সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যোগ্য নেতার খোঁজে

যোগ্য নেতার খোঁজে

যোগ্য নেতার খোঁজে

“আপনাকে বলছি, পদত্যাগ করুন আর আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো কথা নেই। ঈশ্বরের নামে বলছি, চলে যান!”—অলিভার ক্রমওয়েল; ব্রিটিশ আইনসভার সদস্য, লিওপোল্ড আ্যমেরির দ্বারা উদ্ধৃত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আট মাস ধরে এর ধ্বংসলীলা চালিয়ে গিয়েছে আর বৃটেন ও এর মিত্র দেশগুলোর জন্য তা অনুকূলে ছিল না। লিওপোল্ড আ্যমেরি এবং সরকার পক্ষের অন্যান্য ব্যক্তিদের মতে একজন নতুন নেতার প্রয়োজন ছিল। তাই, ১৯৪০ সালের ৭ই মে, ইংল্যান্ডের লোকসভায় মিস্টার আ্যমেরি, প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিনের উদ্দেশে ওপরের কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন। তিন দিন পরে, মিস্টার চেম্বারলিন পদত্যাগ করেন এবং তার জায়গায় আসেন উইনস্টন চার্চিল।

 নেতৃত্ব হল মানুষের এক মৌলিক চাহিদা, তাই বলে যেকোনো নেতা হলেই চলবে না। এমনকি একটা পরিবারের মধ্যেও, বাবা যদি চান যে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা সুখী হোক, তা হলে তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য হতে হবে। তা হলে কল্পনা করে দেখুন যে, একজন জাতীয় নেতা অথবা বিশ্বনেতা হওয়ার জন্য আরও কত বেশি যোগ্যতার প্রয়োজন! তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যোগ্য নেতাদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ফলে, হাজার হাজার বছর ধরে অগণিত রাজ্যাভিষেক, বিপ্লব, অভ্যুত্থান, নিয়োগ, নির্বাচন, গুপ্তহত্যা এবং শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। রাজা, প্রধানমন্ত্রী, যুবরাজ, রাষ্ট্রপতি, মহাসচিব এবং স্বৈরাচারী ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনগুলো এমনকি প্রভাবশালী শাসকদেরও অপসারণ করেছে। (৫ পৃষ্ঠার “আকস্মিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত” নামক বাক্সটা দেখুন।) তা সত্ত্বেও, যোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী নেতৃত্ব পাওয়া কঠিন প্রমাণিত হয়েছে।

“তবুও আমাদের মেনে নিতে হবে”—নাকি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে?

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, উত্তম নেতা খোঁজ করার ক্ষেত্রে অনেকে আশা হারিয়ে ফেলেছে। কিছু দেশে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে লোকেদের মধ্যে এই উদাসীন মনোভাব এবং হতাশা স্পষ্ট দেখা যায়। আফ্রিকার একজন সাংবাদিক জেফ হিল মন্তব্য করেছিলেন: “লোকেরা যখন তাদের জীবনের দুঃখ দুর্দশা ঘোচাতে নিজেদের অক্ষম মনে করে, তখন উদাসীনতা অথবা [ভোট দেওয়া থেকে] বিরত থাকা খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে. . .। আফ্রিকাতে, লোকেরা যখন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে, তখন এর মানে সাধারণত এই নয় যে, তারা সন্তুষ্ট। বেশির ভাগ সময়ই, এটা সেই লোকেদের সাহায্য পাওয়ার এক আর্তনাদ, যারা মনে করে যে কেউই তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না।” একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রের একজন লেখক আসন্ন নির্বাচন সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “পুরোপুরি দক্ষ একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলে ভাল হতো।” তিনি আরও বলেছিলেন: “এইরকম কোনো প্রার্থীই নেই। কখনোই হয়নি। তবুও আমাদের মেনে নিতে হবে।”

বাস্তবিকপক্ষেই কি মানবজাতির এই অসিদ্ধ নেতাদের ‘মেনে নেওয়া’ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই? মনুষ্য নেতাদের তাদের প্রজাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে অসমর্থ হওয়াই কি প্রমাণ করে যে, আমরা কখনও উত্তম নেতা পাব না? না। সর্বোত্তম নেতা রয়েছে। পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে যে, মানবজাতির জন্য আদর্শ নেতা কে এবং কীভাবে তাঁর নেতৃত্ব সমস্ত পটভূমির লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে—সেইসঙ্গে আপনাকেও—উপকৃত করতে পারে।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ওপরে বাঁদিকে: নেভিল চেম্বারলিন

ওপরে ডান দিকে: লিওপোল্ড আ্যমেরি

নিচে: উইনস্টন চার্চিল

[সৌজন্যে]

চেম্বারলিন: Photo by Jimmy Sime/Central Press/Getty Images; আ্যমেরি: Photo by Kurt Hutton/Picture Post/Getty Images; চার্চিল: The Trustees of the Imperial War Museum (MH ২৬৩৯২)