অধ্যায় দশ
তিনি বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন
১, ২. (ক) এলিয়ের লোকেরা কীভাবে দুর্দশাগ্রস্ত ছিল? (খ) কর্মিল পর্বতে এলিয় কোন বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন?
এলিয় জনতার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, যখন তারা কষ্ট করে কর্মিল পর্বতের ঢাল বেয়ে উঠছিল। এমনকী ভোরের অস্পষ্ট আলোতেও সেই দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত লোকেদের যন্ত্রণা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের খরা তাদের ওপর এক মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।
২ সেই জনতার মধ্যে বালের ৪৫০ জন ভাববাদী সদর্পে এগিয়ে আসছিল, যারা খুবই অহংকারী ছিল এবং যিহোবার ভাববাদী এলিয়কে প্রচণ্ড ঘৃণা করত। রানি ঈষেবল যদিও যিহোবার অনেক দাসকে হত্যা করেছিলেন, তবুও এই ব্যক্তি দৃঢ়তার সঙ্গে বাল উপাসনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, কত দিনের জন্য? সম্ভবত সেই যাজকরা এইরকম যুক্তি করেছিল যে, একজন ব্যক্তি একা কখনোই তাদের সকলের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। (১ রাজা. ১৮:৪, ১৯, ২০) রাজা আহাবও তার রাজকীয় রথে চড়ে এসেছিলেন। তিনিও এলিয়কে মোটেই পছন্দ করতেন না।
৩, ৪. (ক) সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটা যতই এগিয়ে আসছিল, এলিয় কেন কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
৩ সত্য উপসনার পক্ষসমর্থনকারী এই একমাত্র ভাববাদীর সামনে এমন একটা দিন আসতে যাচ্ছিল, যা তার জীবনে আগে কখনো আসেনি। এলিয় যেমন দেখেছিলেন, ভালো ও মন্দের মধ্যে সবচেয়ে নাটকীয় সংঘর্ষের জন্য এক মঞ্চ স্থাপন করা হচ্ছিল, যে-ধরনের সংঘর্ষ জগৎ আগে কখনো ঘটতে দেখেনি। সেই দিনটা যতই এগিয়ে আসছিল, তিনি কেমন বোধ করছিলেন? তিনি যে ভয় পাননি এমন নয় কারণ তিনিও “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য” ছিলেন। (পড়ুন, যাকোব ৫:১৭.) অন্ততপক্ষে আমরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি: চারপাশে অবিশ্বাসী লোক, তাদের ধর্মভ্রষ্ট রাজা এবং সেই ঘাতক যাজকরা থাকায় এলিয় খুব ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি একদম একা।—১ রাজা. ১৮:২২.
৪ কোন বিষয়টা ইস্রায়েলকে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ফেলেছিল? আর এই বিবরণ থেকে আপনি কী শিখতে পারেন? এলিয়ের বিশ্বাসের উদাহরণ এবং কীভাবে এটা বর্তমানে আমাদের জন্য ব্যবহারিক তা বিবেচনা করুন।
এক দীর্ঘ লড়াই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়
৫, ৬. (ক) ইস্রায়েলীয়দেরকে কীসের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল? (খ) রাজা আহাব কীভাবে যিহোবাকে গভীরভাবে অসন্তুষ্ট করেছিলেন?
৫ জীবনের বেশিরভাগ সময় ধরে এলিয় দেখেছিলেন যে, সত্য উপাসনা অবহেলিত ও পদদলিত হয়েছে আর তিনি এই ব্যাপারে কিছুই করতে পারেননি। ইস্রায়েল দীর্ঘসময় ধরে এক লড়াইয়ে অর্থাৎ বিশুদ্ধ ও মিথ্যা ধর্মের মধ্যে এবং যিহোবা ঈশ্বরের উপাসনা ও আশেপাশের জাতিগুলোর প্রতিমাপূজার মধ্যে এক যুদ্ধে রত ছিল। এলিয়ের দিনে, সেই লড়াই বিশেষ করে আরও জঘন্য পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
৬ রাজা আহাব যিহোবাকে খুবই অসন্তুষ্ট করেছিলেন। তিনি সীদোনের রাজার মেয়ে ঈষেবলকে বিয়ে করেছিলেন। ঈষেবল ইস্রায়েলের মধ্যে বাল উপাসনার বিস্তার ঘটাতে এবং যিহোবার উপাসনাকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। শীঘ্রই আহাব তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বালের জন্য একটা মন্দির ও যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেছিলেন আর সেই পৌত্তলিক দেবতার কাছে প্রণিপাত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।—১ রাজা. ১৬:৩০-৩৩.
৭. (ক) কোন বিষয়টা বাল উপাসনাকে এতটা ঘৃণ্য করে তুলেছিল? (খ) এলিয়ের সময় খরা কত দিন দীর্ঘ ছিল তা নিয়ে বাইবেলে বিবরণ যে পরস্পরবিরোধী নয়, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? ( বাক্সটা অন্তর্ভুক্ত করুন।)
৭ কোন বিষয়টা বাল উপাসনাকে এতটা ঘৃণ্য করে তুলেছিল? এটা ইস্রায়েলকে প্রলুব্ধ করেছিল, অনেককে সত্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে প্ররোচিত করেছিল। এ ছাড়া, এটা এক জঘন্য এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির ধর্ম ছিল। মন্দিরে পুরুষ ও নারীদের বেশ্যাবৃত্তি, যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা আর এমনকী সন্তানদের বলিদান করাও এই ধর্মের উপাসনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে যিহোবা এলিয়কে একটা খরার বিষয়ে ঘোষণা করার জন্য আহাবের কাছে পাঠিয়েছিলেন, যে-খরা ততদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত না ঈশ্বরের ভাববাদী প্রকাশ্যে সেটার শেষ সম্বন্ধে জানান। (১ রাজা. ১৭:১) এলিয় আহাবের সঙ্গে আবারও দেখা করার এবং তাকে বালের ভাববাদী ও লোকেদেরকে কর্মিল পর্বতে একত্রিত করতে বলার আগে বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছিল। a
এক অর্থে, বাল উপাসনার সবচেয়ে জোরালো বৈশিষ্ট্যগুলো বর্তমানেও বৃদ্ধি পাচ্ছে
৮. বাল উপাসনার এই বিবরণ বর্তমানে আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে?
৮ তাহলে, বর্তমানে এই লড়াই আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে? কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, বাল উপাসনার কাহিনি এখন অপ্রাসঙ্গিক কারণ আমাদের চারপাশে বালের কোনো মন্দির বা যজ্ঞবেদি নেই। কিন্তু, এই বিবরণ শুধুমাত্র এক প্রাচীন ইতিহাস নয়। (রোমীয় ১৫:৪) “বাল” শব্দের অর্থ হল “কর্তা” বা “প্রভু।” যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে বলেছিলেন যে, তাদের উচিত তাঁকে তাদের “বাল” অর্থাৎ পতি বা স্বামীতুল্য কর্তা হিসেবে বেছে নেওয়া। (যিশা. ৫৪:৫) আপনি কি এই বিষয়ে একমত হবেন না যে, লোকেরা এখনও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ছাড়াও অন্যান্য প্রভুর সেবা করে থাকে? লোকেরা টাকাপয়সা, কেরিয়ার, আমোদপ্রমোদ, যৌন অভিলাষ অথবা যিহোবা ছাড়া অগণিত দেব-দেবীর মধ্যে যেকারোরই উপাসনা করার পিছনে তাদের জীবনকে নিয়োজিত করুক না কেন, তারা একজন প্রভুকে বেছে নিচ্ছে। (মথি ৬:২৪; পড়ুন, রোমীয় ৬:১৬.) এক অর্থে, বাল উপাসনার সবচেয়ে জোরালো বৈশিষ্ট্যগুলো বর্তমানেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যিহোবা এবং বালের মধ্যে ঘটা সেই প্রাচীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা, আমাদেরকে বিজ্ঞতার সঙ্গে বেছে নিতে সাহায্য করতে পারে যে, আমরা কার সেবা করব।
‘দুই নৌকায় পা দিয়া থাকা’ —কীভাবে?
৯. (ক) বাল উপাসনাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য কেন কর্মিল পর্বত এক উপযুক্ত স্থান ছিল? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।) (খ) এলিয় লোকেদের কী বলেছিলেন?
৯ কর্মিল পর্বতের শিখর থেকে এক বিশাল অংশ দেখা যায়, যেটা কীশোন নদীর উপত্যকা থেকে কাছের মহাসমুদ্র (ভূমধ্যসাগর) এবং সুদূর উত্তরাঞ্চলের লিবানোন পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। b কিন্তু সেই চূড়ান্ত দিনে যখন সূর্যোদয় হয়েছিল, তখন সেই দেশটা এক সাংঘাতিক অবস্থার মধ্যে ছিল। এক সময়ের উর্বরদেশ, যেটা যিহোবা অব্রাহামের সন্তানদের দিয়েছিলেন, সেটার ওপর মৃত্যুর ছায়া ঘিরে ছিল। এটা তখন এমন এক দেশ, যেটার ভূমি সূর্যের প্রখর তাপে শুষ্ক হয়ে গিয়েছে, ঈশ্বরের নিজের লোকেদের মূর্খতার ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে! সেই লোকেরা যখন একত্রিত হয়েছিল, তখন এলিয় তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন: “তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে? সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাহার অনুগামী হও।”—১ রাজা. ১৮:২১.
১০. কীভাবে এলিয়ের লোকেরা ‘দুই নৌকায় পা দিয়া’ ছিল আর তারা কোন মৌলিক সত্য ভুলে গিয়েছিল?
১০ ‘দুই নৌকায় পা দিয়া থাকা’ অভিব্যক্তিটির দ্বারা এলিয় কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? আসলে, সেই লোকেরা বুঝতে পারেনি যে, তাদেরকে যিহোবা ও বালের উপাসনার মধ্যে থেকে বাছাই করতে হবে। তারা ভেবেছিল যে, তারা দু-জনকেই উপাসনা করতে পারে—তাদের ঘৃণ্য ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান দ্বারা বালকে সন্তুষ্ট করতে পারে আর একইসঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরের অনুগ্রহও চাইতে পারে। সম্ভবত তারা যুক্তি করেছিল যে, বাল তাদের শস্য এবং পশুপালকে আশীর্বাদ করবে আর “বাহিনীগণের সদাপ্রভু” যুদ্ধের সময়ে তাদের সুরক্ষা করবেন। (১ শমূ. ১৭:৪৫) তারা একটা মৌলিক সত্য ভুলে গিয়েছিল, যা আজকেও অনেকে বুঝতে পারে না আর তা হল, যিহোবা কারো সঙ্গে তাঁর উপাসনা ভাগ করে নেন না। তিনি একাগ্র ভক্তি চান এবং তিনি তা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর উপাসনার সঙ্গে যদি অন্য কোনো ধরনের উপাসনাকে মিশিয়ে ফেলা হয়, তাহলে সেটা তাঁর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়, এমনকী তা অপমানজনক!—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২০:৫.
১১. কর্মিল পর্বতে এলিয়ের জোরালো ও উদ্দীপনামূলক আহ্বান কীভাবে আমাদেরকে নিজেদের অগ্রাধিকার এবং উপাসনাকে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১১ সুতরাং, সেই ইস্রায়েলীয়রা এমন একজন ব্যক্তির মতো ছিল, যিনি একই সময়ে ‘দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবার’ চেষ্টা করছেন। ঈশ্বরের উপাসনাকে দূরে সরিয়ে রেখে অন্য ধরনের ‘বালদেবগণকে’ ধীরে ধীরে তাদের জীবনে প্রবেশ করতে দিয়ে, আজকেও অনেক লোক একই ধরনের ভুল করে থাকে। দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকা থেকে বিরত হওয়ার জন্য এলিয়ের জোরালো ও উদ্দীপনামূলক আহ্বানে সাড়া দেওয়া আমাদেরকে নিজেদের অগ্রাধিকারের বিষয় এবং উপাসনাকে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
এক চূড়ান্ত পরীক্ষা
১২, ১৩. (ক) এলিয় কোন পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন? (খ) আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, আমাদেরও এলিয়ের মতোই আস্থা রয়েছে?
১২ এরপর এলিয় একটা পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এটা ছিল খুবই সাধারণ একটা পরীক্ষা। বালের যাজকদের একটা যজ্ঞবেদি স্থাপন করতে হবে আর সেটার ওপর একটা বলি রাখতে হবে; তারপর তাদেরকে এটাতে আগুন জ্বালানোর জন্য তাদের দেবতার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। এলিয়ও একই কাজ করবেন। তিনি বলেছিলেন: “যে ঈশ্বর আগুনের দ্বারা উত্তর দিবেন, তিনিই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW] হউন।” এলিয় ভালোভাবেই জানতেন যে, কে সত্য ঈশ্বর ছিলেন। তার বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় ছিল যে, তিনি তার বিরোধীদের সমস্ত ধরনের সুযোগ দিতে ইতস্তত করেননি। প্রথমে তিনি বালের ভাববাদীদের সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই তারা বলির জন্য ষাঁড় বেছে নিয়েছিল ও বালের কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করেছিল। c—১ রাজা. ১৮:২৪, ২৫.
১৩ আমরা অলৌকিক কাজগুলোর যুগে বাস করছি না। কিন্তু, যিহোবা পরিবর্তিত হননি। তাই, আমরা এলিয়ের মতোই তাঁর ওপর আস্থা রাখতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, অন্যেরা যখন বাইবেল যা শিক্ষা দেয় সেই সম্বন্ধে দ্বিমত পোষণ করে, তখন প্রথমে তারা যা বলতে চায় তা বলতে দিতে ভয় পাব না। এলিয়ের মতো আমরাও বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য সত্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করতে পারি। আমরা নিজেদের ওপর নয় বরং তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্য, যেটি ‘সংশোধনের নিমিত্ত’ লেখা হয়েছে, সেটির ওপর নির্ভর করার দ্বারা তা করে থাকি।—২ তীম. ৩:১৬.
তিনি এই বাল উপাসনাকে এক হাস্যকর প্রতারণা হিসেবে দেখেছিলেন আর তিনি চেয়েছিলেন যেন ঈশ্বরের লোকেরাও বুঝতে পারে যে, এটা আসলেই প্রতারণাপূর্ণ
১৪. কীভাবে এলিয় বালের উপাসকদের বিদ্রূপ করেছিলেন এবং কেন?
১৪ বালের যাজকরা তাদের বলি সাজিয়ে তাদের দেবতাকে ডাকতে শুরু করে। “হে বাল, আমাদিগকে উত্তর দেও” তারা বার বার চিৎকার করে বলতে থাকে। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ডাকতে থাকে। বাইবেল বলে, “কিন্তু কোন বাণী হইল না, এবং কেহই উত্তর দিল না”। দুপুর হলে এলিয় তাদেরকে বিদ্রূপ করতে শুরু করেন, ব্যঙ্গ করে বলেন যে, নিশ্চয়ই বালের উত্তর দেওয়ার সময় নেই, সে কোথাও গিয়েছে বা পথে হাঁটছে কিংবা সে ঘুমাচ্ছে আর তাকে জাগানোর জন্য কাউকে প্রয়োজন। “উচ্চৈঃস্বরে ডাক,” এলিয় সেই প্রতারকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। স্পষ্টতই, তিনি এই বাল উপাসনাকে এক হাস্যকর প্রতারণা হিসেবে দেখেছিলেন আর তিনি চেয়েছিলেন যেন ঈশ্বরের লোকেরাও বুঝতে পারে যে, এটা আসলেই প্রতারণাপূর্ণ।—১ রাজা. ১৮:২৬, ২৭.
১৫. বালের পুরোহিতদের ঘটনা কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা ছাড়া অন্য কাউকে প্রভু বলে মেনে নেওয়া মূর্খতার কাজ?
১৫ এর প্রতি সাড়া দিয়ে, বালের যাজকরা এমনকী আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল, “তাহারা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, এবং আপনাদের ব্যবহারানুসারে গাত্রে রক্তের ধারা বহন পর্য্যন্ত ছুরিকা ও শলাকা দ্বারা আপনাদিগকে ক্ষতবিক্ষত করিল।” কিন্তু, কোনো লাভ হয়নি! “কোন বাণীও হইল না, কেহ উত্তরও দিল না, কেহ মনোযোগও করিল না।” (১ রাজা. ১৮:২৮, ২৯) আসলে বাল বলে কেউ ছিলই না। যিহোবার কাছ থেকে লোকদেরকে প্রলুব্ধ করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সে ছিল শয়তানের পরিকল্পিত এক উদ্ভাবন। সত্য বিষয়টা হল, যিহোবা ছাড়া অন্য কোনো প্রভুকে বেছে নেওয়া হতাশার দিকে, এমনকী লজ্জিত হওয়ার দিকে পরিচালিত করে।—পড়ুন, গীতসংহিতা ২৫:৩; ১১৫:৪-৮.
সত্য ঈশ্বর উত্তর দেন
১৬. (ক) কর্মিল পর্বতে এলিয় যে যিহোবার যজ্ঞবেদি মেরামত করেছিলেন, তা হয়তো অনেককে কোন ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল? (খ) এলিয় আর কীভাবে তার ঈশ্বরের ওপর আস্থা রেখেছিলেন?
১৬ বিকেলে এলিয়ের বলি উৎসর্গ করার পালা এসেছিল। তিনি যিহোবার জন্য একটা ভাঙা যজ্ঞবেদি মেরামত করেছিলেন, যেটাকে নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ উপাসনার শত্রুরা ভেঙে ফেলেছিল। তিনি ১২টা পাথর ব্যবহার করেছিলেন, যা সম্ভবত ইস্রায়েলের ১০ বংশের অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, তখনও পর্যন্ত তারা ১২ বংশের সকলকে দেওয়া ব্যবস্থার অধীনে ছিল। তারপর তিনি তার বলি রেখেছিলেন এবং সমস্তকিছুর ওপর জল ঢেলে দিয়েছিলেন, যা সম্ভবত নিকটবর্তী ভূমধ্যসাগর থেকে আনা হয়েছিল। এমনকী তিনি যজ্ঞবেদির চারপাশে একটা প্রণালী খনন করেছিলেন ও সেটাকে জলে পূর্ণ করেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি তার এতটাই আস্থা ছিল যে, যেখানে তিনি বালের ভাববাদীদের সমস্ত ধরনের সুযোগসুবিধা দিয়েছিলেন, সেখানে যিহোবার ক্ষেত্রে সমস্ত ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন।—১ রাজা. ১৮:৩০-৩৫.
এলিয়ের প্রার্থনা দেখিয়েছিল, তিনি তখনও তার লোকেদের জন্য চিন্তা করেন কারণ তিনি এটা দেখতে উৎসুক ছিলেন যে, যিহোবা ‘ইহাদের হৃদয় ফিরাইয়া আনিয়াছেন’
১৭. এলিয়ের প্রার্থনা কীভাবে তার অগ্রাধিকারের বিষয়টা প্রকাশ করে আর কীভাবে আমরা আমাদের প্রার্থনায় তার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
১৭ সমস্তকিছু প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর এলিয় প্রার্থনা করেছিলেন। প্রার্থনার সহজসরল ভাষা স্পষ্টতই দেখিয়েছিল যে, কোনটা এলিয়ের জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল। সবচেয়ে প্রথমে, তিনি এটা জানাতে চেয়েছিলেন যে, বাল নয় বরং যিহোবাই ছিলেন ‘ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বর।’ দ্বিতীয়ত, তিনি সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন, তিনি হলেন যিহোবার দাস; এবং সমস্ত গৌরব এবং কৃতিত্ব ঈশ্বরকে দেওয়া উচিত। সবশেষে, তিনি দেখিয়েছিলেন, তিনি তখনও তার লোকেদের জন্য চিন্তা করেন কারণ তিনি এটা দেখতে উৎসুক ছিলেন যে, যিহোবা ‘ইহাদের হৃদয় ফিরাইয়া আনিয়াছেন।’ (১ রাজা. ১৮:৩৬, ৩৭) যদিও তারা তাদের অবিশ্বস্ততার ফলে অনেক দুর্দশা নিয়ে এসেছিল, তবুও এলিয় তাদের ভালোবাসতেন। ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের প্রার্থনায় আমরাও কি একইরকম নম্রতা, ঈশ্বরের নামের প্রতি চিন্তা আর সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি?
১৮, ১৯. (ক) যিহোবা কীভাবে এলিয়ের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন? (খ) এলিয় লোকেদের কী করার আদেশ দিয়েছিলেন আর বাল উপাসকরা কেন করুণা লাভের যোগ্য ছিল না?
১৮ এলিয় প্রার্থনা করার আগে, সেখানে উপস্থিত জনতা হয়তো ভেবেছিল যে, যিহোবাও মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হবেন কি না, যেমনটা বাল হয়েছিল। তবে, প্রার্থনা করার পর সন্দেহের অবকাশ ছিল না। বিবরণ বলে: “তখন সদাপ্রভুর অগ্নি পতিত হইল, এবং হোমবলি, কাষ্ঠ, প্রস্তর ও ধূলি গ্রাস করিল, এবং প্রণালীস্থীত জলও চাটিয়া খাইল।” (১ রাজা. ১৮:৩৮) কী চমৎকার এক উত্তর! আর লোকেরা কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?
১৯ “সদাপ্রভুই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW], সদাপ্রভুই ঈশ্বর [“সত্য ঈশ্বর,” NW]” তারা সকলে চিৎকার করে বলেছিল। (১ রাজা. ১৮:৩৯) শেষপর্যন্ত, তারা সত্যটা বুঝতে পেরেছিল। তা সত্ত্বেও, তখনও পর্যন্ত তারা কোনো বিশ্বাস দেখায়নি। সত্যি বলতে কী, একটা প্রার্থনার উত্তরে আকাশ থেকে আগুন পড়তে দেখার পর যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করা মানেই যে বিশ্বাস দেখানো, এমন নয়। তাই, এলিয় তাদেরকে আরও কিছু করতে বলেছিলেন। তিনি তাদেরকে সেই কাজটা করতে বলেছিলেন, যা বহু বছর আগেই তাদের করা উচিত ছিল—যিহোবার ব্যবস্থা পালন করা। ঈশ্বরের ব্যবস্থা বলেছিল যে, মিথ্যা ভাববাদী এবং প্রতিমাপূজকদের প্রাণদণ্ড দিতে হবে। (দ্বিতীয়. ১৩:৫-৯) বালের এই যাজকরা ছিল যিহোবা ঈশ্বরের শত্রু আর তারা জেনে-শুনে তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর বিপরীতে কাজ করেছিল। তারা কি করুণা লাভের যোগ্য ছিল? বালের উদ্দেশে বলি হিসেবে যে-নির্দোষ সন্তানদের জীবন্ত পোড়ানো হয়েছিল, তাদের প্রতি কি তারা কোনো করুণা দেখিয়েছিল? (পড়ুন, হিতোপদেশ ২১:১৩; যির. ১৯:৫) এই লোকেরা করুণা লাভের যোগ্যই ছিল না! তাই এলিয় তাদেরকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন আর সত্যি সত্যিই তাদের হত্যা করা হয়েছিল।—১ রাজা. ১৮:৪০.
২০. এলিয় যে বাল উপাসকদের হত্যা করেছিলেন সে বিষয়ে আধুনিক দিনের সমালোচকদের সমালোচনা কেন ভিত্তিহীন?
২০ আধুনিক দিনের সমালোচকরা হয়তো কর্মিল পর্বতের এই পরীক্ষার শেষ পরিণতির সমালোচনা করতে পারেন। কেউ কেউ হয়তো এই ভেবে ভয় পায় যে, পাছে ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা ধর্মীয় কুসংস্কারের দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজগুলোর ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার জন্য এই ঘটনাকে ব্যবহার করবে। আর দুঃখের বিষয় হল যে, বর্তমানে অনেক দৌরাত্ম্যপরায়ণ ধর্মীয় গোঁড়া লোক রয়েছে। কিন্তু, এলিয় গোঁড়া ছিলেন না। তিনি যিহোবার পক্ষে ন্যায়সংগত বিচার সম্পাদন করছিলেন। প্রকৃত খ্রিস্টানরা জানে যে, তারা এলিয়ের মতো দুষ্টদেরকে হত্যা করতে পারে না। পিতরের উদ্দেশে বলা খ্রিস্টের এই কথাগুলোর মধ্যে যিশুর সমস্ত শিষ্যের জন্য যে-মানদণ্ড রয়েছে, তা তারা অনুসরণ করে, যা বলে: “তোমার খড়্গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়্গ ধারণ করে, তাহারা খড়্গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।” (মথি ২৬:৫২) যিহোবা ভবিষ্যতে ঐশিক ন্যায়বিচার কার্যকর করার জন্য তাঁর পুত্রকে ব্যবহার করবেন।
২১. কীভাবে এলিয়ের উদাহরণ আজ সত্য খ্রিস্টানদের কাছে আদর্শ স্বরূপ?
২১ একজন সত্য খ্রিস্টানের দায়িত্ব হল বিশ্বাস সহকারে জীবনযাপন করা। (যোহন ৩:১৬) তা করার একটা উপায় হল, এলিয়ের মতো বিশ্বস্ত ব্যক্তিদেরকে অনুকরণ করা। তিনি একমাত্র যিহোবাকেই উপাসনা করতেন এবং অন্যদেরকেও একই কাজ করতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি সাহসের সঙ্গে এক প্রতারণাপূর্ণ ধর্মের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন, যেটাকে শয়তান যিহোবার কাছ থেকে লোকেদেরকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিল। আর বিষয়গুলোর মীমাংসা করার জন্য তিনি নিজের ক্ষমতা ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে, যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। এলিয় বিশুদ্ধ উপাসনার পক্ষসমর্থন করেছিলেন। আমরা সকলে যেন তার বিশ্বাস অনুকরণ করি!
a “ এলিয়ের দিনে খরা কত দিন স্থায়ী ছিল?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
b সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বয়ে আসা আর্দ্র বায়ু প্রায়ই কর্মিল পর্বতের ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায় ও প্রচুর পরিমাণ শিশির উৎপন্ন করে, এর ফলে এই পর্বত ঘন সবুজ গাছপালায় ঢাকা থাকে। যেহেতু মনে করা হতো যে, বাল বৃষ্টি আনতে পারে, তাই স্পষ্টতই বাল উপাসকদের জন্য এটা ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাই বাল উপাসনাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য সেই উৎসন্ন, শুষ্ক কর্মিল পর্বত ছিল এক উপযুক্ত স্থান।
c এটা লক্ষ করার মতো যে, এলিয় তাদের বলেছিলেন: বলিতে “আগুন দিও না।” কিছু পণ্ডিত বলেন যে, কখনো কখনো এই ধরনের প্রতিমাপূজকেরা তাদের বেদির নীচে লুকানো ফাঁকা গর্ত রাখত যাতে মনে হয় যে, অলৌকিকভাবে আগুন জ্বলে উঠেছে।