ঈশ্বরের বাধ্য হোন এবং তাঁর শপথ করে বলা প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে উপকার লাভ করুন
ঈশ্বরের বাধ্য হোন এবং তাঁর শপথ করে বলা প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে উপকার লাভ করুন
“ঈশ্বর . . . মহত্তর কোন ব্যক্তির নামে শপথ করিতে না পারাতে আপনারই নামে শপথ করিলেন।”—ইব্রীয় ৬:১৩.
উত্তর দিতে পারেন কি না দেখুন:
কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো ব্যর্থ হবে না?
আদম ও হবা পাপ করার পর ঈশ্বর কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
অব্রাহামের কাছে শপথ করে বলা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করি?
১. যিহোবার বাক্য কীভাবে পাপী মানুষদের থেকে আলাদা?
যিহোবা হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীত. ৩১:৫) পাপী মানুষদের সবসময় বিশ্বাস করা যায় না, অন্যদিকে “মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।” (ইব্রীয় ৬:১৮; পড়ুন, গণনাপুস্তক ২৩:১৯.) মানবজাতির উপকারের জন্য তিনি যে-উদ্দেশ্যগুলো করেন, সেগুলো সবসময় পরিপূর্ণ হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটা সৃষ্টির সময়কালে ঈশ্বর যা করবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলোর সবই ‘সেইরূপ হইয়াছিল।’ তাই, ষষ্ঠ সৃষ্টি দিবসের শেষে “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।”—আদি. ১:৬, ৭, ৩০, ৩১.
২. ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন কী এবং কেন তিনি এই দিনকে ‘পবিত্র করিয়াছিলেন’?
২ তাঁর সৃজনশীল কাজগুলো নিরীক্ষণ করার পর, যিহোবা ঈশ্বর সপ্তম দিনের শুরু সম্বন্ধে ঘোষণা দিয়েছিলেন আর এই সপ্তম দিন ২৪ ঘন্টার কোনো দিন নয় বরং এক দীর্ঘ সময়কাল, যে-সময়টাতে তিনি পার্থিব সৃষ্টির অন্যান্য কাজ থেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। (আদি. ২:২) ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন এখনও শেষ হয়নি। (ইব্রীয় ৪:৯, ১০) বাইবেল একেবারে সঠিকভাবে জানায় না যে, কখন এটা শুরু হয়েছিল। এটা প্রায় ৬,০০০ বছর আগে আদমের স্ত্রী হবাকে সৃষ্টি করার কিছু সময় পর শুরু হয়েছিল। আমাদের সামনে খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্ব রয়েছে, যা পৃথিবীকে সিদ্ধ মানবজাতি দ্বারা পূর্ণ এক চিরস্থায়ী পরমদেশ সৃষ্টি করার বিষয়ে ঈশ্বরের যে-উদ্দেশ্য, তা পরিপূর্ণ করার বিষয়টাকে নিশ্চিত করবে। (আদি. ১:২৭, ২৮; প্রকা. ২০:৬) আপনি কি এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনি এইরকম এক সুখী ভবিষ্যৎ লাভ করবেন? অবশ্যই পারেন! কারণ “ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন।” এই বিষয়টা নিশ্চিত ছিল যে, যত অপ্রত্যাশিত সমস্যাই দেখা দিক না কেন, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য তাঁর বিশ্রাম দিনের শেষে পরিপূর্ণ হবেই হবে।—আদি. ২:৩.
৩. (ক) ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন শুরু হওয়ার পর, কোন বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা চিরতরে বিদ্রোহ দূর করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর অভিপ্রায় সম্বন্ধে বলেছিলেন?
৩ কিন্তু, ঈশ্বরের বিশ্রাম দিন শুরু হওয়ার পর আকস্মিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। শয়তান, ঈশ্বরের একজন দূত পুত্র, নিজেকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর হিসেবে তুলে ধরেছিল। সে-ই প্রথম মিথ্যা বলেছিল এবং হবাকে প্রবঞ্চনা করেছিল, যাতে সে-ও যিহোবার অবাধ্য হয়। (১ তীম. ২:১৪) পরে, হবা তার স্বামীকেও এই বিদ্রোহে যোগ দিতে প্ররোচিত করেছিল। (আদি. ৩:১-৬) এমনকী নিখিলবিশ্বের ইতিহাসের সেই চরম সময়ও, যখন ঈশ্বরের সত্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য কোনো দিব্য করার প্রয়োজন অনুভব করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি কেবল সহজভাবে বলেছিলেন যে, কীভাবে চিরতরে বিদ্রোহ দূর করে দেওয়া হবে: “আমি তোমাতে [শয়তান] ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে [প্রতিজ্ঞাত বংশ] তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।”—আদি. ৩:১৫; প্রকা. ১২:৯.
শপথ করে বলা দিব্য —এক কার্যকারী বৈধ ব্যবস্থা
৪, ৫. কখনো কখনো অব্রাহাম কোন বৈধ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়েছিলেন?
৪ মানব ইতিহাসের শুরুতে, ঈশ্বর আদম ও হবাকে যে-ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা দান করেছিলেন, সেখানে কোনো বিষয়ের সত্যতা সম্বন্ধে শপথ করার বিষয়টা এক অপরিহার্য অংশ ছিল কি না, তা নিশ্চিত নয়। সিদ্ধ প্রাণীরা, যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং তাঁকে অনুকরণ করে, তাদের দিব্য করার প্রয়োজন নেই; তারা সবসময়ই সত্য বলে এবং পরস্পরকে পূর্ণরূপে বিশ্বাস করে। কিন্তু, মানুষ পাপ করে অসিদ্ধ হওয়ার পর বিষয়টা পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরে, মানুষের মধ্যে যখন মিথ্যা বলা ও প্রতারণা করা এক সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে, তখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সত্যতা সম্বন্ধে শপথ করা তাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
৫ দিব্য করা এক বৈধ ব্যবস্থা ছিল, যা কুলপতি অব্রাহাম অন্ততপক্ষে তিন বার উপকারজনকভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন। (আদি. ২১:২২-২৪; ২৪:২-৪, ৯) উদাহরণস্বরূপ, এলমের রাজা ও তার মিত্রদের পরাজিত করে ফিরে আসার পর তিনি দিব্য করেছিলেন। শালেমের রাজা ও সদোমের রাজা অব্রাহামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এসেছিল। শালেমের রাজা মল্কীষেদক একইসঙ্গে ‘পরাৎপর ঈশ্বরের যাজকও’ ছিলেন। এই কারণে, তিনি অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং অব্রাহামকে শত্রুদের ওপর বিজয় এনে দিয়েছিলেন বলে ঈশ্বরের প্রশংসা করেছিলেন। (আদি. ১৪:১৭-২০) এরপর, সদোমের রাজা যখন তার লোকেদেরকে আক্রমণকারী সৈন্যদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য অব্রাহামকে পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলেন, তখন অব্রাহাম শপথ করার জন্য হস্ত উত্তোলন করে বলেছিলেন: “আমি স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হস্ত উঠাইয়া কহিতেছি, আমি আপনার কিছুই লইব না, এক গাছি সূতা কি পাদুকার বন্ধনীও লইব না; পাছে আপনি বলেন, আমি অব্রামকে ধনবান্ করিয়াছি।”—আদি. ১৪:২১-২৩.
অব্রাহামের কাছে শপথ করে বলা যিহোবার প্রতিজ্ঞা
৬. (ক) আমাদের জন্য অব্রাহাম কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) অব্রাহামের বাধ্যতা থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করতে পারি?
৬ পাপী মানবজাতির উপকারের জন্য যিহোবা ঈশ্বরও এই ধরনের অভিব্যক্তিগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে শপথের ব্যবহার করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য।” (যিহি. ১৭:১৬) বাইবেলে ৪০ বারেরও বেশি সময়ের কথা বর্ণনা করা আছে, যখন যিহোবা ঈশ্বর শপথ করে দিব্য করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, সবচেয়ে সুপরিচিত উদাহরণ হল, অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ। অনেক বছর ধরে যিহোবা অব্রাহামের কাছে বেশ কয়েকটা নিয়ম বা চুক্তি সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যেগুলো মিলিয়ে দেখলে দেখা যায় যে, প্রতিজ্ঞাত বংশ অব্রাহামের কাছ থেকে তার পুত্র ইস্হাকের মাধ্যমে আসবে। (আদি. ১২:১-৩, ৭; ১৩:১৪-১৭; ১৫:৫, ১৮; ২১:১২) এরপর যিহোবা অব্রাহামের ওপর এক কঠিন পরীক্ষা নিয়ে এসেছিলেন, তার প্রিয় পুত্রকে উৎসর্গ করার আদেশ দিয়েছিলেন। অব্রাহাম সঙ্গেসঙ্গে বাধ্য হয়েছিলেন এবং যখন ইস্হাককে উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বরের এক দূত তাকে বাধা দিয়েছিলেন। সেই সময় ঈশ্বর এই দিব্য করেছিলেন: “তুমি এই কার্য্য করিলে, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্ত্র দিতে অসম্মত হইলে না, এই হেতু আমি আমারই দিব্য করিয়া কহিতেছি, আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং আকাশের তারাগণের ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তোমার বংশ শত্রুগণের পুরদ্বার অধিকার করিবে; আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।”—আদি. ২২:১-৩, ৯-১২, ১৫-১৮.
৭, ৮. (ক) কোন উদ্দেশ্যে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে শপথ করেছিলেন? (খ) কীভাবে যিশুর “আরও মেষ” শপথ করে বলা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা থেকে উপকার লাভ করবে?
৭ কেন ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে এই শপথ করেছিলেন যে, তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো সত্য হবেই? এর উদ্দেশ্য ছিল, সেই ব্যক্তিদের আশ্বাস দেওয়া এবং তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করা, যারা খ্রিস্টের সহদায়াদ এবং প্রতিজ্ঞাত ‘বংশের’ গৌণ অংশ হয়ে উঠবে। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১৩-১৮; গালা. ৩:২৯) প্রেরিত পৌল যেমন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যিহোবা “শপথের প্রয়োগ দ্বারা মধ্যস্থতা করিলেন; অভিপ্রায় এই, যে ব্যাপারে মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য, এমন অপরিবর্ত্তনীয় দুই ব্যাপার [তাঁর প্রতিজ্ঞা এবং শপথ] দ্বারা আমরা—যাহারা সম্মুখস্থ প্রত্যাশা ধরিবার জন্য শরণার্থে পলায়ন করিয়াছি—যেন দৃঢ় আশ্বাস প্রাপ্ত হই।”
৮ কেবল অভিষিক্ত খ্রিস্টানরাই যে অব্রাহামের কাছে শপথ করে বলা ঈশ্বরের দিব্য থেকে উপকার লাভ করবে, এমন নয়। যিহোবা শপথ করে বলেছিলেন যে, অব্রাহামের “বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।” (আদি. ২২:১৮) এই ধরনের আশীর্বাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হল, খ্রিস্টের বাধ্য “আরও মেষ,” যাদের সম্মুখে এক পার্থিব পরমদেশে অনন্তজীবনের আশা রয়েছে। (যোহন ১০:১৬) আপনার আশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, ক্রমাগত ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থেকে জীবনযাপন করার মাধ্যমে সেটাকে ‘ধরিয়া’ রাখুন।—পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১১, ১২.
ঈশ্বরের অন্যান্য দিব্য
৯. অব্রাহামের বংশধররা যখন মিশরীয়দের দাসত্বে ছিল, তখন ঈশ্বর শপথ করে কোন দিব্য করেছিলেন?
৯ কয়েক-শো বছর পর, যিহোবা আবারও সেই সময়ে ওপরে উল্লেখিত প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে শপথ করেছিলেন, যখন তিনি মোশিকে অব্রাহামের বংশধরদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছিলেন, যারা তখন মিশরীয়দের দাসত্বে ছিল। (যাত্রা. ৬:৬-৮) সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আমি যে দিন ইস্রায়েলকে মনোনীত করিয়াছিলাম, . . . সেই দিন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া [বলিয়াছিলাম] যে, আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিব, এবং তাহাদের জন্য যে দেশ অনুসন্ধান করিয়াছি, . . . সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে লইয়া যাইব।”—যিহি. ২০:৫, ৬.
১০. ইস্রায়েলকে মিশর থেকে উদ্ধার করার পর, ঈশ্বর তাদের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
১০ এরপর, মিশর থেকে ইস্রায়েলের উদ্ধারের পর, যিহোবা তাদের কাছে শপথ করে আরেকটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রা. ১৯:৫, ৬) ঈশ্বর ইস্রায়েলকে কী এক বিশেষ মর্যাদাই না দিতে চেয়েছিলেন! এর অর্থ ছিল, যদি বাধ্য হতো, তাহলে সেই জাতির ব্যক্তি-বিশেষরা বাকি মানবজাতির আশীর্বাদের জন্য যাজকদের এক রাজ্য হিসেবে ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার আশা রাখতে পারত। পরে, তিনি ইস্রায়েলের জন্য যা করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে যিহোবা বলেছিলেন: “আমি শপথ করিয়া তোমার সহিত নিয়ম স্থির করিলাম।”—যিহি. ১৬:৮.
১১. তাঁর মনোনীত লোক হিসেবে তাঁর সঙ্গে এক চুক্তির সম্পর্কে প্রবেশ করার বিষয়ে ঈশ্বরের আমন্ত্রণে ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?
১১ সেই সময়ে, বাধ্য হওয়ার ব্যাপারে শপথ করে দিব্য করার জন্য যিহোবা ইস্রায়েলকে জোর করেননি; কিংবা এই বিশেষ সম্পর্কে প্রবেশ করার জন্য তিনি ইস্রায়েলীয়দের বাধ্যও করেননি। বরং, তারা স্বেচ্ছায় বলেছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” (যাত্রা. ১৯:৮) তিন দিন পর, যিহোবা ঈশ্বর ইস্রায়েলকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর মনোনীত জাতির কাছ থেকে কী চান। প্রথমে, তারা দশটা আজ্ঞা শুনেছিল এবং এরপর মোশি তাদেরকে আরও আজ্ঞা সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন, যেগুলো যাত্রাপুস্তক ২০:২২ পদ থেকে যাত্রাপুস্তক ২৩:৩৩ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইস্রায়েল কীভাবে সাড়া দিয়েছিল? “সমস্ত লোক একস্বরে উত্তর করিল, সদাপ্রভু যে যে কথা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব।” (যাত্রা. ২৪:৩) এরপর মোশি ‘নিয়মপুস্তকখানিতে’ আইনগুলো লিখেছিলেন এবং সেগুলো তাদের সামনে জোরে জোরে পাঠ করেছিলেন, যেন পুরো জাতি সেগুলো আবারও শুনতে পায়। তার পর, তৃতীয় বারের মতো লোকেরা অঙ্গীকার করেছিল: “সদাপ্রভু যাহা যাহা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব ও আজ্ঞাবহ হইব।”—যাত্রা. ২৪:৪, ৭, ৮.
১২. সেই চুক্তির প্রতি যিহোবা এবং তাঁর মনোনীত লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, যা তাদের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল?
১২ যিহোবা সঙ্গেসঙ্গে ব্যবস্থা চুক্তির মধ্যে তাঁর অংশটা পূর্ণ করতে শুরু করেছিলেন আর তা করার জন্য তিনি উপাসনার উদ্দেশে একটা তাঁবুর ব্যবস্থা করেছিলেন এবং এমন এক যাজকবর্গের ব্যবস্থা করেছিলেন, যা পাপী মানুষদেরকে তাঁর কাছে আসতে সম্ভবপর করেছিল। অন্যদিকে, ইস্রায়েল ঈশ্বরের উদ্দেশে তাদের উৎসর্গীকরণ সম্বন্ধে দ্রুত ভুলে গিয়েছিল এবং ‘ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিল।’ (গীত. ৭৮:৪১) উদাহরণস্বরূপ, সীনয় পর্বতে মোশি যখন আরও নির্দেশনা লাভ করছিলেন, তখন ইস্রায়েলীয়রা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছিল, এইরকমটা মনে করছিল যে, মোশি তাদেরকে পরিত্যাগ করেছেন। তাই, তারা একটা সোনার বাছুর নির্মাণ করেছিল এবং লোকেদের বলেছিল: “হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন।” (যাত্রা. ৩২:১, ৪) এরপর, তারা নিজেদের দ্বারা আখ্যায়িত “সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব” নামক অনুষ্ঠান করেছিল এবং মানুষের তৈরি প্রতিমার কাছে প্রণিপাত করেছিল এবং সেটার উদ্দেশে বলিদান করেছিল। এটা দেখার পর, যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “আমি তাহাদিগকে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিয়াছি, তাহারা শীঘ্রই সেই পথ হইতে ফিরিয়াছে।” (যাত্রা. ৩২:৫, ৬, ৮) দুঃখের বিষয় হল, এরপর থেকে ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে বিভিন্ন মানত করে পরবর্তী সময়ে সেগুলো ভেঙে ফেলার এক ইতিহাস গড়ে তুলেছিল।—গণনা. ৩০:২.
আরও দুটো দিব্য
১৩. রাজা দায়ূদের কাছে ঈশ্বর শপথ করে কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর কীভাবে এটা প্রতিজ্ঞাত বংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
১৩ রাজা দায়ূদের রাজত্বের সময়ে যিহোবা তাঁর প্রতি বাধ্য এমন সমস্ত লোকের উপকারের জন্য শপথ করে আরও দুটো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। প্রথমত, তিনি দায়ূদের কাছে এই শপথ করেছিলেন যে, তার সিংহাসন চিরকাল থাকবে। (গীত. ৮৯:৩৫, ৩৬; ১৩২:১১, ১২) এর অর্থ ছিল যে, প্রতিজ্ঞাত বংশকে “দায়ূদের সন্তান” বলে অভিহিত করা হবে। (মথি ১:১; ২১:৯) নম্রভাবে দায়ূদ এই ভাবী বংশধরকে তার “প্রভু” বলে সম্বোধন করেছিলেন কারণ খ্রিস্টই এক উচ্চতর পদ লাভ করবেন।—মথি ২২:৪২-৪৪.
১৪. প্রতিজ্ঞাত বংশ সম্বন্ধে যিহোবা শপথ করে কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং তা থেকে আমরা কীভাবে উপকার লাভ করি?
১৪ দ্বিতীয়ত, যিহোবা দায়ূদকে এই ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, এই অদ্বিতীয় রাজা মানবজাতির জন্য মহাযাজক হিসেবেও কাজ করবেন। ইস্রায়েলে রাজপদ এবং যাজকপদ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় ছিল। যাজকদেরকে লেবির বংশ থেকে নেওয়া হতো এবং রাজাদেরকে যিহূদার বংশ থেকে নেওয়া হতো। কিন্তু, তার বিশিষ্ট ভাবী উত্তরাধিকারী সম্বন্ধে দায়ূদ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি। সদাপ্রভু শপথ করিলেন, অনুশোচনা করিবেন না, তুমি অনন্তকালীন যাজক, মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে।” (গীত. ১১০:১, ৪) সেই ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা স্বরূপ, সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ যিশু খ্রিস্ট এখন স্বর্গে ঈশ্বরের ডান দিকে বসে শাসন করছেন। এ ছাড়াও, অনুতপ্ত ব্যক্তিদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক গ্রহণযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করার মাধ্যমে তিনি মানবজাতির মহাযাজক হিসেবে কাজ করেন।—পড়ুন, ইব্রীয় ৭:২১, ২৫, ২৬.
ঈশ্বরের নতুন ইস্রায়েল
১৫, ১৬. (ক) বাইবেলে কোন দুই শ্রেণীর ইস্রায়েল সম্বন্ধে উল্লেখ করা আছে আর বর্তমানে কোন শ্রেণীর ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে? (খ) অঙ্গীকার করার বিষয়ে যিশু তাঁর অনুসারীদের কোন আজ্ঞা দিয়েছিলেন?
১৫ যিশু খ্রিস্টকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে ইস্রায়েল জাতি অবশেষে ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের অনুকূল অবস্থান ও সেইসঙ্গে “যাজকদের এক রাজ্য” হওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেছিল। যিহুদি নেতাদেরকে যিশু যেমন বলেছিলেন: “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিনে সেই নতুন জাতির জন্ম হয়েছিল, যখন যিরূশালেমে উপস্থিত যিশুর প্রায় ১২০ জন শিষ্যের ওপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল। এই নতুন জাতি পরবর্তী সময়ে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং শীঘ্র তাদের সংখ্যা কয়েক হাজারে গিয়ে পৌঁছায়, যাদের মধ্যে তখনকার জগতে পরিচিত প্রত্যেক জাতির লোক ছিল।—গালা. ৬:১৬.
১৬ জন্মগত ইস্রায়েলের বিপরীতে, ঈশ্বরের নতুন আধ্যাত্মিক জাতি ক্রমাগত ঈশ্বরের বাধ্য থাকার মাধ্যমে উত্তম ফল উৎপন্ন করে গিয়েছিল। এর সদস্যরা একটা যে-আদেশের প্রতি বাধ্য থাকে, তা শপথ করে বলা দিব্য করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন লোকেরা মিথ্যাভাবে শপথ করে অথবা ছোটোখাটো বিষয়ে শপথ করার মাধ্যমে দিব্য করার বিষয়টাকে অপব্যবহার করত। (মথি ২৩:১৬-২২) যিশু তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন: “কোন দিব্যই করিও না; . . . তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক; ইহার অতিরিক্ত যাহা, তাহা মন্দ হইতে জন্মে।”—মথি ৫:৩৪, ৩৭.
১৭. পরের অধ্যয়ন প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
১৭ এর অর্থ কি এই যে, শপথ করে দিব্য করা সবসময়ই ভুল? আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের হ্যাঁ, হ্যাঁ হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত? এই প্রশ্নগুলো পরের অধ্যয়ন প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করার সময় আমরা যেন যিহোবার বাধ্য হয়ে চলার জন্য অনুপ্রাণিত হই। এর ফলে, তিনিও শপথ করে বলা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চিরকাল আমাদেরকে আশীর্বাদ করে আনন্দিত হবেন।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো সবসময়ই সত্য হয়
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
শীঘ্র অব্রাহাম যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো সত্য হতে দেখবেন