সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিনি অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা করেন, তাঁকে অনুকরণ করুন

যিনি অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা করেন, তাঁকে অনুকরণ করুন

“প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” —ইফি. ৫:১.

১. কোন ক্ষমতা যিহোবাকে অনুকরণ করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে?

যিহোবা আমাদেরকে অন্য লোকেদের অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এমনকী আমরা তাদের পরিস্থিতিতে কখনো না পড়লেও, তা বুঝতে পারি। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১, ২.) এই ক্ষমতা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে? আর এই ক্ষমতা ব্যবহার করার সময় কেন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে?

২. আমরা যখন কষ্টভোগ করি, তখন যিহোবা কেমন অনুভব করেন?

যিহোবা আমাদের জন্য এক চমৎকার ভবিষ্যতের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যখন কোনো দুঃখকষ্ট থাকবে না। অভিষিক্ত ব্যক্তি এবং “আরও মেষ,” উভয়েই অনন্তজীবনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে পারে, তা তাদের স্বর্গে অথবা পৃথিবীতে যেখানেই বেঁচে থাকার আশা থাকুক না কেন। (যোহন ১০:১৬; ১৭:৩; ১ করি. ১৫:৫৩) কিন্তু, বর্তমানে আমাদের প্রতি মন্দ বিষয়গুলো ঘটলে আমরা যে কষ্ট পাই, তা যিহোবা বোঝেন। অতীতে, যিহোবার লোকেরা যখন মিশরে কষ্টভোগ করেছিল, তখন তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। “তাহাদের সকল দুঃখে তিনি দুঃখিত হইতেন।” (যিশা. ৬৩:৯) আর পরবর্তী সময়ে, তাঁর লোকেরা যখন মন্দির পুনর্নির্মাণ করেছিল এবং তাদের শত্রুদের কারণে আতঙ্কিত ছিল, তখন যিহোবা তাদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি ভাববাদীর মাধ্যমে তাদের বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখ. ২:৮) একজন মা যেমন তার বাচ্চার জন্য ভালোবাসা অনুভব করেন, তেমনই যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য ভালোবাসা অনুভব করেন এবং তাদের সাহায্য করতে চান। (যিশা. ৪৯:১৫) আমরা যখন অন্যদের পরিস্থিতিতে নিজেদের কল্পনা করি আর তারা কেমন অনুভব করে, তা বোঝার চেষ্টা করি, তখন আমরা যিহোবার প্রেম অনুকরণ করি।—গীত. ১০৩:১৩, ১৪.

যিশু যিহোবাকে অনুকরণ করেছিলেন এবং লোকেদের ভালোবেসেছিলেন

৩. যিশু লোকেদের সম্বন্ধে কেমন অনুভব করেছিলেন?

লোকেরা যখন কষ্টভোগ করে, তখন তাদের কেমন লাগে, তা যিশু বুঝতে পেরেছিলেন, এমনকী যদিও তিনি কখনো তাদের মতো পরিস্থিতিতে পড়েননি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি এটা জানতেন, অনেক লোক কঠিন জীবনযাপন করছিল। ধর্মীয় নেতারা তাদের কাছে মিথ্যা কথা বলেছিলেন আর এমন সব নিয়ম তৈরি করেছিলেন, যা ঈশ্বর দেননি। লোকেরা এই নেতাদের ভয় পেত। (মথি ২৩:৪; মার্ক ৭:১-৫; যোহন ৭:১৩) যদিও যিশু কখনোই এই নেতাদের ভয় পাননি ও তাদের মিথ্যা কথা বিশ্বাস করেননি, কিন্তু তিনি লোকেদের অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলেন। তাদের সঙ্গে কত খারাপভাবে আচরণ করা হচ্ছে, তা দেখে যিশু অনেক দুঃখ পেয়েছিলেন। তারা এমন অসহায় ছিল “যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) যিশু তাঁর পিতার কাছ থেকে লোকেদের ভালোবাসতে শিখেছিলেন আর তাদের প্রতি “স্নেহশীল ও কৃপাময়” হয়েছিলেন।—গীত. ১০৩:৮.

৪. যিশু যখন লোকেদের কষ্টভোগ করতে দেখেছিলেন, তখন তিনি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

যিশু যখন লোকেদের কষ্টভোগ করতে দেখেছিলেন, তখন তিনি তাদের সাহায্য করেছিলেন কারণ তিনি তাদের ভালোবাসতেন। তিনি একেবারে তাঁর পিতার মতো ছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা প্রচার করার জন্য দীর্ঘপথ ভ্রমণ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন আর তাই তাদের কোনো নিরিবিলি স্থানে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই সময়ে যিশু দেখতে পেয়েছিলেন, অনেক লোক তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের সাহায্য প্রয়োজন আর তাই ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও, তিনি “তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন।”—মার্ক ৬:৩০, ৩১, ৩৪.

যিহোবার মতো প্রেমময় হোন

৫, ৬. আমরা যদি যিহোবার মতো প্রেমময় হতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে? একটা উদাহরণ দিন। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

আমরা যদি যিহোবার মতো প্রেমময় হতে চাই, তাহলে আমাদের কী করতে হবে? একটা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন। একজন যুবক ভাইয়ের নাম অ্যালেন। তিনি এমন একজন বয়স্ক ভাইয়ের বিষয়ে চিন্তা করছেন, যে-ভাই ভালোমতো হাঁটতে পারেন না এবং যার দৃষ্টিশক্তিও বেশি ভালো নয়। অ্যালেন যিশুর এই কথাগুলো চিন্তা করেন: “তোমরা যেরূপ ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও।” (লূক ৬:৩১) তাই অ্যালেন নিজেকে প্রশ্ন করেন, ‘অন্যেরা আমার প্রতি কী করুক বলে আমি চাই?’ তিনি উত্তর দেন, ‘আমি চাই, তারা আমার সঙ্গে ফুটবল খেলুক!’ কিন্তু এই বয়স্ক ভাই দৌড়াতে ও ফুটবল খেলতে পারবেন না। তাই, অ্যালেনের আসলে নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি যদি এই ভাইয়ের জায়গায় থাকতাম, তাহলে অন্যেরা আমার প্রতি কী করুক বলে আমি চাইতাম?’

যদিও অ্যালেন এখনও যুবক, কিন্তু তিনি কল্পনা করার চেষ্টা করেন, বৃদ্ধ হলে তার পরিস্থিতি কেমন হবে। তিনি সেই বয়স্ক ভাইয়ের সঙ্গে সময় কাটান এবং মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনেন। এর ফলে তিনি বুঝতে শুরু করেন, সেই ভাইয়ের পক্ষে বাইবেল পড়া এবং প্রচারের সময় এক ঘর থেকে আরেক ঘরে হেঁটে যাওয়া অনেক কঠিন। তখন অ্যালেন বুঝতে পারেন, সেই ভাইকে কীভাবে সাহায্য করা যায় আর তিনি তা করার জন্য যথাসাধ্য করতে চান। অন্য লোকেরা কেমন অনুভব করে তা যখন আমরা বুঝতে পারি এবং তাদের প্রতি প্রেম দেখাই, তখন আমরা যিহোবার মতো প্রেমময় হই।—১ করি. ১২:২৬.

যিহোবার মতো সদয় হোন (৭ অনুচ্ছেদ দেখুন)

৭. আমাদের ভাই-বোনেরা কোন ধরনের পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা আমরা কীভাবে বুঝতে পারি?

অন্যেরা কোন ধরনের পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা বোঝা সবসময় সহজ নয়, বিশেষভাবে আমাদের যদি তাদের মতো পরিস্থিতিতে পড়ার অভিজ্ঞতা না থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে অনেকে কষ্টভোগ করে কারণ তারা হয়তো অসুস্থ অথবা কোনো আঘাত পেয়েছে কিংবা তাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বিষণ্ণতা অথবা প্রচণ্ড উদ্‌বিগ্নতা কিংবা অতীতে নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হওয়ার কারণে গভীর যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। অন্যেরা একা একা সন্তান মানুষ করছে কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যরা যিহোবার সেবা করে না। সকলের সমস্যা রয়েছে আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব সমস্যা আমাদের সমস্যার চেয়ে আলাদা। তা সত্ত্বেও, আমরা অন্যদের প্রতি প্রেম দেখাতে ও তাদের সাহায্য করতে চাই। তাহলে, আমরা কী করতে পারি? প্রত্যেক ব্যক্তির প্রয়োজন আলাদা। তাই, আমরা যদি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনি এবং তারা কেমন অনুভব করে, তা বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা তাদের সাহায্য করার সবচেয়ে ভালো উপায় খুঁজে বের করতে পারব। আমরা হয়তো তাদের সমস্যা সম্বন্ধে যিহোবা কেমন অনুভব করেন, সেটা তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি। অথবা আমরা হয়তো অন্যান্য উপায়ে তাদের সাহায্য করতে পারি। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করি।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৫; ১ পিতর ৩:৮.

যিহোবার মতো দয়ালু হোন

৮. কোন বিষয়টা যিশুকে সদয় হতে সাহায্য করেছিল?

যিহোবা সকল মানুষের প্রতি কৃপাবান বা দয়ালু। (লূক ৬:৩৫) আর যিশু ঠিক তাঁর পিতার মতো। পৃথিবীতে থাকাকালীন কোন বিষয়টা যিশুকে লোকেদের প্রতি দয়ালু হতে সাহায্য করেছিল? তাঁর কথা অথবা কাজ তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা তিনি কল্পনা করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার একজন পাপিষ্ঠা নারী যিশুর কাছে এসেছিলেন। তিনি অনেক কান্নাকাটি করছিলেন আর তার চোখের জলে যিশুর পা ভিজে গিয়েছিল। যিশু দেখতে পেয়েছিলেন, সেই নারী তার মন্দ কাজের জন্য দুঃখিত এবং অনুতপ্ত হয়েছেন। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি যদি তার প্রতি নির্দয় হন, তাহলে সেই নারী আরও দুঃখিত হয়ে পড়বেন। তাই, যিশু তার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করেছিলেন এবং তাকে ক্ষমা করেছিলেন। এই নারীর প্রতি যিশু যা করেছিলেন, সেই কাজের ব্যাপারে একজন ফরীশী একমত ছিলেন না। কিন্তু যিশু সেই ফরীশীর সঙ্গেও সদয়ভাবে কথা বলেছিলেন।—লূক ৭:৩৬-৪৮.

৯. কোন বিষয়টা আমাদেরকে যিহোবার মতো সদয় হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে? একটা উদাহরণ দিন।

কীভাবে আমরা যিহোবার মতো সদয় হতে পারি? কোনো কিছু বলার অথবা করার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে, যাতে আমরা অন্যদের প্রতি কোমল আচরণ দেখাতে পারি এবং তাদের অনুভূতিতে আঘাত না দিই। পৌল লিখেছিলেন, একজন খ্রিস্টানের জন্য “যুদ্ধ করা . . . উপযুক্ত নহে; কিন্তু” তিনি যেন “সকলের প্রতি কোমল” হন। (২ তীম. ২:২৪) উদাহরণ স্বরূপ, কিছু পরিস্থিতি বিবেচনা করুন এবং এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি কীভাবে সদয় হতে পারেন, তা চিন্তা করুন: আপনার কর্মকর্তা যদি তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে আপনি কেমন আচরণ করবেন? অনেক মাস ধরে কিংডম হলে আসেননি এমন একজন ভাই যদি সভাতে আসেন, তাহলে আপনি তাকে কী বলবেন? প্রচার করার সময় কোনো ব্যক্তি যদি আপনাকে বলেন, তিনি এখন ব্যস্ত তাই আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, তাহলে আপনি কীভাবে তার প্রতি দয়া দেখাতে পারেন? আপনার স্ত্রী যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করেন, নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা করার আগে আপনি তাকে কেন জানাননি, তাহলে আপনি কি তার সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলবেন? আমাদের কল্পনা করতে হবে, অন্যেরা কেমন অনুভব করছে এবং আমাদের কথা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারব, যিহোবার মতো সদয় হওয়ার জন্য আমাদের কী বলা ও করা উচিত।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:২৮.

যিহোবার মতো বিজ্ঞ হোন

১০, ১১. কীভাবে আমরা যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি এবং বিজ্ঞ হতে পারি? একটা উদাহরণ দিন।

১০ যিহোবার বিজ্ঞতা অতুলনীয় আর ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা তিনি দেখতে পারেন। যদিও আমরা ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা জানি না, কিন্তু তবুও আমরা বিজ্ঞতা দেখাতে পারি। কীভাবে? কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, সেটা আমাদের অথবা অন্যদের কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা আমরা কল্পনা করতে পারি। আমাদের ইস্রায়েলীয়দের মতো হওয়া উচিত নয়। যিহোবার অবাধ্য হলে কী ঘটবে, তা নিয়ে ইস্রায়েলীয়রা চিন্তা করেনি। আর তারা যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ও সেইসঙ্গে তিনি তাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করেনি। যেহেতু মোশি এই বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছিলেন, তাই তিনি জানতেন, ইস্রায়েলীয়রা যা করতে যাচ্ছে, তা মন্দ। তিনি বলেছিলেন: “উহারা যুক্তিবিহীন জাতি, উহাদের মধ্যে বিবেচনা নাই। আহা, কেন তাহারা জ্ঞানবান হইয়া এই কথা বুঝে না? কেন আপনাদের শেষদশা বিবেচনা করে না?”—দ্বিতীয়. ৩১:২৯, ৩০; ৩২:২৮, ২৯.

১১ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি ডেটিং করেন, তাহলে মনে রাখবেন, কারো প্রতি যখন আপনার রোমান্টিক আগ্রহ থাকে, তখন নিজের অনুভূতি ও যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এমন কিছু করে ফেলবেন না, যা যিহোবার সঙ্গে আপনার মূল্যবান সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে! এর পরিবর্তে, জ্ঞানবান হোন বা বিজ্ঞতা দেখান এবং বিপদ এড়িয়ে চলুন। যিহোবার এই বিজ্ঞ পরামর্শ মেনে চলুন: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।”—হিতো. ২২:৩.

আপনার চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করুন

১২. কীভাবে আমাদের চিন্তাভাবনা আমাদের ক্ষতি করতে পারে?

১২ একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাদের চিন্তার বিষয়গুলোকে আগুনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা আমাদের সাহায্য করতে পারে, আবার ক্ষতিও করতে পারে। আমরা যখন সতর্কতার সঙ্গে আগুন ব্যবহার করি, তখন আমরা এর সাহায্যে রান্নাবান্না করতে পারি। কিন্তু আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তাহলে সেই আগুন আমাদের ঘর পুড়িয়ে ফেলতে পারে আর এমনকী আমাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে। আমাদের চিন্তাভাবনা ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যেতে পারে। আমরা যিহোবার কাছ থেকে যা শিখি, তা নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন তা আমাদের জন্য উপকারজনক হয়। কিন্তু আমরা যদি সবসময় যৌন অনৈতিকতা নিয়ে চিন্তা করি এবং আমরা খারাপ কাজ করছি এমন কল্পনা করি, তাহলে আমাদের সেই আকাঙ্ক্ষা এতটাই প্রবল হয়ে উঠবে যে, আমরা হয়তো সত্যি সত্যিই সেই কাজ করে ফেলব। এর ফলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে।—পড়ুন, যাকোব ১:১৪, ১৫.

১৩. হবা তার জীবন সম্বন্ধে কী কল্পনা করেছিলেন?

১৩ আমরা প্রথম নারী হবার উদাহরণ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি। যিহোবা আদম ও হবাকে “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ,” সেটার ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। (আদি. ২:১৬, ১৭) কিন্তু শয়তান হবাকে বলেছিল: “কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” হবা এমন কল্পনা করেছিলেন, কোনটা ভালো ও কোনটা মন্দ সেই বিষয়ে তিনি যদি নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন, তাহলে তার জীবন আরও ভালো হবে। তিনি এই বিষয়টা নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করেছিলেন আর “দেখিলেন, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক।” তারপর কী হয়েছিল? “তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন; পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।” (আদি. ৩:১-৬) ফল স্বরূপ, “পাপ” ও “পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) যা মন্দ, তা করার বিষয়ে চিন্তা করে চলা হবার উচিত হয়নি!

১৪. যৌন অনৈতিকতা সম্বন্ধে বাইবেল আমাদের কোন কোন সাবধানবাণী দেয়?

১৪ অবশ্য, হবার পাপের সঙ্গে যৌন অনৈতিকতা জড়িত ছিল না। তবে বাইবেল আমাদের স্পষ্টভাবে সাবধান করে, যেন আমরা কোনোরকম যৌন অনৈতিকতায় রত হওয়ার বিষয়ে কল্পনা করে না চলি। যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।” (মথি ৫:২৮) এ ছাড়া, পৌল সাবধান করেছিলেন, যেন আমরা “দৈহিক কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার চিন্তায় . . . মন না দিই।”—রোমীয় ১৩:১৪, ইজি-টু-রিড ভারশন।

১৫. আমাদের কোন ধন সঞ্চয়ের বিষয়ে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত আর কেন?

১৫ এ ছাড়া, বাইবেল বলে, আমাদের যিহোবাকে খুশি করার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত, ধনী হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করে চলা উচিত নয়। এমনকী একজন ব্যক্তি ধনী হলেও তার টাকাপয়সা তাকে সুরক্ষা করতে পারে না। (হিতো. ১৮:১১) যিশু বলেছিলেন, একজন ব্যক্তি যদি অনেক ধন সঞ্চয় করেন অথচ যিহোবাকে তার জীবনে প্রথম স্থানে না রাখেন, তাহলে তিনি মূর্খ। তিনি ‘ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নন।’ (লূক ১২:১৬-২১) যিহোবাকে খুশি করে এমন বিষয়গুলো করার মাধ্যমে আমরা যখন ‘স্বর্গে ধন সঞ্চয়’ করি, তখন আমরা তাঁকে আনন্দিত করি আর সেইসঙ্গে নিজেরাও আনন্দিত হই। (মথি ৬:২০; হিতো. ২৭:১১) আর যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে মূল্যবান।

সবসময় দুশ্চিন্তা করবেন না

১৬. আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করি, তখন কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৬ আমরা যদি এই জগতে ধনী হওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে তা আমাদের অনেক দুশ্চিন্তার কারণ হবে। (মথি ৬:১৯) যিশু বলেছিলেন, যারা সবসময় টাকাপয়সা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে, তাদের জন্য ঈশ্বরের রাজ্যকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখা কঠিন হবে। (মথি ১৩:১৮, ১৯, ২২) এ ছাড়া, কেউ কেউ সবসময় এমন চিন্তা করে, তাদের প্রতি হয়তো মন্দ কিছু ঘটবে। কিন্তু, আমরা যদি দুশ্চিন্তা করেই চলি, তাহলে আমরা হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি কিংবা যিহোবার প্রতি আমাদের বিশ্বাস হারাতে শুরু করতে পারি। দুশ্চিন্তা করার পরিবর্তে, আমাদের এই আস্থা রাখতে হবে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন। বাইবেল বলে, “মনুষ্যের মনোব্যথা [‘দুশ্চিন্তার ভার,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] মনকে নত করে; কিন্তু উত্তম বাক্য তাহা হর্ষযুক্ত করে।” (হিতো. ১২:২৫) তাই, কোনো বিষয় নিয়ে যদি আপনার দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে এমন কারো সঙ্গে কথা বলুন, যিনি যিহোবার সেবা করেন এবং আপনাকে ভালোভাবে জানেন। আপনার বাবা অথবা মা, স্বামী অথবা স্ত্রী কিংবা কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপনাকে যিহোবার উপর আস্থা রাখার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন আর আপনার দুশ্চিন্তা কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারেন।

১৭. আমরা যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই, তখন যিহোবা কীভাবে আমাদের সাহায্য করেন?

১৭ আমরা কেমন অনুভব করি, তা যিহোবা অন্য যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে আরও ভালো বোঝেন। আর আমরা যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই, তখন তিনি আমাদের শান্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারেন। পৌল লিখেছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলি. ৪:৬, ৭) তাই, আপনি যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন, তখন সেই ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করুন, যারা যিহোবার সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বকে দৃঢ় রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে আর তাদের মধ্যে রয়েছে আপনার ভাই-বোনেরা, প্রাচীনরা, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস, স্বর্গদূতেরা এবং যিশু।

১৮. কীভাবে আমাদের কল্পনা করার ক্ষমতা আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৮ আমরা এই প্রবন্ধে শিখেছি, অন্য লোকেদের অনুভূতি বোঝার যে-ক্ষমতা আমাদের রয়েছে, তা যখন আমরা ব্যবহার করি, তখন আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করি। (১ তীম. ১:১১; ১ যোহন ৪:৮) আমরা যখন অন্যদের প্রতি প্রেম ও দয়া দেখাব, আমাদের কাজের ফলাফল নিয়ে চিন্তা করব এবং দুশ্চিন্তা করা এড়িয়ে চলব, তখন আমরা সুখী হব। তাই আসুন, রাজ্য শাসনের অধীনে জীবন কেমন হবে, আমরা তা কল্পনা করি এবং যিহোবাকে অনুকরণ করার জন্য যথাসাধ্য করি।—রোমীয় ১২:১২.