সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জগতের গুপ্ত শাসক প্রকাশ হয়ে পড়েছে

জগতের গুপ্ত শাসক প্রকাশ হয়ে পড়েছে

জগতের গুপ্ত শাসক প্রকাশ হয়ে পড়েছে

একবার যিশু লোকেদেরকে বলেছিলেন যে, “জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে।” পরে তিনি আরও বলেছিলেন যে, ‘তাঁহাতে জগতের অধিপতির কিছুই নাই’ এবং “এ জগতের অধিপতি বিচারিত হইয়াছে।” (যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০; ১৬:১১) যিশু কার সম্বন্ধে কথা বলছিলেন?

যিশু “এ জগতের অধিপতি” বা শাসক সম্বন্ধে যা বলছিলেন, তা বিবেচনা করলে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয় যে, তিনি নিশ্চয় তাঁর পিতা যিহোবা ঈশ্বরকে নির্দেশ করছিলেন না। তাহলে কে “এ জগতের অধিপতি”? কীভাবে সে “নিক্ষিপ্ত” হবে আর কীভাবে সে “বিচারিত হইয়াছে”?

“এ জগতের অধিপতি” নিজেকে প্রকাশ করে

ঠিক যেমন এক সুনিপুণ অপরাধী তার ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করে, তেমনি দিয়াবলও ঈশ্বরের পুত্র যিশুকে পরীক্ষা করার সময় তা-ই করেছিল। যিশুকে জগতের “সমস্ত রাজ্য” দেখানোর পর, শয়তান তাঁকে এই প্রস্তাব দিয়েছিল: “তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও এই সকলের প্রতাপ দিব; কেননা ইহা আমার কাছে সমর্পিত হইয়াছে, আর আমার যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দান করি; অতএব তুমি যদি আমার সম্মুখে পড়িয়া প্রণাম কর, তবে এ সকলই তোমার হইবে।”—লূক ৪:৫-৭.

দিয়াবল যদি কেবলমাত্র এক মন্দ গুণ হতো, কেউ কেউ যেমনটা ইঙ্গিত দিয়ে থাকে, তাহলে এই পরীক্ষাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? যিশু কি কোনো ভিতরের আকাঙ্ক্ষা অথবা দ্বন্দ্বের দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছিলেন, যা সম্ভবত তাঁর বাপ্তিস্মের পরে ঘটেছিল? যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে এটা বলা যেতে পারে যে, “তাঁহাতে পাপ নাই”? (১ যোহন ৩:৫) মানবজাতির ওপর দিয়াবলের ক্ষমতাকে অস্বীকার না করে, যিশু আসলে তাকে “জগতের অধিপতি” হিসেবে উল্লেখ করার দ্বারা এটাকে নিশ্চিত করেছিলেন ও তাকে “নরঘাতক” এবং “মিথ্যাবাদী” বলে বর্ণনা করেছিলেন।—যোহন ১৪:৩০; ৮:৪৪.

দিয়াবলের সঙ্গে খ্রিস্টের মুখোমুখি হওয়ার ৬০ বছরেরও বেশি সময় পরে, প্রেরিত যোহন খ্রিস্টানদেরকে এই বলে দিয়াবলের জোরালো প্রভাব সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” এ ছাড়া, যোহন এও বলেছিলেন যে, সেই পাপাত্মা “সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।” (১ যোহন ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) স্পষ্টতই, বাইবেল এক অদৃশ্য আত্মাকে “জগতের অধিপতি” বলে উল্লেখ করে। কিন্তু সে কি একাই ভ্রান্তি জন্মাচ্ছে?

জগতের শাসক তার সঙ্গীদেরকে ক্ষমতা প্রদান করে

বিশ্বাসের পক্ষে খ্রিস্টানদের যুদ্ধ সম্বন্ধে লেখার সময়, প্রেরিত পৌল স্পষ্টভাবে তাদের চরম শত্রুদেরকে শনাক্ত করেছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (ইফিষীয় ৬:১২) তাই, এই যুদ্ধ মানুষের পরিধিকে ছাড়িয়ে যায়, কারণ তা “রক্তমাংসের সহিত নয়,” কিন্তু “দুষ্টতার আত্মাগণের” বিরুদ্ধে হয়ে থাকে।

সবচেয়ে আধুনিক বাইবেল অনুবাদগুলো অনুসারে, এখানে ‘দুষ্টতার আত্মাগণ’ বলতে এক নৈর্ব্যক্তিক মন্দ গুণকে নয় বরং শক্তিশালী দুষ্ট আত্মিক ব্যক্তিদেরকে নির্দেশ করে। তাই, দিয়াবল অন্য সেই বিদ্রোহী দূতদের মাধ্যমে, যারা স্বর্গে ‘আপনাদের নিজ বাসস্থান’ ত্যাগ করেছিল, তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আসছে।—যিহূদা ৬.

বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীমূলক দানিয়েলের বই জানায় যে, কীভাবে এই ‘জগৎপতিরা’ প্রাচীনকাল থেকে জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সহযিহুদিরা, যারা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিলের বন্দিদশা থেকে যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল, তাদের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে ভাববাদী দানিয়েল তাদের জন্য তিন সপ্তাহ ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। ভাববাদীকে আশ্বস্ত করার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত একজন স্বর্গদূত তাকে বলেছিলেন যে, কেন তার আসতে দেরি হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: ‘পারস্যরাজ্যের অধ্যক্ষ একুশ দিন পর্য্যন্ত আমার প্রতিকূলে দাঁড়াইয়াছিলেন।’—দানিয়েল ১০:২, ১৩.

কে এই ‘পারস্যের অধ্যক্ষ’? স্পষ্টতই স্বর্গদূত পারস্যের রাজা কোরসকে নির্দেশ করছিলেন না যিনি সেই সময়ে দানিয়েল ও তার লোকেদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া, কীভাবে একজন মানব রাজা তিন সপ্তাহ ধরে এক আত্মিক প্রাণীকে বাধা দিতে পারতেন যখন কিনা একজন স্বর্গদূত কেবল এক রাতেই ১,৮৫,০০০ জন শক্তিশালী যোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন? (যিশাইয় ৩৭:৩৬) এই বিরোধী ‘পারস্যের অধ্যক্ষ’ দিয়াবলের একজন সঙ্গীই অর্থাৎ একজন মন্দদূত হতে পারত যাকে পারস্য সাম্রাজ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। বিবরণের শেষের দিকে ঈশ্বরের দূত বলেছিলেন যে, তাকে আরও একবার “পারস্যের অধ্যক্ষের” এবং আরেকটা মন্দদূত অধ্যক্ষ ‘যবনের [“গ্রীসের,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] অধ্যক্ষের’ সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।—দানিয়েল ১০:২০.

এটা থেকে আমরা কোন উপসংহারে আসতে পারি? সহজভাবে বললে, প্রকৃতপক্ষেই অদৃশ্য ‘জগৎপতিরা,’ মন্দদূত অধ্যক্ষরা রয়েছে যারা তাদের নেতা, শয়তান দিয়াবলের কর্তৃত্বের অধীনে মিলিতভাবে জগতের ওপর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের লক্ষ কী রয়েছে?

জগতের শাসক তার আসল পরিচয় প্রকাশ করে

বাইবেলের শেষ বই, প্রকাশিত বাক্যে প্রেরিত যোহন বর্ণনা করেন যে, প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল হিসেবে যিশু কীভাবে দিয়াবল ও তার মন্দদূতদেরকে পরাজিত করেন এবং স্বর্গ থেকে তাদের বিতাড়িত করার ফল স্বরূপ ধ্বংসাত্মক পরিণতিগুলো সম্বন্ধে বলেন। আমরা পড়ি: ‘পৃথিবীর সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।’—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২.

কীভাবে দিয়াবল দেখিয়েছে যে সে অতিশয় রাগাপন্ন? অনেক সাংঘাতিক অপরাধী তাদের কাজকে সম্পাদন করার জন্য যা কিছুই করার প্রয়োজন হোক না কেন, তা করতে ইচ্ছুক থাকে। একইভাবে, শয়তান ও তার মন্দদূতেরা তাদের সঙ্গে পৃথিবী ও এর অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। তার সময় অল্প এটা জেনে দিয়াবল তার নিয়ন্ত্রাধীনে মানব সমাজের একটা মুখ্য উপাদানকে—বড়ো ব্যবসাকে—ব্যবহার করে আসছে যাতে তা অনেক জিনিস কেনার অনিয়ন্ত্রিত মনোভাবকে তুলে ধরে, যা প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী পরিবেশের ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে আর এভাবে মানবজাতির রক্ষা পাওয়াকে হুমকির মুখে ফেলছে।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; ১৮:১১-১৭.

মানব ইতিহাসের শুরু থেকে, দিয়াবলের ক্ষমতা অর্জন করার লোভ রাজনীতি ও ধর্মের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রকাশিত বাক্যের বই রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এক বন্য পশু হিসেবে বর্ণনা করে যাকে দিয়াবল “মহৎ কর্ত্তৃত্ব” প্রদান করেছে। এ ছাড়া, এটি রাজনীতি ও ধর্মের লজ্জাজনক মিত্রতাকে ঘৃণ্য আধ্যাত্মিক ব্যভিচার হিসেবে বর্ণনা করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৩:২; ১৭:১, ২) শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা উৎপীড়ন, দাসত্ব, যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘর্ষের বিষয়ে চিন্তা করুন, যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন হারিয়েছে। কেউ কি সততার সঙ্গে বলতে পারে যে, মানব ইতিহাসের পাতাগুলোকে কলঙ্কিত করেছে এমন শিহরণজনক ঘটনাগুলো মানুষের সাধারণ কাজ ছিল? অথবা এগুলো কি অদৃশ্য মন্দ আত্মাদের স্বীয়স্বার্থে করা কাজের ফল ছিল?

বাইবেল নির্ভূলভাবে সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত ও প্রকাশ করে, যে মানব নেতাদের ও বিশ্বশক্তিগুলোকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগিয়ে আসছে। জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যা-ই হোক না কেন, মানব সমাজ এর শাসকের ব্যক্তিত্ব ও তার কাজকে সম্পাদন করার জন্য যা কিছুই করার প্রয়োজন হোক না কেন, তা করার জন্য তার ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে থাকে। মানবজাতি আর কত কাল ধরে দিয়াবলের শাসনব্যবস্থার অধীনে কষ্টভোগ করবে?

শীঘ্র দিয়াবলকে নিষ্ক্রিয় করা হবে

প্রথম শতাব্দীতে, পৃথিবীতে খ্রিস্টের কাজ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, দিয়াবল ও তার মন্দদূতদেরকে শীঘ্র ধ্বংস করা হবে। যিশুর শিষ্যরা যখন বর্ণনা করেছিল যে, কীভাবে তারা অদৃশ্য মন্দদূতদের বের করেছিল, তখন তিনি তাদের বলেছিলেন: “আমি শয়তানকে বিদ্যুতের ন্যায় স্বর্গ হইতে পতিত দেখিতেছিলাম।” (লূক ১০:১৮) এই কথাগুলো বলার দ্বারা যিশু এই জগতের শাসকের ওপর তাঁর ভবিষ্যৎ বিজয় সম্বন্ধে আনন্দ প্রকাশ করছিলেন, যা যিশু প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল হিসেবে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর ঘটার ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯) বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অধ্যয়ন করা ইঙ্গিত দেয় যে, এই বিজয় স্বর্গে ১৯১৪ সালে বা এর কিছু পরেই ঘটেছিল। *

সেই সময় থেকে দিয়াবল জানে যে, তার ধ্বংস হওয়ার আগের অবশিষ্ট সময় খুবই অল্প। যদিও ‘সমস্ত জগৎ তাহার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে’ কিন্তু আজকে লক্ষ লক্ষ লোক তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার দ্বারা ভ্রান্ত হয়নি। বাইবেল তার প্রকৃত পরিচয় এবং তার কল্পনা বা চাতুরীগুলোর বিষয়ে তাদের চোখ খুলে দিয়েছে। (২ করিন্থীয় ২:১১) তারা সহখ্রিস্টানদের প্রতি পৌলের কথাগুলো থেকে এই আশা লাভ করে: “শান্তির ঈশ্বর ত্বরায় শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করিবেন।” *রোমীয় ১৬:২০.

শীঘ্র দিয়াবলকে নিষ্ক্রিয় করা হবে! খ্রিস্টের প্রেমময় শাসনাধীনে ধার্মিক মানবজাতি ঈশ্বরের রূপক পাদপীঠ, পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে। দৌরাত্ম্য, বিদ্বেষ এবং লোভ চিরকালের জন্য দূরীভূত হবে। বাইবেল বলে, “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না।” (যিশাইয় ৬৫:১৭) যারা এই জগতের গুপ্ত শাসক ও তার কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয় তাদের সকলের জন্য কী এক স্বস্তি! (w১১-E ০৯/০১)

[পাদটীকাগুলো]

^ এই তারিখ সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ২১৫-২১৮ পৃষ্ঠায় দেওয়া পরিশিষ্ট দেখুন।

^ এখানে পৌলের কথাগুলো আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লিপিবদ্ধ বাইবেলের প্রথম ভবিষ্যদ্‌বাণীকে প্রতিধ্বনিত করে, যা পরিশেষে দিয়াবলের ধ্বংসকে নির্দেশ করে।

[২৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

খ্রিস্টের প্রেমময় শাসনাধীনে ধার্মিক মানবজাতি পৃথিবীকে এক পরমদেশে পরিণত করবে