সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা কীভাবে দেখাতে পারি, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি?

আমরা কীভাবে দেখাতে পারি, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি?

“আমরা প্রেম করি, কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন।”—১ যোহন ৪:১৯

গান সংখ্যা: ৬, 

১, ২. যিহোবার প্রতি প্রেম প্রকাশ করার জন্য তিনি নিজে কীভাবে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন?

একজন বাবা, নিজে উদাহরণস্থাপন করার মাধ্যমে তার সন্তানদের সবচেয়ে ভালো উপায়ে শিক্ষা দিতে পারেন। তিনি যখন তার সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তখন তিনি তাদের এটা শিক্ষা দেন, কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়। আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের যেমনটা ভালোবাসেন, সেইরকম আর কেউই আমাদের ভালোবাসতে পারে না। “তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন” আর তাই আমরা শিখতে পারি, কীভাবে প্রেম প্রকাশ করতে হয়।—১ যোহন ৪:১৯.

কোন কোন উপায়ে যিহোবা এটা প্রকাশ করেছেন, তিনি “প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন”? বাইবেল বলে: “আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন।” (রোমীয় ৫:৮) আমাদের প্রেমময় পিতা যিহোবা, পাপ ও মৃত্যু থেকে আমাদের উদ্ধার করার জন্য তাঁর পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে দান করেছিলেন। এই অমূল্য উপহারের কারণে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে পেরেছি এবং তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। এই বিরাট ত্যাগস্বীকার করার মাধ্যমে যিহোবা উদাহরণস্থাপন করেছেন। তিনি আমাদের এই বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য আমাদের নিঃস্বার্থ ও উদার হতে হবে।—১ যোহন ৪:১০.

৩, ৪. কীভাবে আমরা যিহোবাকে দেখাতে পারি, আমরা তাঁকে ভালোবাসি?

প্রেম হচ্ছে যিহোবার প্রধান গুণ। তাই আমরা বুঝতে পারি, কেন যিশু এটা বলেছিলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞা হল: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মার্ক ১২:৩০) যিহোবা চান যেন আমরা “সমস্ত অন্তঃকরণ” দিয়ে তাঁকে ভালোবাসি। তাই আমরা যদি অন্য কাউকে অথবা অন্য কোনো কিছুকে তাঁর চেয়ে বেশি ভালোবাসি, তাহলে সেটা তাঁকে কষ্ট দেবে। তবে, তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা কেবল এক আবেগগত অনুভূতি নয়। যিহোবা এটাও চান, যেন আমরা তাঁকে আমাদের “সমস্ত মন” ও “সমস্ত শক্তি” দিয়ে ভালোবাসি। এর অর্থ হল, যিহোবার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আমরা যেভাবে চিন্তা করি ও কাজ করি, সেটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।—পড়ুন, মীখা ৬:৮.

তাই আমাদের সমস্ত সত্তা ও আমাদের যা-কিছু আছে, সেই সমস্ত কিছু দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে। তাঁকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখার মাধ্যমে আমরা দেখাই, আমরা সত্যিই তাঁকে ভালোবাসি। আগের প্রবন্ধে আমরা চারটে উপায় সম্বন্ধে শিখেছি, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর সন্তানদের প্রতি অসীম প্রেম প্রকাশ করেন। আসুন এখন আমরা দেখি, কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম গভীর করতে পারি আর সেইসঙ্গে তাঁকে দেখাতে পারি, আমরা তাঁকে ভালোবাসি।

যিহোবার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

৫. যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলো নিয়ে আমরা যখন চিন্তা করি, তখন আমরা কী করতে চাই?

আপনাকে যখন কেউ কোনো উপহার দেয়, তখন খুব সম্ভবত আপনি তার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আর আপনি যেহেতু সেই উপহারকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন, তাই আপনি সেটা ব্যবহারও করেন। যাকোব লিখেছিলেন: “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে, যাঁহাতে অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।” (যাকোব ১:১৭) যিহোবা আমাদের জীবনের জন্য এবং সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু জুগিয়েছেন বলে আমরা তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাই আমরা বুঝতে পারি তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন আর আমরাও যে তাঁকে ভালোবাসি, তা আমরা দেখাতে চাই। আপনি কি এমনটা অনুভব করেন?

৬. সবসময় যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য ইস্রায়েলীয়দের কী করতে হতো?

ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার কাছ থেকে অনেক উত্তম বিষয় লাভ করেছিল। শত শত বছর ধরে, তিনি বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে তাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু জুগিয়ে দিয়েছিলেন। (দ্বিতীয়. ৪:৭, ৮) আর ইস্রায়েলীয়রা এসব আইনের বাধ্য থাকার মাধ্যমে যিহোবার প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা যখন যিহোবার উদ্দেশে কিছু উৎসর্গ করত, তখন তাদের ভূমির “আশুপক্ক ফলের অগ্রিমাংশ” দিতে হতো। (যাত্রা. ২৩:১৯) ইস্রায়েলীয়রা জানত, তারা যদি যিহোবার বাধ্য থাকে এবং তাঁর উদ্দেশে তাদের অগ্রিমাংশ বা সবচেয়ে ভালো অংশ দান করে, তাহলে তিনি তাদের সবসময় আশীর্বাদ করবেন।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৭-১১.

৭. যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার জন্য আমরা কীভাবে আমাদের ‘ধন’ ব্যবহার করতে পারি?

আমরাও আমাদের ‘ধন’ যিহোবাকে দান করার মাধ্যমে দেখাতে পারি, আমরা তাঁকে ভালোবাসি। (হিতো. ৩:৯) আমাদের যা-কিছু আছে, তা যিহোবার সম্মানে ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা তাঁকে আমাদের ধন দিতে পারি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা নিজেদের মণ্ডলীর ও সারা পৃথিবীর রাজ্যের কাজকে সমর্থন করার জন্য দান দিতে পারি। আমাদের যথেষ্ট কিংবা সামান্য, যা-ই থাকুক না কেন, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার জন্য আমরা সবাই তা ব্যবহার করতে পারি। (২ করি. ৮:১২) তবে, আরও কিছু উপায়ে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করতে পারি।

৮, ৯. আরেকটা কোন উপায়ে আমরা দেখাতে পারি, যিহোবাকে আমরা ভালোবাসি আর মাইক ও তার পরিবার কী করেছিলেন?

যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেন আমরা রাজ্যকে প্রথমে রাখি এবং আমাদের খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যাপারে উদ্‌বিগ্ন না হই। আমাদের পিতা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয় জুগিয়ে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। (মথি ৬:৩১-৩৩) আমরা যিহোবার উপর নির্ভর করি এবং এটা জানি, তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন। কারণ আপনি যখন সত্যিই কাউকে ভালোবাসেন, তখন আপনি তার উপর নির্ভর করেন। আসলে, যিহোবার উপর আমরা যত বেশি নির্ভর করি, তত বেশি আমরা দেখাই, আমরা তাঁকে ভালোবাসি। (গীত. ১৪৩:৮) তাই নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত: আমার বিভিন্ন পরিকল্পনা আর আমি যেভাবে আমার সময় ও শক্তি ব্যবহার করি, সেটা কি দেখায়, আমি সত্যিই যিহোবাকে ভালোবাসি? প্রতিদিন আমার বিভিন্ন চাহিদার যত্ন নেওয়ার জন্য আমি কি যিহোবার উপর নির্ভর করি?

ভাই মাইক এবং তার পরিবার যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই, ভাই মাইক সবসময় অন্য কোনো দেশে গিয়ে প্রচার করতে চেয়েছিলেন। এমনকী বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা হওয়ার পরও তার সেই আকাঙ্ক্ষা ছিল। ভাই মাইক ও তার পরিবার আমাদের সেই ভাই-বোনদের বিষয়ে পড়েছিলেন, যারা যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে সেবা করছেন। সেগুলো পড়ে তারা তাদের জীবনকে সাদাসিধে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারা তাদের বাড়ি বিক্রি করে একটা অ্যপার্টমেন্টে উঠেছিলেন। ভাই মাইকের ব্যাবসা ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা। তিনি যে-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কাজ করতেন, সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিলেন আর কীভাবে অন্য দেশ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ব্যাবসা দেখাশোনা করা যায়, তা খুঁজে বের করেছিলেন। ফল স্বরূপ, ভাই মাইক ও তার পরিবার অন্য দেশে যেতে পেরেছিলেন এবং সেখানে পরিচর্যা অনেক উপভোগ করতে পেরেছিলেন। ভাই বলেন: “আমরা মথি ৬:৩৩ পদে বর্ণিত যিশুর কথার সত্যতা দেখতে পেরেছি।”

যিহোবা আপনাকে যা শিক্ষা দেন, তা নিয়ে ধ্যান করুন

১০. রাজা দায়ূদের মতো, যিহোবা সম্বন্ধে আমরা যা জানতে পারি, তা নিয়ে ধ্যান করা কেন আমাদের জন্য উপকারজনক?

১০ রাজা দায়ূদ একবার লিখেছিলেন: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।” এরপর তিনি আরও বলেন: “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক; সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক।” দায়ূদ যিহোবার উত্তম ব্যবস্থা ও অপূর্ব সৃষ্টি নিয়ে যত বেশি ধ্যান করেছিলেন, ততই তিনি যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিলেন এবং তাঁর প্রতি নিজের প্রেম প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। দায়ূদ বলেছিলেন: “আমার মুখের বাক্য ও আমার চিত্তের ধ্যান তোমার দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হউক, হে সদাপ্রভু, আমার শৈল, আমার মুক্তিদাতা।”—গীত. ১৯:১, ৭, ১৪.

১১. যিহোবা আমাদের যে-জ্ঞান দিয়েছেন, তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার জন্য আমরা কীভাবে সেই জ্ঞান ব্যবহার করতে পারি? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১১ বর্তমানে, যিহোবা নিজের সম্বন্ধে এবং তাঁর উদ্দেশ্য, তাঁর সৃষ্টি ও তাঁর বাক্য সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেন। এই জগৎ লোকেদের জ্ঞান অর্জন করার বিষয়ে উৎসাহিত করে, তবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ফলে প্রায় সময়ই ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসা হারিয়ে যায়। অন্যদিকে, যিহোবা কেবল আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে বলেন না কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি আমাদের বিজ্ঞ হতে সাহায্য করেন। তিনি চান যেন আমরা যা শিখি, তা নিজের ও অন্যদের উপকারের জন্য ব্যবহার করি। (হিতো. ৪:৫-৭) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি চান যেন আমরা অন্যদের কাছে “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান জানাই এবং তাদের পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করি। (১ তীম. ২:৪) তাই, যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য এবং এটা মানবজাতির জন্য যা নিয়ে আসবে সেই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে, আমরা যিহোবা ও লোকেদের প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করি।—পড়ুন, গীতসংহিতা ৬৬:১৬, ১৭.

১২. যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া একটা উপহার সম্বন্ধে একজন যুবতী বোন কী বলেছিলেন?

১২ এমনকী অল্পবয়সিরাও, যিহোবার কাছ থেকে যা পেয়েছে এবং তিনি তাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো নিয়ে ধ্যান করতে পারে। শ্যানন নামে একজন বোনের এখনও একটা সম্মেলনের কথা মনে আছে। সেই সময়ে, তার বয়স ছিল ১১ বছর আর তার বোনের বয়স ১০ বছর। “ঈশ্বরীয় ভক্তি” জেলা সম্মেলনের একটা অধিবেশনে সকল অল্পবয়সিকে নির্ধারিত স্থানে বসতে বলা হয়েছিল আর তাদের মধ্যে শ্যানন ও তার বোনও ছিলেন। প্রথমে শ্যানন কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন প্রত্যেক অল্পবয়সিকে একটা করে যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি) বই দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি অনেক অবাক হয়েছিলেন। এই অপূর্ব উপহার পেয়ে যিহোবা সম্বন্ধে তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন? তিনি বলেন: “সেই সময়েই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, যিহোবা হলেন বাস্তব ব্যক্তি আর তিনি আমাকে খুবই ভালোবাসেন। আমাদের মহান ঈশ্বর যিহোবা উদার হস্তে এই ধরনের অপূর্ব ও উপযুক্ত উপহার দেন বলে আমরা কতই-না আনন্দিত!”

যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত শাসন গ্রহণ করুন

১৩, ১৪. যিহোবা যখন আমাদের শাসন করেন, তখন আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত এবং কেন?

১৩ বাইবেল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: “সদাপ্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাস্তি প্রদান করেন, যেমন পিতা প্রিয় পুত্ত্রের প্রতি করেন।” (হিতো. ৩:১২) আমরা যখন যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত শাসন গ্রহণ করি এবং আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁকে সুযোগ দিই, তখন আমরা সঠিক বিষয় করতে শিখি আর আমাদের মনে শান্তি থাকে। অবশ্য, “কোন শাসনই আপাততঃ আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্তু দুঃখের বিষয় বোধ হয়।” (ইব্রীয় ১২:১১) তা সত্ত্বেও, যিহোবা যখন আমাদের শাসন করেন, তখন আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? আমাদের কখনো যিহোবার পরামর্শ উপেক্ষা করা উচিত নয় কিংবা আমরা যা শুনি, তা যদি আমাদের ভালো না লাগে, তাহলে বিরক্তি পুষে রাখা উচিত নয়। আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি আর তাই আমরা তাঁর কথা শুনি এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করি।

১৪ মালাখির দিনে, অনেক যিহুদি যিহোবার কথায় কান দেয়নি। তাদের দেওয়া বলি যে ঈশ্বরকে খুশি করত না, তা নিয়ে তারা চিন্তিত ছিল না। তাই যিহোবা এই বিষয়ে তাদের দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (পড়ুন, মালাখি ১:১২, ১৩.) আসলে, যিহোবা তাদের অনেক বার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই কারণে তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদের উপরে অভিশাপ প্রেরণ করিব, ও তোমাদের আশীর্ব্বাদের পাত্র সকলকে শাপ দিব।” (মালাখি ২:১, ২) এটা স্পষ্ট যে, আমরা যদি সবসময় যিহোবার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করি অথবা এই পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ নয় এমনটা মনে করি, তাহলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে।

জগতে যা জনপ্রিয়, সেটা নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে যিহোবা কী চান, তা নিয়ে চিন্তা করুন (১৫ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৫. কোন ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে?

১৫ শয়তানের জগৎ লোকেদের গর্বিত ও স্বার্থপর মনোভাব গড়ে তোলার জন্য ইন্ধন জোগায়। অনেকে, তাদের সংশোধন করা হোক অথবা কী করতে হবে তা বলে দেওয়া হোক, সেটা পছন্দ করে না। কেউ কেউ কেবল পরামর্শ শুনতে হবে বলে তা শোনে। আমাদের এইরকম মনোভাব রাখা উচিত নয়। বাইবেল আমাদের বলে, “এই যুগের অনুরূপ হইও না।” এর পরিবর্তে, আমাদের বুঝতে হবে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান এবং কোন বিষয়গুলো তাঁকে খুশি করে। (রোমীয় ১২:২) উপযুক্ত সময়ে আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করেন। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, কীভাবে বন্ধুবান্ধব বাছাই করতে হবে এবং অবসর সময়ে কী করব, সেই বিষয়ে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা যখন স্বেচ্ছায় যিহোবার শাসন গ্রহণ করি এবং তাঁকে খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় রদবদল করি, তখন আমরা দেখাই, তাঁর নির্দেশনা পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ এবং আমরা তাঁকে সত্যিই ভালোবাসি।—যোহন ১৪:৩১; রোমীয় ৬:১৭.

সাহায্য ও সুরক্ষার জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করুন

১৬, ১৭. (ক) কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন আমাদের যিহোবার চিন্তাভাবনা বোঝার চেষ্টা করতে হবে? (খ) ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উপর নির্ভর করার পরিবর্তে কী করেছিল?

১৬ ছোটো সন্তানরা সাহায্য ও সুরক্ষার জন্য তাদের বাবা-মায়ের উপর নির্ভর করে। এমনকী প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরাও হয়তো তাদের বাবা-মায়ের কাছে সাহায্য চেয়ে থাকে। কারণ তারা বুঝতে পারে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব যদিও নিজেদের, কিন্তু তাদের বাবা-মা উত্তম উপদেশ দিতে পারেন। আমাদের পিতা যিহোবা, নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমাদের দিয়েছেন। তবে আমরা যেহেতু সত্যিকার অর্থেই তাঁর উপর নির্ভর করি এবং তাঁকে ভালোবাসি, তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আমরা সবসময় তাঁর কাছে সাহায্য চাই এবং তিনি কী চিন্তা করেন, তা বোঝার জন্য যথাসাধ্য করি। আমরা যদি যিহোবার উপর নির্ভর করি, তাহলে যা সঠিক তা করার জন্য তিনি আমাদের পবিত্র আত্মা দেবেন।—ফিলি. ২:১৩.

১৭ শমূয়েলের সময়ে, ইস্রায়েলীয়রা পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে, সেই বিষয়ে যিহোবার কাছে জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে তারা এই কথা বলেছিল: “আইস, আমরা শীলো হইতে আপনাদের নিকটে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক আনাই, যেন তাহা আমাদের মধ্যে আসিয়া শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার করে।” সেই সিদ্ধান্তের পরিণতি কী হয়েছিল? “মহাসংহার হইল, কেননা ইস্রায়েলের মধ্যে ত্রিশ সহস্র পদাতিক মারা পড়িল। আর ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইল।” (১ শমূ. ৪:২-৪, ১০, ১১) ইস্রায়েলীয়রা মনে করেছিল, শুধুমাত্র নিয়ম-সিন্দুক তাদের সঙ্গে থাকলেই যিহোবা তাদের সাহায্য ও সুরক্ষা করবেন। কিন্তু তারা যিহোবার কাছে সাহায্য চায়নি কিংবা তিনি কী মনে করেন, তা জানার চেষ্টা করেনি। এর পরিবর্তে, তারা মনে করেছিল, তাদের চিন্তাভাবনা সঠিক আর এর ফল স্বরূপ তারা মারাত্মক পরিণতি ভোগ করেছিল।—পড়ুন, হিতোপদেশ ১৪:১২.

১৮. যিহোবার উপর নির্ভর করার বিষয়ে বাইবেল আপনাকে কী শিক্ষা দেয়?

১৮ একজন গীতরচক, যিনি যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর উপর নির্ভর করতেন, তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখ; কেননা আমি আবার তাঁহার স্তব করিব; তিনি আমার মুখের পরিত্রাণ ও আমার ঈশ্বর। আমার প্রাণ আমার অন্তরে অবসন্ন হইতেছে; সেইজন্য আমি তোমাকে স্মরণ করিতেছি।” (গীত. ৪২:৫, ৬) আপনিও কি যিহোবা সম্বন্ধে এমন অনুভব করেন? আপনি কি তাঁর নিকটবর্তী বোধ করেন ও তাঁর উপর নির্ভর করেন? যদি তা করেন, তাহলে আপনি হয়তো যিহোবার উপর আরও বেশি নির্ভর করতে সমর্থ হবেন। বাইবেল আমাদের বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতো. ৩:৫, ৬.

১৯. আপনি যে যিহোবাকে ভালোবাসেন, তা আপনি কীভাবে প্রকাশ করবেন?

১৯ যিহোবা প্রথমে আমাদের প্রতি প্রেম দেখানোর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, কীভাবে প্রেম প্রকাশ করতে হয়। তিনি আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন এবং তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসেন, আসুন আমরা সবসময় সেই বিষয়ে চিন্তা করি। আর আসুন আমরা তাঁকে দেখাই, আমরা আমাদের সমস্ত অন্তকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসি।—মার্ক ১২:৩০.