সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করা যেভাবে তা করা যেতে পারে

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করা যেভাবে তা করা যেতে পারে

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করা যেভাবে তা করা যেতে পারে

কল্পনা করুন যে, আপনার কাছে ফুটো থাকা একটা বেলুন রয়েছে আর আপনাকে সেই বেলুনটা ফুলিয়ে রাখতে হবে। কীভাবে আপনি তা করবেন? যতটা পরিমাণ হাওয়া সেই ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্তত ততটা পরিমাণ হাওয়া যদি আপনি ফুঁ দিয়ে বেলুনে ভরাতে থাকেন, তাহলে ততক্ষণ আপনি বেলুনটাকে ফুলিয়ে রাখতে পারবেন।

মূলত এটাকেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করা বোঝায়। বেলুনে ফুঁ দিয়ে ভরা সেই হাওয়াকে আপনার আয়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আর সেই ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হাওয়াকে আপনার ব্যয়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা হল, আপনার আয়ের চেয়ে আপনার ব্যয়কে বাড়তে না দেওয়া।

এমনকী যদিও এই মৌলিক ধারণাটি খুব সহজ বলে মনে হয় কিন্তু এটাকে প্রয়োগ করা এবং এর থেকে উপকৃত হওয়া হল একেবারে অন্য বিষয়। লোকেরা নিজেরাই অনেক আর্থিক সমস্যা এড়াতে পারে, একমাত্র যদি তারা এই মৌলিক ধারণাটিকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। কীভাবে তা করা যেতে পারে? কোথায় আমরা সেই নির্দেশাবলি পেতে পারি যেগুলো সত্যিই কার্যকর? এই ক্ষেত্রে বাইবেল হল সাহায্যকারী প্রচুর তথ্যের এক উৎস। আসুন আমরা সংক্ষেপে দেখি যে, এটি কী বলে।

বাইবেলের যে-নীতিগুলো সাহায্য করবে

বাইবেলে অনেক ব্যবহারিক নীতি রয়েছে যেগুলো আপনাকে ঠিকমতো খরচপত্র করতে সাহায্য করতে পারে। আমরা এগুলোর মাত্র কয়েকটা পরীক্ষা করে দেখব। এই নীতিগুলো যে আপনাকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়ে আপনি একমত কি না তা দেখুন।

পরিকল্পনা বা বাজেট করুন। টাকাপয়সা ঠিকমতো খরচ করতে হলে আপনাকে জানতে হবে যে, কত টাকা আপনি আয় করছেন আর কীভাবে সেই টাকা ব্যয় করছেন। বাইবেল বলে: “পরিশ্রমীর পরিকল্পনার ফলে নিশ্চয়ই প্রচুর ধনলাভ হয়, কিন্তু যে লোক পরিকল্পনা না করে তাড়াহুড়া করে কাজ করতে যায় তার নিশ্চয়ই অভাব হয়।” (হিতোপদেশ ২১:৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) কীভাবে তারা তাদের টাকাপয়সা খরচ করবে সেই বিষয়ে তাদেরকে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করার জন্য কেউ কেউ একটা সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করে যেটাতে তারা তাদের ব্যয়কে “খাবারদাবার,” “ভাড়া” অথবা “কাপড়চোপড়” এর মতো কয়েকটা বিভাগে ভাগ করে নেয়। আপনি এই সহজ পদ্ধতি অথবা এর চেয়েও বিস্তারিত কোনো পদ্ধতি যা-ই ব্যবহার করুন না কেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল যে, আপনি জানেন কোথায় আপনার টাকাপয়সা খরচ হচ্ছে আর তাই, আরাম-আয়েশের বিষয়গুলো নয় কিন্তু প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে সবসময় প্রথমে রাখুন।

ঈর্ষান্বিত হওয়া এড়িয়ে চলুন। উন্নতিশীল দেশগুলোর অনেকে শিল্পোন্নত দেশের লোকেদের যে-জিনিসগুলো রয়েছে সেগুলো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে, অনেকে তাদের প্রতিবেশীরা যে-জিনিসগুলো জাহির করে সেগুলো পাওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়ে থাকে। এটা একটা ফাঁদ হতে পারে। হতে পারে যে, প্রতিবেশীর নিজের সেগুলো কেনার সত্যিই সামর্থ্য নেই। অন্যের মূর্খতাকে কেন অনুসরণ করবেন ও আর্থিক সংকটে পড়বেন? বাইবেল সাবধান করে: “যে লোক লোভী সে ধনী হবার জন্য ব্যস্ত হয়, কিন্তু সে জানে না অভাব তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।”—হিতোপদেশ ২৮:২২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন।

আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখুন। যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে তাদের চোখকে “সরল” রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ৬:২২) যেখানে আপনি ডালভাতই জোটাতে পারেন, সেখানে মাছমাংস খাওয়া বেছে নেওয়া আপনাকে খুব সহজেই আর্থিকভাবে নিঃস্ব করে ফেলতে পারে। এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ফিলিপিনসে প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক এবং ভারতের অর্ধেক জনসংখ্যা এশিয়ার দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে, যেটা হল দৈনিক প্রায় ১·৩৫ ডলার (মার্কিন)। লোকেদের যখন এত সীমিত আয়, তখন মৌলিক চাহিদাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হল বিজ্ঞতার কাজ। তবে এমনকী ধনী দেশগুলোতেও, একই নীতি লোকেদেরকে অনেক আর্থিক সংকটে পড়া এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। এটা আপনার জীবনকে সাদাসিধে রাখার পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১ তীমথিয় ৬:৮ পদে বাইবেল এই পরামর্শ দেয়: “গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী লোকেদের কয়েকজনের অল্পই টাকাপয়সা রয়েছে; তবুও, তাদের যা রয়েছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট থাকে, যেটার অন্তর্ভুক্ত কেবল বস্তুগত বিষয়গুলো নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসা।—হিতোপদেশ ১৫:১৭.

অযথা ঋণ করা এড়িয়ে চলুন। বাইবেলের এই কথাগুলো কতই না সত্য: “ধনবান দরিদ্রগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে, আর ঋণী মহাজনের দাস হয়”! (হিতোপদেশ ২২:৭) যদিও কিছু কিছু পরিস্থিতি রয়েছে যখন ঋণ করা এড়ানো যায় না বলে মনে হতে পারে, তখন তারা চায় এমনকিছু কেনার জন্য যারা অযথা ঋণ করে, তারা প্রায়ই নিজেরা এক ভারি আর্থিক বোঝায় আটকা পড়ে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ করে সত্য হতে পারে। টাইম পত্রিকা বলেছিল: “একবার ক্রেডিট কার্ডটা হাতে পাওয়ার পর একজন টাকাপয়সার বিষয়ে অবিবেচক হয়ে পড়তে এবং ঝোঁকের বশে কেনাকাটা শুরু করতে পারেন।” এরিক যিনি ফিলিপিনসে বাস করেন, তিনি বলেন: “আমি ক্যাশে যতটা কেনাকাটা করি তার চেয়ে আমি যখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি, তখন প্রায়ই বেশি কেনাকাটা করি। বিল মেটানোর সময় এটা আমার বাজেটকে ওলট-পালট করে দেয়।” তাই, সহজেই পাওয়া ঋণকে ব্যবহার করার সময় আরও বেশি করে সাবধান হওয়া কতই না বিজ্ঞতার কাজ হবে!—২ রাজাবলি ৪:১; মথি ১৮:২৫.

কেনাকাটা করার আগে অর্থ সঞ্চয় করুন। যদিও বা সেকেলে বলে মনে হতে পারে কিন্তু আর্থিক সংকট এড়িয়ে চলার জন্য কেনাকাটা করার আগে অর্থ সঞ্চয় করা আসলে সবচেয়ে বিজ্ঞতার কাজ। এটা করা অনেককে ঋণী হওয়া এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যাগুলো, যেমন উচ্চ হারে সুদ দেওয়া যেটা একজন ব্যক্তি যাকিছু কেনাকাটা করেন সেগুলোর সঙ্গে অতিরিক্ত মূল্য প্রদান করতে হয় সেটা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। বাইবেলে, একটা পিঁপড়েকে “জ্ঞানবান” বলে বর্ণনা করা হয়েছে কারণ “শস্য কাটিবার সময়ে” সে ভবিষ্যতের জন্য “ভক্ষ্য সঞ্চয় করে।”—হিতোপদেশ ৬:৬-৮; ৩০:২৪, ২৫.

অন্যদের কাছ থেকে শেখা

বাইবেলের যে-সমস্ত পরামর্শ আমরা বিবেচনা করেছি সেগুলো হয়তো নীতিগতভাবে উত্তম বলে মনে হতে পারে কিন্তু এটা কি সত্যিই লোকেদেরকে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে? আসুন আমরা কিছু ব্যক্তির অভিজ্ঞতা লক্ষ করি যারা এই ধরনের পরামর্শকে কাজে লাগিয়েছে এবং আর্থিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে।

ডিওসড্যাডো, চার সন্তানের বাবা স্বীকার করেন যে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা তার পরিবারের প্রয়োজনগুলো মেটানোকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তাই, তিনি বাজেট করার মূল্যকে উপলব্ধি করেন। “আমার আয় করা সমস্ত টাকাপয়সার আমি বাজেট করি,” তিনি বলেন। “আমি কোথায় আমার টাকাপয়সা খরচ করব সেটার এক তালিকা আমার রয়েছে।” ড্যানিলো একই নীতিকে কাজে লাগান। তিনি ও তার স্ত্রী তাদের ছোটো ব্যাবসায় লোকসান ভোগ করেছিলেন। তবুও, তারা ভালোভাবে বাজেট করে তাদের প্রয়োজনগুলো মেটাতে পেরেছিল। তিনি বলেন: “আমরা জানি যে, প্রতি মাসে আমরা কত টাকা আয় করি আর আমরা এও জানি যে, নিয়মিতভাবে আমাদের কতটা খরচ করতে হয়। এটার ওপর ভিত্তি করে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি যে, আমরা অন্যান্য বিষয়ের জন্য কতটা খরচ করতে পারব।”

কেউ কেউ বাজেটকে মেনে চলার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক খরচ করা বন্ধ করাকে প্রয়োজন বলে মনে করেছে। মার্না নামে একজন বিধবা যিনি তিন সন্তানকে বড়ো করে তুলছেন, তিনি বলেন: “খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যাওয়ার জন্য জনপরিবহণ ব্যবহার করার পরিবর্তে আমার ছেলেমেয়েরা ও আমি এখন হেঁটে যাই।” মার্না তার ছেলেমেয়েকে এক সাদাসিধে জীবনযাপন করার মূল্য সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন: “আমি ১ তীমথিয় ৬:৮-১০ পদে পাওয়া নীতিটি, যেটি একজনের যা রয়েছে তাতে সন্তুষ্ট থাকার মূল্যকে তুলে ধরে, সেটি প্রয়োগ করার ব্যাপারে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করার চেষ্টা করেছি।”

দুই সন্তানের বাবা জেরাল্ড তা-ই করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমাদের পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নের সময়ে, আমরা সেই খ্রিস্টানদের অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে আলোচনা করি যারা প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অর্থাৎ আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর ওপর তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছে। ফলাফল হল উৎসাহজনক কারণ আমাদের ছেলেমেয়েরা যে-বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় সেগুলো পাওয়ার জন্য জেদ করে না।”

জ্যানেট অবিবাহিত এবং ফিলিপিনসে একজন পূর্ণসময়ের স্বেচ্ছাসেবী বাইবেল শিক্ষিকা হিসেবে সেবা করেন। সম্প্রতি, তিনি তার চাকরি হারিয়েছেন কিন্তু তিনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করেন। “আত্মশাসন অনুশীলন ও টাকাপয়সাকে ঠিকভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে আমি তা করি,” তিনি বলেন। শপিং মলগুলোতে যাওয়ার পরিবর্তে, আমি সেই দোকানগুলো খুঁজি যেখানে সস্তায় জিনিসপত্র পাওয়া যায়। যখন আমি কম দামেই জিনিস পেতে পারি তখন কেন আমি বেশি দাম দেব? এ ছাড়া, আমি ঝোঁকের বশে কেনাকাটা করা এড়িয়ে চলি।” আগে থেকে অর্থ সঞ্চয় করার ব্যবহারিক প্রজ্ঞাকে জ্যানেট দেখতে পান। “এমনকী সামান্য হলেও, যদি আমার কিছু টাকা বেঁচে যায়,” তিনি বলেন “তাহলে আমি সেটা আলাদা করে রেখে দিই যাতে অপ্রত্যাশিত খরচ চলে আসলে আমার হাতে কিছু থাকে।”

এরিক যার কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ক্রেডিট কার্ডের বিষয়ে বলেন: “আপৎকালীন পরিস্থিতিগুলো ছাড়া আমি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা থেকে নিজেকে সংযত করেছি।” ডিওসড্যাডো স্বীকার করেন: “নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আমি সাধারণত আমার ক্রেডিট কার্ডকে অফিসে ছেড়ে আসি।”

আপনি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারেন

হ্যাঁ, অনেকে দেখেছে যে, এমনকী যদিও বাইবেল হল এমন একটি পুস্তক যেটি মূলত আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে কিন্তু এটি সেই নির্দেশনাবলিও প্রদান করে যেগুলো আমাদেরকে বস্তুগতভাবে উপকার করতে পারে। (হিতোপদেশ ২:৬; মথি ৬:২৫-৩৪) এই প্রবন্ধে আলোচিত বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করার এবং যারা এই নীতিগুলো মেনে চলার দ্বারা উপকৃত হয়েছে তাদের কাছ থেকে শেখার মাধ্যমে আপনিও নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারেন। এটা করার দ্বারা আপনি অনেক সমস্যা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন যা আজকে লক্ষ লক্ষ লোক ভোগ করে থাকে। (w১১-E ০৬/০১)

[১০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি যে, আমরা কতটা খরচ করতে পারব’

[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যাওয়ার জন্য পরিবহণ ব্যবহার করার পরিবর্তে আমরা এখন হেঁটে যাই’

[১১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘আমি ঝোঁকের বশে কেনাকাটা করা এড়িয়ে চলি’