যিশুর সাহস এবং বিচক্ষণতা অনুকরণ করুন
‘তোমরা তাঁহাকে না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ; এখন দেখিতে পাইতেছ না, তথাপি তাঁহাতে বিশ্বাস করিতেছ।’ —১ পিতর ১:৮.
১, ২. (ক) কীভাবে আমরা অনন্তজীবন পেতে পারি? (খ) কী আমাদের যাত্রার প্রতি মনোযোগ বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে?
আমরা যখন খ্রিস্টান হই, তখন এমন যেন আমরা একটা যাত্রা শুরু করি। আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তাহলে আমাদের যাত্রা সফল হবে এবং আমরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারব। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) হ্যাঁ, আমাদের যাত্রা শেষ করার জন্য আমাদের অবশ্যই “শেষ” পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে, হোক তা আমাদের জীবনের শেষ অথবা এই দুষ্ট জগতের শেষ। কিন্তু, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা এই জগতের দ্বারা বিক্ষিপ্ত না হই। (১ যোহন ২:১৫-১৭) কীভাবে আমরা আমাদের যাত্রার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে পারি?
২ যিশু আমাদের জন্য নিখুঁত উদাহরণস্থাপন করেছেন। যিশুর যাত্রা অথবা তাঁর জীবনধারা সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, তিনি কেমন। আর তা জানার ফলে, আমরা তাঁকে ভালোবাসব এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস দেখাব। (পড়ুন, ১ পিতর ১:৮, ৯.) প্রেরিত পিতর বলেছেন, যিশু আমাদের জন্য এক আদর্শ বা উদাহরণ রেখেছেন, যেন আমরা তা যথাসম্ভব অনুসরণ করতে পারি। (১ পিতর ২:২১) আর আমরা যদি যিশুর উদাহরণ সতর্কতার সঙ্গে অনুকরণ করি, তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত স্থির থাকতে পারব। * আগের প্রবন্ধে আমরা শিখতে পেরেছি কীভাবে আমরা যিশুর নম্রতা এবং কোমলতার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি। এই প্রবন্ধে আমরা শিখব কীভাবে আমরা তাঁর সাহস ও বিচক্ষণতার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি।
যিশু হলেন একজন সাহসী ব্যক্তি
৩. সাহস কী এবং কীভাবে আমরা তা পেতে পারি?
৩ সাহস হল এমন অনুভূতি, যা আমাদের শক্তিশালী করতে এবং কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া, সাহস আমাদেরকে যা সঠিক, সেটার পক্ষ সমর্থন করতে সাহায্য করে। আমরা যখন পরীক্ষা ভোগ করি, তখন এটা আমাদের শান্ত থাকতে এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করে। সাহস অনুভূতিটা ভয়, আশা এবং প্রেমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। কীভাবে? আমাদের যখন ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করার ভয় থাকে, তখন আমরা লোকভয়ের কাছে নতিস্বীকার করব না। (১ শমূ. ১১:৭; হিতো. ২৯:২৫) যিহোবার অপেক্ষা করা বা তাঁর ওপর আশা রাখা আমাদের পরীক্ষার ওপর নয় বরং ভবিষ্যতের ওপর মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করে। (গীত. ২৭:১৪) নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদেরকে এমনকী তাড়নার সময়ও সাহস দেখাতে অনুপ্রাণিত করে। (যোহন ১৫:১৩) ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার এবং তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করার মাধ্যমে আমরা সাহস পেতে পারি।—গীত. ২৮:৭.
৪. কীভাবে যিশু মন্দিরে সাহস দেখিয়েছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৪ যিশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন ‘ধর্ম্মধামে গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিবার’ সময় যিশু সাহস দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, লূক ২:৪১-৪৭.) সেই ধর্মীয় নেতারা মোশির ব্যবস্থা খুব ভালো করেই জানতেন কিন্তু সেইসঙ্গে তারা যিহুদি রীতিনীতিও জানতেন। এই রীতিনীতির কারণে ব্যবস্থা পালন করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে তারা ভালোভাবে জানতেন বলে যে যিশু সাহসের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছিলেন, এমন নয়। তিনি ভয় পাননি। তিনি ‘প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া’ গিয়েছিলেন। অবশ্য, একজন অল্পবয়সি ছেলে সাধারণত যেরকম প্রশ্ন করে থাকে, যিশু সেরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন না। বরং, আমরা কল্পনা করতে পারি, তিনি এমন গভীর প্রশ্ন করছিলেন, যেগুলো সেই গুরুদের মনোযোগের সঙ্গে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল। আর গুরুরা যদি বিভিন্ন প্রশ্ন করে যিশুকে তর্কবিতর্কে জড়ানোর চেষ্টাও করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। ধর্মীয় গুরুরা-সহ সমস্ত শ্রোতা “তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে” অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছিলেন। হ্যাঁ, যিশু সাহসের সঙ্গে সেই সত্যের পক্ষে কথা বলেছিলেন, যা ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া যায়!
৫. পরিচর্যার সময় কোন কোন উপায়ে যিশু সাহস দেখিয়েছিলেন?
৫ পরিচর্যার সময় যিশু বিভিন্ন উপায়ে সাহস দেখিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি লোকেদের দেখিয়েছিলেন, ধর্মীয় নেতারা তাদের মিথ্যা শিক্ষার দ্বারা লোকেদের বিপথে পরিচালিত করছিল। (মথি ২৩:১৩-৩৬) এ ছাড়া, যিশু নিজেকে জগতের দ্বারা কলুষিত হতে দেননি। (যোহন ১৬:৩৩) বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি প্রচার করে গিয়েছিলেন। (যোহন ৫:১৫-১৮; ৭:১৪) আর দু-বার সাহসের সঙ্গে তিনি সেই ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার মাধ্যমে মন্দির পরিষ্কার করেছিলেন, যারা সেখানকার সত্য উপাসনাকে কলুষিত করছিল।—মথি ২১:১২, ১৩; যোহন ২:১৪-১৭.
৬. পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিনে কীভাবে যিশু সাহস দেখিয়েছিলেন?
৬ পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিনে যিশু যে-সাহস দেখিয়েছিলেন, আসুন আমরা তা পরীক্ষা করি। যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করার পর কী ঘটবে, তা যিশু জানতেন। তা সত্ত্বেও, নিস্তারপর্বের ভোজের সময় যিশু যিহূদাকে বলেছিলেন: “যাহা করিতেছ, শীঘ্র কর।” (যোহন ১৩:২১-২৭) এরপর গেৎশিমানী বাগানে, যিশু সাহসের সঙ্গে সেই সৈন্যদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন, যারা তাঁকে ধরতে এসেছিল। যদিও তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল, তবুও তিনি সৈন্যদের এই কথা বলার মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদের রক্ষা করেছিলেন: “ইহাদিগকে যাইতে দেও।” (যোহন ১৮:১-৮) পরবর্তী সময়ে, যিহুদি উচ্চ আদালত যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, তখন যিশু সাহসের সঙ্গে তাদের বলেছিলেন, তিনি হলেন খ্রিস্ট এবং ঈশ্বরের পুত্র। তিনি ভয় পাননি, যদিও মহাযাজক তাঁকে হত্যা করার জন্য অজুহাত খুঁজছিলেন। (মার্ক ১৪:৬০-৬৫) যিশু তাঁর বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন এবং যাতনাদণ্ডে মারা গিয়েছিলেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন: “সমাপ্ত হইল।”—যোহন ১৯:২৮-৩০.
যিশুর সাহস অনুকরণ করুন
৭. অল্পবয়সিরা, যিহোবার একজন সাক্ষি হতে পেরে তোমরা কেমন বোধ করো আর কীভাবে তোমরা দেখাতে পারো যে, তোমরা সাহসী?
৭ কীভাবে আমরা যিশুর সাহস অনুকরণ করতে পারি? স্কুলে। অল্পবয়সিরা, তোমরা যখন তোমাদের সহপাঠী অথবা অন্যদের বলো, তোমরা একজন যিহোবার সাক্ষি, তখন তোমরা সাহস দেখিয়ে থাকো। এভাবে, তোমরা দেখাও যে, যিহোবার নামে অভিহিত হতে পেরে তোমরা গর্বিত, এমনকী এর জন্য অন্যেরা যদি তোমাদের নিয়ে ঠাট্টাও করে থাকে। (যাত্রা. ৩:১৫; পড়ুন, গীতসংহিতা ৮৬:১২.) কেউ কেউ চায় যেন তোমরা বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করো। কিন্তু, সৃষ্টি সম্বন্ধে বাইবেল যা বলে, তা যে সত্য, সেটাতে নির্ভর করার যথেষ্ট কারণ তোমাদের রয়েছে। তোমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও বই ব্যবহার করে সেই ব্যক্তিদের উত্তর দিতে পারো, যারা “তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু” জানতে চায়। (১ পিতর ৩:১৫) তখন এটা জেনে তোমাদের পরিতৃপ্তি থাকবে যে, তোমরা সাহসের সঙ্গে বাইবেলের সত্যের পক্ষে কথা বলেছ!
৮. সাহসের সঙ্গে প্রচার করার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?
৮ আমাদের পরিচর্যায়। সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের ‘প্রভুর [ঈশ্বরের] উপরে সাহস বাঁধিয়া কথা কহিতে’ হবে। (প্রেরিত ১৪:৩) কেন আমরা সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে পারি? প্রথমত, আমরা জানি যে, আমরা যা প্রচার করি, তা বাইবেল থেকে। আর এটা হল সত্য। (যোহন ১৭:১৭) দ্বিতীয়ত, “আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” আর আমাদের সাহায্য করার জন্য তিনি আমাদের তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়েছেন। (১ করি. ৩:৯; প্রেরিত ৪:৩১) তৃতীয়ত, আমরা যিহোবা ও লোকেদের ভালোবাসি, তাই অন্যদের সুসমাচার জানানোর জন্য আমরা আমাদের যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত হই। (মথি ২২:৩৭-৩৯) যেহেতু আমরা সাহসী, তাই আমরা প্রচার করা বন্ধ করব না। আমরা সেই ব্যক্তিদের সত্য জানানোর জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ, যারা “অন্ধ” অথবা ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা প্রতারিত। (২ করি. ৪:৪) আর আমরা এমনকী সেই সময়ও সুসমাচার প্রচার করে যাব, যখন অন্যেরা আমাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করে অথবা আমাদের তাড়না করে।—১ থিষল. ২:১, ২.
৯. আমরা যখন পরীক্ষা ভোগ করি, তখন আমরা কীভাবে সাহস দেখাতে পারি?
৯ যখন আমরা পরীক্ষা ভোগ করি। আমরা যখন ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি, তখন তিনি আমাদের বিশ্বাস ও সাহস প্রদান করেন, যেগুলো কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরার জন্য প্রয়োজন। যখন কোনো প্রিয়জন মারা যায়, তখন আমরা শোক করি, তবে আশা হারিয়ে ফেলি না। আমরা নিশ্চিত, “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর” আমাদের শক্তি দেবেন। (২ করি. ১:৩, ৪; ১ থিষল. ৪:১৩) আমরা যদি অসুস্থ অথবা আহত হই, তাহলে আমরা হয়তো কষ্ট পাই তবে আমরা এমন যেকোনো চিকিৎসা নিতে প্রত্যাখ্যান করি, যা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করবে। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) আমরা যদি হতাশ হয়ে পড়ি, তাহলে ‘আমাদের হৃদয় আমাদিগকে দোষী করিতে’ পারে কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দিই না। আমরা যিহোবাতে নির্ভর করি, যিনি “ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী।” *—১ যোহন ৩:১৯, ২০; গীত. ৩৪:১৮.
যিশু হলেন একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি
১০. বিচক্ষণতা কী এবং একজন বিচক্ষণ খ্রিস্টান কীভাবে কথা বলেন ও কাজ করেন?
১০ বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা হল, সদসৎ বিষয় বিচার করতে পারার বা সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার এবং এরপর যা সঠিক তা বেছে নেওয়ার ইব্রীয় ৫:১৪) একজন বিচক্ষণ খ্রিস্টান এমন সিদ্ধান্ত নেন, যা ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে। তিনি তার কথাবার্তার মাধ্যমে অন্যদের আঘাত না করার ব্যাপারে সতর্ক। এর পরিবর্তে, তিনি যিহোবাকে খুশি করেন কারণ তিনি এমন কথাবার্তা বলা বেছে নেন, যা অন্যদের সাহায্য করে। (হিতো. ১১:১২, ১৩) তিনি “ক্রোধে ধীর।” (হিতো. ১৪:২৯) তিনি ‘সরল পথে চলেন’ আর এর অর্থ হল, তিনি জীবনে সবসময় উত্তম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। (হিতো. ১৫:২১) কীভাবে আমরা বিচক্ষণ হতে শিখতে পারি? আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য পড়তে এবং যা শিখি, তা কাজে লাগাতে হবে। (হিতো ২:১-৫, ১০, ১১) এ ছাড়া, আমরা যিশুর বিচক্ষণতার নিখুঁত উদাহরণ নিয়ে অধ্যয়ন করতে ও তা অনুকরণ করতে পারি।
ক্ষমতা। (১১. কীভাবে যিশু তাঁর কথাবার্তায় বিচক্ষণতা দেখিয়েছিলেন?
১১ যিশু তাঁর সমস্ত কথায় ও কাজে বিচক্ষণতা দেখিয়েছিলেন। তাঁর কথাবার্তায়। যিশু যখন সুসমাচার প্রচার করতেন, তখন তিনি সদয় কথাবার্তা ব্যবহার করতেন, যা শুনে তাঁর শ্রোতারা আশ্চর্য হয়ে যেত। (মথি ৭:২৮; লূক ৪:২২) তিনি প্রায়ই ঈশ্বরের বাক্য পড়তেন এবং সেখান থেকে উদ্ধৃতি করতেন। তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন, কোন পরিস্থিতিতে ঠিক কোন শাস্ত্রপদ ব্যবহার করতে হবে। (মথি ৪:৪, ৭, ১০; ১২:১-৫; লূক ৪:১৬-২১) এ ছাড়া, যে-লোকেরা যিশুকে শাস্ত্র সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে শুনত, তাদের ওপর তাঁর কথা গভীর প্রভাব ফেলত। পুনরুত্থানের পর, যিশু ইম্মায়ূর পথে দু-জন শিষ্যের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি সেই শাস্ত্রপদগুলো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যেগুলো তাঁর প্রতি প্রযোজ্য ছিল। সেই শিষ্যরা পরে বলেছিলেন: “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না?”—লূক ২৪:২৭, ৩২.
১২, ১৩. কোন উদাহরণগুলো দেখায়, যিশু ক্রোধে ধীর এবং যুক্তিবাদী ছিলেন?
১২ তাঁর অনুভূতি এবং মনোভাবে। বিচক্ষণতা যিশুকে “ক্রোধে ধীর” হতে সাহায্য করেছিল। (হিতো. ১৬:৩২) তিনি তাঁর অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন এবং তিনি “মৃদুশীল” ছিলেন। (মথি ১১:২৯) শিষ্যদের ভুলত্রুটি থাকা সত্ত্বেও, যিশু সবসময় তাদের প্রতি ধৈর্য দেখিয়েছিলেন। (মার্ক ১৪:৩৪-৩৮; লূক ২২:২৪-২৭) এমনকী তাঁর সঙ্গে যখন দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল, তখনও তিনি শান্ত ছিলেন।—১ পিতর ২:২৩.
১৩ বিচক্ষণতা যিশুকে যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করেছিল। তিনি মোশির ব্যবস্থার পিছনে কারণগুলো বুঝতে পারতেন আর এটা লোকেদের সঙ্গে তাঁর আচরণের সময় প্রভাব ফেলত। উদাহরণ স্বরূপ, সেই মহিলার কথা চিন্তা করুন যিনি “প্রদর রোগগ্রস্ত” ছিলেন বা রক্তস্রাবে ভুগছিলেন। (পড়ুন, মার্ক ৫:২৫-৩৪.) সেই মহিলা ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে যিশুর কাপড় স্পর্শ করেছিলেন এবং সুস্থ হয়েছিলেন। ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনি যেহেতু অশুচি ছিলেন, তাই তার কাউকে স্পর্শ করা উচিত ছিল না। (লেবীয়. ১৫:২৫-২৭) কিন্তু, যিশু তার সঙ্গে নির্দয়ভাবে কথা বলেননি। কেন? কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কড়াকড়িভাবে ব্যবস্থা মেনে চলার চেয়ে ‘দয়া ও বিশ্বাসের’ মতো গুণ দেখানো আরও গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ২৩:২৩) যিশু সদয়ভাবে বলেছিলেন: “হে কন্যে তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল, শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক।” কীভাবে বিচক্ষণতা যিশুকে দয়া দেখাতে অনুপ্রাণিত করেছিল, সেটার কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ!
১৪. যিশু কী করা বেছে নিয়েছিলেন আর কীভাবে তিনি প্রচার কাজের প্রতি মনোযোগ বজায় রেখেছিলেন?
১৪ তাঁর জীবনধারায়। যিশু তাঁর জীবনধারার মাধ্যমে বিচক্ষণতা দেখিয়েছিলেন। তিনি প্রচার কাজকে তাঁর জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। (লূক ৪:৪৩) এ ছাড়া, যিশু এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেগুলো তাঁকে তাঁর এই কাজ ও তাঁর কার্যভার সম্পন্ন করার ওপর মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি জীবনকে সাদাসিধে রেখেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর সময় ও শক্তিকে প্রচার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। (লূক ৯:৫৮) তিনি জানতেন, তাঁর মৃত্যুর পর প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। (লূক ১০:১-১২; যোহন ১৪:১২) আর তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি “যুগান্ত পর্য্যন্ত” প্রচার কাজে তাদের সাহায্য করবেন।—মথি ২৮:১৯, ২০.
যিশুর বিচক্ষণতা অনুকরণ করুন
১৫. কীভাবে আমরা আমাদের কথাবার্তায় বিচক্ষণতা দেখাতে পারি?
১৫ কীভাবে আমরা যিশুর বিচক্ষণতা অনুকরণ করতে পারি? আমাদের কথাবার্তায়। আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমরা এমন শব্দ ব্যবহার করি, যা তাদের নিরুৎসাহিত করার পরিবর্তে বরং উৎসাহ দেয়। (ইফি. ৪:২৯) আমরা যখন অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলি, তখন আমাদের বাক্য “লবণে আস্বাদযুক্ত” হওয়া অর্থাৎ আমাদের কৌশলতার সঙ্গে কথা বলা উচিত। (কল. ৪:৬) প্রথমে আমরা বোঝার চেষ্টা করি, লোকেদের কী প্রয়োজন এবং তারা কোন ব্যাপারে আগ্রহী। এরপর আমরা সতর্কতার সঙ্গে শব্দ বাছাই করি। আমরা যদি সদয় শব্দ ব্যবহার করি, তাহলে লোকেরা হয়তো আমাদের কথা শুনতে চাইবে আর আমাদের বার্তা হয়তো তাদের হৃদয়ে নাড়া দেবে। এ ছাড়া, আমরা যখন আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করি, তখন আমরা সম্ভব হলে বাইবেল থেকে পড়ার চেষ্টা করি কারণ বাইবেলেরই ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জানি, বাইবেলের বার্তা আমাদের যেকোনো কথার চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী।—ইব্রীয় ৪:১২.
১৬, ১৭. (ক) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা ক্রোধে ধীর ও যুক্তিবাদী? (খ) কীভাবে আমরা প্রচার কাজের প্রতি মনোযোগ বজায় রাখতে পারি?
১৬ আমাদের অনুভূতি এবং মনোভাবে। যখন আমরা চাপের মুখে থাকি, তখন বিচক্ষণতা আমাদের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং “ক্রোধে ধীর” হতে সাহায্য করে। (যাকোব ১:১৯) লোকেরা যখন আমাদের অসন্তুষ্ট করে, তখন আমরা বোঝার চেষ্টা করি, কেন তারা এভাবে কথা বলেছে অথবা আচরণ করেছে। তখন আমাদের পক্ষে তাদের ক্ষমা করা সহজ হয় এবং আমরা তাদের ওপর রেগে যাই না। (হিতো. ১৯:১১) এ ছাড়া, বিচক্ষণতা আমাদের যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করে। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের কাছ থেকে সিদ্ধতা আশা করি না। এর পরিবর্তে আমরা মনে রাখি, তাদের হয়তো এমন সমস্যা রয়েছে, যা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারি না। আমরা তাদের মতামত শুনতে ইচ্ছুক থাকি। আর যখনই সম্ভব আমরা মেনে নেওয়ার মনোভাব দেখাই, যার অর্থ আমরা নিজেদের মতামত অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিই না।—ফিলি. ৪:৫.
১৭ আমাদের জীবনধারায়। আমরা জানি, সুসমাচার প্রচার হল সবচেয়ে সম্মাননীয় কাজ। তাই, আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাই, যা আমাদের প্রচার কাজের ওপর মনোযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। আমরা আমাদের জীবনে যিহোবাকে প্রথমে রাখা বেছে নিই। আমরা সাদাসিধে জীবনযাপন করি, যাতে শেষ আসার আগে আমরা আমাদের সময় ও শক্তিকে সুসমাচার প্রচার করায় ব্যবহার করতে পারি।—মথি ৬:৩৩; ২৪:১৪.
১৮. কীভাবে আমরা অনন্তজীবনের পথে আমাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে পারি আর আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৮ যিশুর কিছু অপূর্ব গুণ সম্বন্ধে শিখতে পারা সত্যই আনন্দের বিষয়! কল্পনা করে দেখুন, তাঁর অন্যান্য গুণ অধ্যয়ন করার এবং আরও বেশি করে তাঁর মতো হওয়ার চেষ্টা করার মাধ্যমে আমরা কতটা উপকার লাভ করতে পারব। তাই, আসুন আমরা যিশুকে অনুকরণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। তা করার মাধ্যমে আমরা অনন্তজীবনের পথে আমাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে এবং যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পারব।
^ অনু. 2 ১ পিতর ১:৮, ৯ পদ স্বর্গীয় আশা রয়েছে এমন খ্রিস্টানদের জন্য লেখা হয়েছিল। কিন্তু, পিতরের কথাগুলো সেই খ্রিস্টানদের বেলায়ও প্রযোজ্য, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে।
^ অনু. 9 পরীক্ষার সময় যারা সাহস দেখিয়েছিল, তাদের উদাহরণ জানার জন্য ২০০০ সালের ১ ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৪-২৮ পৃষ্ঠা, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৪-১৬ পৃষ্ঠা এবং ২০০৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের সচেতন থাক! পত্রিকার ২০-২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।