প্রশ্ন ৯
আমার কি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করা উচিত?
তুমি হলে কী করতে?
এই দৃশ্যটা কল্পনা করো: অ্যালেক্স বিভ্রান্ত। সে এতদিন যাবৎ ঈশ্বরে এবং সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে এসেছে। কিন্তু, আজকে তাদের জীববিদ্যার শিক্ষক দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে, বিবর্তনবাদ সত্য আর এটা নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার দ্বারা স্বীকৃত। অ্যালেক্স চায় না, অন্যেরা তাকে বোকা বলে মনে করুক। সে মনে মনে বলে, ‘সবচেয়ে বড়ো কথা হল, বিজ্ঞানীরা যদি বিবর্তনবাদকে সত্য বলে প্রমাণ করে থাকে, তা হলে তাদেরকে সন্দেহ করার আমি কে?’
তুমি যদি অ্যালেক্সের জায়গায় থাকতে, তা হলে তুমি কি কেবল এই কারণে বিবর্তনবাদকে মেনে নিতে যে, সেটাকে পাঠ্যপুস্তকে সত্য বলে তুলে ধরা হয়েছে?
একটু থেমে চিন্তা করো!
বিতর্কিত মনোভাব পোষণ করে এমন দু-দলই নির্দ্বিধায় সেই বিষয়টাই বলে, যা তারা বিশ্বাস করে, যদিও তারা আসলে জানে না কেন তারা সেটা বিশ্বাস করে।
-
কেউ কেউ শুধু এই কারণে সৃষ্টিতে বিশ্বাস করে যে, ধর্ম তাদের এটা শিখিয়েছে।
-
কেউ কেউ শুধু এই কারণে বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে যে, স্কুল তাদের এটা শিখিয়েছে।
বিবেচনা করার মতো ছ-টা প্রশ্ন
বাইবেল বলে: “প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:৪) এই কথাগুলো বিশ্বাস করা কি যুক্তিসংগত?
দাবি: নিখিলবিশ্বের সমস্ত কিছু হঠাৎ মহাবিস্ফোরণের ফলে এসেছে।
১. এই মহাবিস্ফোরণ কে ঘটিয়েছে অথবা কীসের কারণে ঘটেছে?
২. কোনটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়—কোনো কিছু ছাড়াই সমস্ত কিছু অস্তিত্বে এসেছে অথবা কেউ সমস্ত কিছু অস্তিত্বে নিয়ে এসেছে?
দাবি: মানুষ পশু থেকে এসেছে।
৩. মানুষ যদি পশু থেকে—উদাহরণ স্বরূপ, বানর থেকে—আসে, তা হলে মানুষের এবং বানরের বুদ্ধিমত্তার মধ্যে এত বিরাট পার্থক্য কেন?
৪. কেন এমনকী একটা ‘সরল’ প্রাণও এতটা জটিল?
দাবি: বিবর্তনবাদ প্রমাণিত সত্য।
৫. যে-ব্যক্তি এই দাবি করেন, তিনি কি নিজে এর প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখেছেন?
৬. বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করে বলেই কি অন্যেরা এটা বিশ্বাস করে?
“একটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তুমি যদি একটা সুন্দর বাড়ি দেখো, তা হলে তুমি কি এইরকম চিন্তা করবে: ‘কী চমৎকার! গাছগুলো একেবারে সঠিক জায়গায় পড়ে কী সুন্দর একটা বাড়ি তৈরি হয়েছে।’ অবশ্যই না! এটা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। তা হলে, কেন আমরা এটা ধরে নেব যে, নিখিলবিশ্ব এমনি এমনিই অস্তিত্বে এসেছে?”—জুলিয়া।
“কল্পনা করো, কেউ তোমাকে বলেছে, ছাপাখানায় একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে আর এর ফলে দেওয়ালে ও ছাদে কালি ছড়িয়ে পড়েছে এবং একটা সম্পূর্ণ ডিকশনারি তৈরি হয়েছে। তুমি কি এটা বিশ্বাস করবে?”—গুয়েন।
কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে?
বাইবেল আমাদের উৎসাহিত করে, “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) এর অর্থ, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি কেবল এগুলোই হওয়া উচিত নয় যেমন,
-
আবেগ (আমি মনে করি, অবশ্যই সর্বশক্তিমান কেউ আছেন)
-
সংস্কৃতি (আমি এক ধর্মীয় সমাজে বাস করি)
-
শিক্ষা (বাবা-মা আমাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে —আমার বাছাই করার মতো কিছু ছিল না)
এর পরিবর্তে, তোমার বিশ্বাসের যুক্তিযুক্ত কারণ থাকা উচিত।
“ক্লাসে শিক্ষক যখন আমাদের দেহের কাজ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন, তখন এই ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহই থাকে না যে, ঈশ্বর আছেন। দেহের প্রতিটা অংশেরই, এমনকী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশেরও নিজ নিজ কাজ রয়েছে আর বেশিরভাগ সময়ই এই কাজগুলো হয়ে থাকে আমাদের অজান্তে। মানবদেহ সত্যিই এত জটিল যে, তা বোধের অগম্য!”—টেরেসা।
“আমি যখন কোনো আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিরাট জাহাজ অথবা গাড়ি দেখি, তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করি, ‘কে এগুলো তৈরি করেছে?’ উদাহরণ স্বরূপ, একটা গাড়ি তৈরি করার জন্য বুদ্ধিমান লোক প্রয়োজন কারণ সম্পূর্ণ গাড়িটা যাতে কাজ করতে পারে, সেইজন্য অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে একেবারে সঠিকভাবে কাজ করতে হয়। আর একটা গাড়ি তৈরি করার জন্য যদি একজন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়, তা হলে মানুষ সৃষ্টি করার জন্যও একজন ব্যক্তির প্রয়োজন।”—রিচার্ড।
“যতই আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছি, বিবর্তনবাদকে ততই কম নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়েছে। . . . আমার মতে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করার জন্য যতটা বিশ্বাস প্রয়োজন, বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করার জন্য তার চেয়েও বেশি ‘বিশ্বাস’ প্রয়োজন।”—অ্যান্থনি।
চিন্তা করার মতো বিষয়
দশকের পর দশক ধরে গবেষণা করার পরও বিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে এমন কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারেননি, যেটাতে তারা সবাই একমত হতে পারেন। বিজ্ঞানীরা, যাদেরকে বিশেষজ্ঞ বলে মনে করা হয়, তারা যদি বিবর্তনবাদের বিষয়ে একমত হতে না পারেন, তা হলে তোমার জন্য এই মতবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা কী ভুল?