পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
আদিপুস্তক ৬:৩ পদে আমরা পড়ি: “আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।” যিহোবা কি মানুষের আয়ুষ্কালকে ১২০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছিলেন এবং নোহ কি ততদিন ধরেই আসন্ন জলপ্লাবন সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন?
এই প্রশ্নের দুটো অংশের উত্তরই হল, না।
জলপ্লাবনের আগে, অনেক মানুষ শত শত বছর ধরে বেঁচে থাকত। যখন জলপ্লাবন এসেছিল, তখন নোহের বয়স ছিল ৬০০ বছর আর তিনি ৯৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। (আদি. ৭:৬; ৯:২৯) এ ছাড়া, জলপ্লাবনের পরে জন্মগ্রহণ করেছিল এমন কেউ কেউ ১২০ বছরেরও বেশি সময় বেঁচে ছিল। অর্ফক্ষদ ৪৩৮ বছর বয়সে ও শেলহ ৪৩৩ বছর বয়সে মারা গিয়েছিল। (আদি. ১১:১০-১৫) কিন্তু, মোশির সময়ে মানুষের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ৭০ বা ৮০ বছরে নেমে গিয়েছিল। (গীত. ৯০:১০) তাই, আদিপুস্তক ৬:৩ পদ ১২০ বছরকে মানুষের জন্য সর্বোচ্চ বা স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল হিসেবে নির্ধারণ করছিল না।
তাহলে, সেই পদের কথাগুলো কি ১২০ বছরের মধ্যে যে ধ্বংস আসতে যাচ্ছে, সেই বিষয়ে অন্যদের কাছে সর্তকবাণী ঘোষণা করার জন্য নোহের উদ্দেশে বলা কোনো ঐশিকবাণী ছিল? না। বেশ কয়েক বার ঈশ্বর নোহের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই বিবরণের দশ পদ পরে গিয়ে আমরা পড়ি: “ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত, কেননা তাহাদের দ্বারা পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইয়াছে।” পরের বছরগুলোতে নোহ জাহাজ নির্মাণের বিশাল কাজ সম্পন্ন করেছিলেন আর সেই সময়ে: “সদাপ্রভু নোহকে কহিলেন, তুমি সপরিবারে জাহাজে প্রবেশ কর, কেননা এই কালের লোকদের মধ্যে আমার সাক্ষাতে তোমাকেই ধার্ম্মিক দেখিয়াছি।” (আদি. ৬:১৩; ৭:১) আর এমন অন্যান্য ঘটনাও রয়েছে, যখন যিহোবা নোহকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন।—আদি. ৮:১৫; ৯:১, ৮, ১৭.
আদিপুস্তক ৬:৩ পদে আমরা যা পড়ি, সেটা ভিন্ন; এটি নোহ সম্বন্ধে উল্লেখ করে না কিংবা ঈশ্বর যে তার উদ্দেশে কথা বলেছিলেন, সেই সম্বন্ধেও বলে না। এটিকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অথবা দৃঢ়সংকল্পের এক সাধারণ অভিব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। (তুলনা করুন, আদিপুস্তক ৮:২১.) এটা লক্ষনীয় যে, আদমের সময়ের অনেক আগে যা ঘটেছিল, সেই সম্বন্ধে ঐতিহাসিক বিবরণে আমরা এই ধরনের অভিব্যক্তি খুঁজে পাই, যেমন: “ঈশ্বর কহিলেন।” (আদি. ১:৬, ৯, ১৪, ২০, ২৪) স্পষ্টতই, যিহোবা পৃথিবীর কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন না কারণ তখনও পর্যন্ত মানুষকে সৃষ্টি করা হয়নি।
কিন্তু,তাই, এই উপসংহারে আসা যুক্তিযুক্ত যে, আদিপুস্তক ৬:৩ পদ পৃথিবীর কলুষিত বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে ঈশ্বরের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ করে। যিহোবা ১২০ বছরের মধ্যে তা করার জন্য এক বিচার সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিলেন, যদিও সেই সম্বন্ধে তখনও নোহ জানতেন না। কিন্তু, কেন তিনি এক সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন? কেন বিলম্ব করেছিলেন?
প্রেরিত পিতর কারণগুলো জানান: “নোহের সময়ে, জাহাজ প্রস্তুত হইতে হইতে যখন ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা বিলম্ব করিতেছিল, তখন . . . সেই জাহাজে অল্প লোক, অর্থাৎ আটটী প্রাণ, জল দ্বারা [“জলের মধ্যে থেকে,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] রক্ষা পাইয়াছিল।” (১ পিতর ৩:২০) হ্যাঁ, ঈশ্বর যখন ১২০ বছর সময় সম্বন্ধে দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন, তখন কিছু বিষয় সম্পন্ন হওয়া বাকি ছিল। প্রায় ২০ বছর পর, নোহ ও তার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে শুরু করেছিল। (আদি. ৫:৩২; ৭:৬) তাদের তিন ছেলে বড়ো হয়েছিল, বিয়ে করেছিল আর এভাবে পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে “আটটী প্রাণ” হয়েছিল। এরপর তাদের জাহাজ নির্মাণ করতে হয়েছিল, যা দ্রুত শেষ করার মতো কোনো কাজ ছিল না আর সেটা সেই জাহাজের আকার ও নোহের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনা করে বোঝা যায়। হ্যাঁ, ১২০ বছর ধরে ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য সেই বিষয়গুলো সম্পন্ন করার সুযোগ দিয়েছিল এবং আট জন বিশ্বস্ত মানুষকে ‘জলের মধ্যে থেকে রক্ষা করিয়া’ জীবনের সংরক্ষণকে সম্ভবপর করে তুলেছিল।
কখন যিহোবা নোহকে জলপ্লাবন ঘটবে বলে জানিয়েছিলেন, সেই বছরটা সম্বন্ধে বাইবেল নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে না। যেহেতু তার ছেলেরা জন্মগ্রহণ করে বড়ো হয়ে গিয়েছিল ও বিয়ে করে ফেলেছিল, তাই সম্ভবত জলপ্লাবন আসার আগে ৪০ বা ৫০ বছর বাকি ছিল। এরপর যিহোবা নোহকে বলেছিলেন: “আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত।” সেইসঙ্গে তিনি নোহকে একটা বিশাল জাহাজ নির্মাণ করতে ও তার পরিবার নিয়ে সেটাতে প্রবেশ করতে বলেছিলেন। (আদি. ৬:১৩-১৮) বাকি দশকগুলোতে নোহ তার জীবনযাপনের মাধ্যমে ধার্মিকতার এক উদাহরণ স্থাপন করা ছাড়াও আরও বেশি কিছু সম্পাদন করেছিলেন। তিনি “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” হিসেবে সেবা করেছিলেন, যার কাছে ঘোষণা করার মতো খুবই সুস্পষ্ট এক সতর্কবাণী ছিল আর তা হল, সেই সময়ের ভক্তিহীন লোকেদের ওপর ধ্বংস আনার বিষয়ে ঈশ্বরের দৃঢ়সংকল্প। নোহ অনেক আগে থেকেই জানতেন না যে, কোন বছরে সেটা আসবে কিন্তু তিনি জানতেন যে, তা আসবেই। আর আপনারা জানেন যে, তা এসেছিল।—২ পিতর ২:৫.