভূমির পারিপার্শ্বিক অবস্থার যেমন উন্নতি হবে, ঠিক তেমনই পুনর্স্থাপিত যিহুদিদের মধ্যেও পরিবর্তন হবে।
৯. পৌল কোন ‘পরমদেশ’ দেখেছিলেন এবং তা কখন পরিপূর্ণ হয়েছিল?
৯ এই ঐতিহাসিক নমুনা, পৌল দর্শনে যা দেখেছিলেন, সেটা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে। এটা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে অন্তর্ভুক্ত করবে, যেটিকে তিনি “ঈশ্বরেরই ক্ষেত্র” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন এবং যেটির ফলবান হওয়া উচিত। (১ করিন্থীয় ৩:৯) সেই দর্শন কখন পরিপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল? পৌল যা দেখেছিলেন, সেটাকে তিনি ‘প্রত্যাদেশ’ বলেছিলেন, এমন কিছু যা ভবিষ্যতে ঘটবে। তিনি জানতেন যে, তার মৃত্যুর পর এক ব্যাপক ধর্মভ্রষ্টতা বৃদ্ধি পাবে। (২ করিন্থীয় ১২:১; প্রেরিত ২০:২৯, ৩০; ২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৭) যখন ধর্মভ্রষ্টতা প্রবল হয়েছিল এবং তাদের চেপে রেখেছিল বলে মনে হয়েছিল, তখন সত্য খ্রিস্টানদের কখনোই ফলবান উদ্যানের সঙ্গে তুলনা করা যেত না। কিন্তু, এমন সময় আসবে যখন সত্য উপাসনা আবারও উচ্চীকৃত হবে। ঈশ্বরের লোকেরা পুনর্স্থাপিত হবে, যাতে ‘ধার্ম্মিকেরা আপনাদের পিতার রাজ্যে সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইতে পারে।’ (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) সেটা আসলে স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছর পরে হয়েছিল। আর কয়েক দশক পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, ঈশ্বরের লোকেরা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করে, যা পৌল সেই দর্শনে পূর্বেই দেখেছিলেন।
১০, ১১. কেন আমরা বলতে পারি যে, অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আমরা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশের মধ্যে রয়েছি?
১০ তবে এটা ঠিক, আমরা জানি যে আমরা সবাই অসিদ্ধ আর তাই মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিলে আমরা অবাক হই না, যা এমনকি পৌলের দিনের খ্রিস্টানদের মধ্যেও দেখা দিত। (১ করিন্থীয় ১:১০-১৩; ফিলিপীয় ৪:২, ৩; ২ থিষলনীকীয় ৩:৬-১৪) যাই হোক, এখন আমরা যে-আধ্যাত্মিক পরমদেশ উপভোগ করছি, সেটার বিষয়ে চিন্তা করুন। একসময় আমরা যে-খারাপ অবস্থায় ছিলাম, সেটার সঙ্গে তুলনা করলে আমরা এখন আধ্যাত্মিকভাবে আরোগ্য লাভ করেছি। আর আমাদের বর্তমানের আধ্যাত্মিকভাবে পরিপুষ্ট অবস্থার সঙ্গে আমাদের পূর্বের দুর্ভিক্ষের তুলনা করুন। অনুর্বর আধ্যাত্মিক ভূমির মতো সংগ্রাম করার পরিবর্তে ঈশ্বরের লোকেদের তাঁর অনুমোদন রয়েছে এবং তারা প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করছে। (যিশাইয় ৩৫:১, ৭) কারাকূপের ন্যায় আধ্যাত্মিক অন্ধকারের মধ্যে অন্ধ অবস্থায় থাকার পরিবর্তে আমরা স্বাধীনতা এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহের আলো দেখতে পারছি। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী কখনও শুনতে পায়নি এমন অনেক ব্যক্তি শাস্ত্র যা বলে, তা বোধগম্যতা সহকারে শুনতে পারছে। (যিশাইয় ৩৫:৫) উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দানিয়েল এবং যিশাইয় বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছে। সেই সতেজতাদায়ক আধ্যাত্মিক খাদ্য কি আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশের প্রমাণ দেয় না?
১১ এ ছাড়া, সমস্ত পটভূমির অকপট লোকেদের ঈশ্বরের বাক্য বোঝার এবং তা কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা করার সময় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে-পরিবর্তনগুলো ঘটে, সেটাও ভেবে দেখুন। মূলত, আগে যে-পাশবিক বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে স্পষ্ট ছিল, সেগুলো দূর করার জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে। সম্ভবত আপনি তা করে লক্ষণীয় ফলাফল দেখেছেন আর আপনার আধ্যাত্মিক ভাইবোনেরাও ঠিক তা-ই করেছে। (কলসীয় ৩:৮-১৪) তাই, আপনি যখন যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করেন, তখন আপনি সেই লোকেদের সঙ্গে থাকেন, যারা আরও শান্তিপ্রিয় এবং প্রশান্ত হয়েছে। না, তারা এখনও সিদ্ধ নয় কিন্তু তাদেরকে কখনোই হিংস্র সিংহ অথবা গ্রাসকারী বন্যপশু হিসেবে বর্ণনা করা যায় না। (যিশাইয় ৩৫:৯) এই প্রশান্তিকর আধ্যাত্মিক সাহচর্য কোন বিষয়টা ইঙ্গিত করে? স্পষ্টতই, আমরা এক আধ্যাত্মিক অবস্থা উপভোগ করি, যেটাকে উপযুক্তভাবেই আমরা এক আধ্যাত্মিক পরমদেশ বলে থাকি। আর আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশ এক পার্থিব পরমদেশের পূর্বাভাস দেয়, যা আমরা ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকলে উপভোগ করব।
১২, ১৩. আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকতে হলে আমাদের কী করতে হবে?
১২ এখনও, এমন একটা বিষয় রয়েছে যা আমরা উপেক্ষা করব না। ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, সেই সমস্ত আজ্ঞা পালন করিও, যেন তোমরা বলবান্ হও, এবং যে দেশ অধিকার করিবার জন্য পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার কর।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১১:৮) লেবীয় পুস্তক ২০:২২, ২৪ পদে সেই একই দেশের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল: “তোমরা আমার সমস্ত বিধি ও আমার সমস্ত শাসন মান্য করিও, পালন করিও; যেন আমি তোমাদের বাসার্থে তোমাদিগকে যে দেশে লইয়া যাইতেছি, সেই দেশ তোমাদিগকে উদ্গীরণ না করে। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, তোমরাই তাহাদের দেশ অধিকার করিবে, আমি তোমাদিগকে অধিকারার্থে সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ দিব।” হ্যাঁ, প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিকারী হওয়া, যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে উত্তম সম্পর্কের ওপর নির্ভর করত। ইস্রায়েলীয়রা তাঁর বাধ্য থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেই, ঈশ্বর বাবিলীয়দের তাদেরকে পরাজিত করতে এবং তাদের আবাসস্থান থেকে দূর করতে অনুমতি দিয়েছিলেন।
১৩ আমরা হয়তো আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশ নিয়ে অত্যন্ত আনন্দিত থাকতে পারি। এটার পরিবেশ আনন্দদায়ক এবং মনে প্রশান্তি এনে দেয়। সেই খ্রিস্টানদের সঙ্গে আমাদের শান্তি রয়েছে, যারা পাশবিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করেছে। তারা সদয় এবং সাহায্যকারী হওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তা সত্ত্বেও, আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকতে হলে এই লোকেদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক রাখার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। এটার জন্য যিহোবার সঙ্গে আমাদের উত্তম সম্পর্ক রাখা এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করা প্রয়োজন। (মীখা ৬:৮) আমরা স্বেচ্ছায় এই আধ্যাত্মিক পরমদেশে এসেছিলাম কিন্তু আমরা ভেসে চলে যেতে—অথবা বহিষ্কৃত হতে—পারি, যদি আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চেষ্টা না করি।
১৪. কী আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশে থাকার ক্ষেত্রে এক সহায়ক হবে?
১৪ যে-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আমাদের সাহায্য করবে সেটা হল, ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত শক্তিশালী হব। গীতসংহিতা ১:১-৩ পদের রূপক কথাগুলো লক্ষ করুন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, . . . কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।” এ ছাড়া, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি আধ্যাত্মিক পরমদেশে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগায়।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
পরমদেশের বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনরুজ্জীবিত করা
১৫. কেন মোশি ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিতে সমর্থ হননি কিন্তু তিনি কী দেখেছিলেন?
১৫ পরমদেশের আরেকটা পূর্বাভাস বিবেচনা করুন। ইস্রায়েল ৪০ বছর প্রান্তরে ঘোরাঘুরি করার পর, মোশি তাদের যর্দ্দন নদীর পূর্বপারে মোয়াব তলভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মোশির অতীতের এক ভুলের জন্য যিহোবা স্থির করেছিলেন যে, মোশি ইস্রায়েলকে যর্দ্দন নদী পার হতে নেতৃত্ব দেবেন না। (গণনাপুস্তক ২০:৭-১২; ২৭:১২, ১৩) ঈশ্বরের কাছে মোশি অনুরোধ করেছিলেন: “বিনয় করি, আমাকে ওপারে গিয়া যর্দ্দনপারস্থ সেই উত্তম দেশ, . . . দেখিতে দেও।” যদিও মোশি সেই দেশে প্রবেশ করেননি, তবুও পিস্গা পর্বতে আরোহণ করার এবং সেই দেশের বিভিন্ন অংশ দেখার পরে তিনি অবশ্যই বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেটা ছিল এক “উত্তম দেশ।” সেই দেশটা কেমন ছিল বলে আপনি মনে করেন?—দ্বিতীয় বিবরণ ৩:২৫-২৭.
১৬, ১৭. (ক) প্রাচীনকালের প্রতিজ্ঞাত দেশ কীভাবে অতি সাম্প্রতিক সময়ের দেশ থেকে আলাদা ছিল? (খ) কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, প্রতিজ্ঞাত দেশ একসময় এক পরমদেশের মতো ছিল?
১৬ আপনি আপনার অভিমত যদি সাম্প্রতিক সময়ে সেই অঞ্চলটা দেখতে যেমন, সেটার ওপর ভিত্তি করে দেন, তা হলে আপনি হয়তো বালিময়, পাথুরে মরুভূমি এবং প্রচণ্ড শুষ্ক এক অনুর্বর ভূমির কথা চিন্তা করবেন। কিন্তু, বাইবেলের সময়ে এই সম্পূর্ণ অঞ্চল যে একেবারে ভিন্ন ছিল, তা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে। সায়েন্টিফিক আ্যমেরিকান পত্রিকায় জল ও মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ, ড. ওয়ালটার সি. লুডারমিল্ক ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, সেই অঞ্চলের ভূমি “হাজার বছর ধরে অপব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়েছে।” এই কৃষিবিদ লিখেছিলেন: “এই ‘মরুভূমি’ যা একসময়কার উর্বর ভূমির জায়গা দখল করেছে, তা মানুষের কাজ, প্রকৃতির নয়।” সত্যি বলতে কী, তার গবেষণাগুলো ইঙ্গিত করেছিল যে, “এই দেশ একসময় চারণভূমিতুল্য পরমদেশ ছিল।” অতএব, এটা স্পষ্ট যে, মানুষের অপব্যবহার, একসময়কার ‘চারণভূমিতুল্য পরমদেশকে’ নষ্ট করে দিয়েছে। *
১৭ বাইবেল থেকে আপনি যা পড়েছেন, তা নিয়ে চিন্তা করলে আপনি হয়তো দেখবেন যে, এই উপসংহারে আসা কত যুক্তিযুক্ত। মোশির মাধ্যমে যিহোবা লোকেদের কোন আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করে দেখুন: “তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে পার হইয়া যাইতেছ, সে পর্ব্বত ও উপত্যকা-বিশিষ্ট দেশ, এবং আকাশের বৃষ্টির জল পান করে; সেই দেশের প্রতি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোযোগ আছে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ১১:৮-১২.
১৮. প্রতিজ্ঞাত দেশটা কেমন হবে, সেই বিষয়ে যিশাইয় ৩৫:২ পদ কীভাবে নির্বাসিত ইস্রায়েলীয়দের একটা ধারণা দিয়েছিল?
১৮ প্রতিজ্ঞাত দেশের চিরসবুজ সৌন্দর্য এবং ফলবান অবস্থা এমনই ছিল যে, কেবল কয়েকটা নির্দিষ্ট স্থানের বিষয়ে উল্লেখ করলেই তা পরমদেশতুল্য পরিস্থিতি সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিত। এই বিষয়টা যিশাইয় ৩৫ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে স্পষ্ট, যা ইস্রায়েলীয়রা যখন বাবিল থেকে ফিরে এসেছিল, তখন প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল। যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সে পুষ্পবাহুল্যে উৎফুল্ল হইবে, আর আনন্দ ও গান সহকারে উল্লাস করিবে; তাহাকে দত্ত হইবে লিবানোনের প্রতাপ, কর্মিলের ও শারোণের শোভা; তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা।” (যিশাইয় ৩৫:২) লিবানোন, কর্মিল এবং শারোণের বিষয়ে উল্লেখ অবশ্যই ইস্রায়েলীয়দের মনে এক পরিতৃপ্তিদায়ক এবং মনোরম প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিল।
১৯, ২০. (ক) প্রাচীন শারোণ এলাকা সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। (খ) পরমদেশের প্রতি আমাদের আশাকে শক্তিশালী করার একটা উপায় কী?
১৯ শমরিয়ার বিভিন্ন পাহাড় এবং মহাসমুদ্র বা ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী সমুদ্রোপকূলে অবস্থিত এক সমভূমি, শারোণের বিষয়ে বিবেচনা করুন। (১০ পৃষ্ঠার চিত্র দেখুন।) এটা শ্যামল সৌন্দর্য ও উৎপাদনশীলতার জন্য সুপরিচিত ছিল। জলের সুব্যবস্থা থাকায় এটা পশুপাল চরানোর জন্য উত্তম ছিল কিন্তু সেখানে উত্তর দিকে বড় বড় ওক বৃক্ষের বন ছিল। (১ বংশাবলি ২৭:২৯; পরমগীত ২:১; যিশাইয় ৬৫:১০) তাই, যিশাইয় ৩৫:২ পদ এমন এক পুনর্স্থাপন এবং শোভাময় দেশ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করছিল, যা পরমদেশের মতো হয়ে উঠবে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী পরবর্তী সময়ে পৌল দর্শনে যা দেখেছিলেন, সেটার সঙ্গে মিল রেখে এক আনন্দদায়ক আধ্যাত্মিক পরমদেশের প্রতি নির্দেশ করছিল। অবশেষে, এই ভবিষ্যদ্বাণী ও সেইসঙ্গে অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণী মানবজাতির জন্য এক পার্থিব পরমদেশের বিষয়ে আমাদের আশাকে শক্তিশালী করে।
২০ আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করার সময়, আমরা এটির প্রতি আমাদের উপলব্ধি এবং পৃথিবীতে পরমদেশের প্রতি আমাদের আশাকে শক্তিশালী করতে পারি। কীভাবে? বাইবেলে আমরা যা পড়ি সেটির প্রতি আমাদের বোধগম্যতাকে গভীর করে। বাইবেলের বর্ণনা এবং ভবিষ্যদ্বাণীগুলো প্রায়ই নির্দিষ্ট স্থানের বিষয়ে উল্লেখ করে। এগুলো কোথায় ছিল এবং অন্যান্য ভৌগলিক অংশগুলোর সঙ্গে এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক কী ছিল, তা কি আপনি আরও ভালভাবে বুঝতে চান? পরের প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, আপনি কীভাবে উপকৃত হতে পারেন।
[পাদটীকা]
^ বাইবেলের ভূগোলবিদ্যা (ইংরেজি) বইয়ে ডেনিস বালি বলেন: “বাইবেলের সময় থেকে উদ্ভিদের নমুনার প্রকৃতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে।” এর কারণ? “জ্বালানি এবং নির্মাণ, উভয় কাজের জন্যই মানুষের কাঠের দরকার ছিল আর তাই . . . সে গাছপালা কাটতে শুরু করেছিল এবং এভাবে ভূমিকে আবহাওয়ার প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। পরিবেশের মধ্যে এই হস্তক্ষেপের ফল হয়েছিল যে, জলবায়ু . . . ধীরে ধীরে এর ধ্বংসের সবচেয়ে প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল।”
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
• দর্শনে প্রেরিত পৌল কোন ‘পরমদেশ’ দেখেছিলেন?
• যিশাইয় ৩৫ অধ্যায় সম্বন্ধে এর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা কী ছিল এবং এটা কীভাবে পৌল দর্শনে যা দেখেছিলেন সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
• কীভাবে আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক পরমদেশের প্রতি আমাদের উপলব্ধি এবং এক পার্থিব পরমদেশের প্রতি আমাদের আশাকে দৃঢ় করতে পারি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
শারোণ সমভূমি, প্রতিজ্ঞাত দেশে এক ফলবান এলাকা
[সৌজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
মোশি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা এক “উত্তম দেশ” ছিল