সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চরম দরিদ্রতা আসলে কেমন?

চরম দরিদ্রতা আসলে কেমন?

চরম দরিদ্রতা আসলে কেমন?

চরম দরিদ্রতা জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটার অর্থ যথেষ্ট খাবার, জল ও জ্বালানি না থাকা আর সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত বাসস্থানের, স্বাস্থ্যেসবার ও শিক্ষার অভাব। একশো কোটি লোক এর শিকার যেটা মোটামুটিভাবে ভারতের সমগ্র জনসংখ্যার সমান। কিন্তু, পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মতো জায়গায় অধিকাংশ লোকেরা কখনোই এমন কোনো ব্যক্তিকে জানে না যিনি চরম দরিদ্রতার মধ্যে রয়েছেন। তাই, আসুন এখন আমরা এমন কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিত হই।

অ্যাম্বারুশিমা তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় বাস করেন। ষষ্ঠ সন্তানটি ম্যালেরিয়ায় মারা গিয়েছিল। তিনি বলেন: “আমার বাবাকে তার জমি ছয়টা অংশে ভাগ করতে হয়েছিল। আমার অংশটা এতই অল্প ছিল যে, আমাকে আমার পরিবার নিয়ে একটা শহরে চলে যেতে হয়েছিল। আমার স্ত্রী ও আমি পাথরের ও বালির বস্তা বহন করার কাজ করি। আমাদের ঘরে কোনো জানালা নেই। আমরা পুলিশ স্টেশনের কুয়ো থেকে জল নিয়ে আসি। সাধারণত দিনে আমাদের একবারই খাবার জোটে কিন্তু যখন কোনো কাজ থাকে না, তখন সারাদিন আমরা না খেয়েই থাকি। যখন এইরকম অবস্থা হয়, তখন আমি ঘর থেকে চলে যাই কারণ খাবারের জন্য ছেলেমেয়েদের কান্নাকাটি শোনা আমি সহ্য করতে পারি না।”

বিক্টর ও কারমেন মুচির কাজ করে। পাঁচ সন্তান নিয়ে তারা বলিভিয়ার এক বিচ্ছিন্ন শহরে বাস করে। তারা ভাঙাচোরা একটা ইটের বাড়িতে একটা ঘর ভাড়া করে থাকে, যেটার টিনের ছাদটা ফুটো এবং যেখানে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। স্কুলে এত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যে, বিক্টরকে তার মেয়ের জন্য একটা ডেস্ক তৈরি করে দিতে হয়েছিল যাতে সে স্কুলে যেতে পারে। সেই দম্পতিকে রান্না করার এবং পানীয় জল ফোটানোর জন্য জ্বালানি কাঠ জোগাড় করতে দশ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। “আমাদের কোনো টয়লেট নেই,” কারমেন বলেন। “তাই, আমাদেরকে নদীতে যেতে হয় যেটাতে লোকেরা স্নানও করে এবং নোংরাও ফেলে। ছেলেমেয়েরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে।”

ফ্রান্সিসকু ও ইলিইডিয়া মোজাম্বিকের এক গ্রামাঞ্চলে বাস করে। তাদের চারজন ছোটো ছেলেমেয়ে বেঁচে আছে; আরেকটা সন্তান ম্যালেরিয়ায় মারা গিয়েছিল কারণ একটা হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য তাকে ভরতি নেয়নি। এই দম্পতি তাদের জমির ছোটো অংশে যতটা পরিমাণ ধান ও মিষ্টি আলু চাষ করে সেটা তাদের তিন মাসই খাবার জোগায়। ফ্রান্সিসকু বলেন: “কখনো কখনো বৃষ্টি হয় না বা চোরেরা ফসল চুরি করে আর তাই আমি বাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহৃত বাঁশের সরু টুকরো কেটে ও তা বিক্রি করে অল্প কিছু টাকা জোগাড় করি। এ ছাড়া, আমরা ঝোপঝাড় থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করি যেটার জন্য দুই ঘন্টা পথ হাঁটতে হয়। আমার স্ত্রী ও আমি একটা করে কাঠের বোঝা বয়ে নিয়ে আসি, একটা পুরো সপ্তাহের রান্নার জন্য এবং আরেকটা বিক্রির জন্য।”

অনেকে মনে করে যে, এমন এক জগৎ যেখানে প্রত্যেক ৭ জনের মধ্যে ১ জন অ্যাম্বারুশিমা, বিক্টর ও ফ্রান্সিসকুর মতো জীবনযাপন করছে আর অন্যদিকে কোটি কোটি লোক প্রচুর সমৃদ্ধি উপভোগ করছে, সেই জগতে নিশ্চয়ই মারাত্মক কিছু ভুল ও অন্যায় রয়েছে। কেউ কেউ এই বিষয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে। পরবর্তী প্রবন্ধটি তাদের প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। (w১১-E ০৬/০১)

[২, ৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কারমেন তার দুটো সন্তানের সঙ্গে, নদী থেকে জল তুলছেন